২০২২ ফেরাল যুদ্ধ, বিশ্ব ফের অনিশ্চিত পথে

কোভিডের ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই ইউক্রেইন যুদ্ধের ধকল বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনীতিকে খাদের কিনারে নিয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দুর্যোগের কামড়ও আরও তীব্র হয়েছে।

মীর মোশাররফ হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Dec 2022, 06:46 PM
Updated : 31 Dec 2022, 07:50 AM

স্নায়ুযুদ্ধের তিন দশক পর বারুদে ঠাসা এক বছর পার করছে বিশ্ব; ইউক্রেইন যুদ্ধকে ঘিরে ইউরোপজুড়ে উত্তেজনা, স্বার্থের রাজনীতিতে পরাশক্তিগুলোর অবস্থান, তাইওয়ান আর কোরীয় অঞ্চলে সমর প্রস্তুতি, দেশে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিশ্বকে মহামারী পরবর্তী নতুন আর কঠোর এক বাস্তবতার সামনে দাঁড় করিয়েছে।

কোভিডের ধাক্কা সামলে না উঠতেই ইউক্রেইন যুদ্ধের ধকল বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, তেলের বাজারকে করে তুলেছে অস্থির। সরবরাহ-চেইনে সংকট বাড়িয়েছে নিত্যপণ্যের ঘাটতি। এসবের সঙ্গে ডলারের সংকট অনেক দেশের অর্থনীতিকে খাদের কিনারে নিয়ে গেছে।

নাগরিকদের খাবার, ওষুধ, জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের চাহিদা মেটাতে গিয়ে আসছে দিনগুলোতে অনেক দেশকেই পড়তে হবে নতুন জটিলতায়। এ বছর শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা হয়ে আছে এক আতঙ্কের নাম। বিশ্বের আর্থিক খাতের মোড়লরা মন্দার পূর্বাভাস দিয়ে সতর্ক করছে বার বার।    

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগও যেন আরও তীব্র হয়ে উঠছে। ঝড়গুলো আগের তুলনায় শক্তিশালী হয়ে আছড়ে পড়ছে, বন্যা দীর্ঘায়িত হচ্ছে, ঋতু পাল্টে যাওয়ায় বদলে যাচ্ছে অনেক এলাকার প্রতিবেশ, লাখো মানুষ পরিণত হচ্ছে উদ্বাস্তুতে, বাড়ছে রোগব্যাধী।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখনই কার্বন নিঃসরণ ব্যাপক হারে কমানো দরকার বলে বিশেষজ্ঞরা চিৎকার করে এলেও এ নিয়ে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে তেমন তাগিদ দেখা যাচ্ছে না।

কোভিড মহামারী এখনও বিশ্বকে মাফ করেনি। তার মধ্যেই বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এখন ভাইরাসকে সঙ্গী করে জীবন চালিয়ে যাওয়ার পথে হাঁটছে। বেইজিংয়ে এ বছর হয়েছে শীতকালীন অলিম্পিক। কাতারে জমজমাট ছিল বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর।

রাশিয়া এ বছরের শুরুর দিকেই ইউক্রেইনে সেনা পাঠানোর মধ্য দিয়ে কয়েক দশক পর ইউরোপে যুদ্ধ ফেরায়। মাঠের লড়াই ইউক্রেইনে সীমাবদ্ধ থাকলেও এটি মস্কোর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুস্পষ্ট ঘোষণা হওয়ায় অন্য পরাশক্তিরাও নিজ নিজ স্বার্থে তাতে জড়িয়ে পড়েছে। ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেইনের পক্ষে। অন্যদিকে, নিরপেক্ষ থেকেই চীন, ভারত, মধ্যপ্রাচ্য রাশিয়াকে সুবিধা করে দিচ্ছে।

ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর প্রথম কয়েক মাসে রাশিয়া ইউক্রেইনের বেশ কয়েকটি অঞ্চলের দখল নিলেও, বছরের দ্বিতীয় ভাগে ইউক্রেইন বেশকিছু এলাকার পুনর্দখলও নিয়েছে। এখনও অনেকগুলো ফ্রন্টে চলছে তুমুল লড়াই।

ইউক্রেইনের পক্ষে দাঁড়িয়ে রাশিয়াকে ক্ষয়িষ্ণু করার লক্ষ্যে একের পর এক পাল্টা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা। এতে মস্কোর যতটা না ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ভুগছে তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশ। মূল্যস্ফীতির কারণে ইউরোপের অনেক দেশে এখন শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দানা বাঁধছে, কোথাও কোথাও যুদ্ধে অপ্রকাশ্যে জড়িয়ে পড়ার বিরুদ্ধে অসন্তোষও প্রকাশ্যে আসছে।

এ বছরই জনসংখ্যা ৮০০ কোটি পেরোনো পৃথিবী মহাকাশ গবেষণা ও প্রযুক্তিতেও ব্যাপক অগ্রগতির স্বাক্ষর রেখেছে। জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে সফলভাবে শূকরের হৃদপিণ্ড মানুষের দেহে প্রতিস্থাপনের ঘটনা চিকিৎসাবিজ্ঞানকে দেখাচ্ছে নতুন দিশা।

নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেট আধিপত্যের অবসান ঘটেছে। সেখানে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও সেনেটের দখল বাইডেনকে স্বস্তি দিয়েছে। ক্যাপিটলে দাঙ্গা, কর ফাঁকি আর গোপনীয় নথির নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যাপারে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মার্কিন প্রশাসনের আইনি ঝামেলা আরও প্রকট হয়েছে।

ডিসেম্বরে অরুণাচল সীমান্তে ভারত-চীন সংঘর্ষ ২০২০ সালের স্মৃতি ফিরিয়েছে। এ বছর আর্মেনিয়া-আজারবাইজান, কিরগিজস্তান-তাজিকিস্তানেও সীমান্ত সংঘাত হয়েছে।

বছরের শেষ প্রান্তিকে এশিয়ার শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির কাছে এনডিটিভির দখল চলে যাওয়া ভারতের গণতন্ত্র ও সরকারবিরোধী স্বাধীন মতপ্রকাশ নিয়ে আশঙ্কাকে আরও তীব্র করেছে। গুজরাট দাঙ্গায় সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তি দেশটিতে ধর্মীয় উগ্রপন্থার বিকাশ এবং বিচারবিভাগের ভূমিকা নিয়েও অনেককে উদ্বিগ্ন করছে।

শরণার্থীদের ভাগ্যঅন্বেষণে ইউরোপ-আমেরিকায় ছোটাও থেমে নেই। মিয়ানমার আর বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের অবৈধপথে সমুদ্রযাত্রা ও সলিল সমাধি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভারতে বানানো কাশির সিরাপে গাম্বিয়া, উজবেকিস্তানে শিশু মৃত্যুর ঘটনা বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতায় গেলে উদার হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া তালেবান আফগানিস্তানে মেয়েদের শিক্ষা আর কাজের পথে বাধা হয়েই আছে, বছরের শেষে এসে তারা মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পথ বন্ধই করে দিয়েছে।

লণ্ডভণ্ড ইউক্রেইন, পরাশক্তিরা মুখোমুখি

ঘোট আগেই পেকেছিল। গত বছরের শেষভাগ থেকে ইউক্রেইন সীমান্তে রাশিয়ার সৈন্য সমাবেশ উদ্বেগ ছড়াচ্ছিল ইউরোপজুড়ে। ২০১৪ সাল থেকেই ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চল দনবাসে রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে কিইভবাহিনীর লড়াই চলে আসছিল।

ওই বছর রাশিয়া ক্রাইমিয়া নিজেদের দখলে নিয়েছিল, বিবাদ যেন আরও বেশিদূর না গড়ায়, সেজন্য ফ্রান্স-জার্মানির মধ্যস্থতায় হয়েছিল মিনস্ক চুক্তিও। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মস্কো, কিইভ দুইপক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে মিনস্ক চুক্তি লংঘনের অভিযোগ করে আসছিল। একই সঙ্গে ইউক্রেইনে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোতে যোগ দেওয়ারও প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করে এনেছিল বলে অভিযোগ রাশিয়ার।

সৈন্য সমাবেশের পাশাপাশি রাশিয়া ইউক্রেইন এবং নেটোকে বেশকিছু শর্তসম্বলিত প্রস্তাবও পাঠিয়েছিল। তাতে ইউক্রেইনের নেটোতে যোগ দেওয়া চিরতরে বন্ধ, প্রতিবেশী দেশটির উগ্র জাতীয়তাবাদী, মস্কোর ভাষায় নাৎসিদের ক্ষমতাকাঠামো থেকে হটানো ও বিচার করা এবং নেটোকে পূর্ব ইউরোপ থেকে পাততাড়ি গোটাতেও বলে তারা। এ নিয়ে দরকষাকষিতে কোনো সমঝোতা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনে সেনা অভিযানে নামে মস্কো। অভিযানের জন্য মহড়ার নামে বেলারুশে আগেই কিছু সেনা পাঠিয়ে রেখেছিল তারা।

অভিযানে নামলেও যত সহজে কিইভকে কব্জা করা যাবে ভেবেছিল রুশরা, শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ইউক্রেইনীয় যোদ্ধারা প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কয়েক সপ্তাহ পর দুই পক্ষ সমঝোতা বৈঠকে বসলে এক পর্যায়ে রাশিয়া কিইভ ও এর আশপাশ থেকে সেনা সরিয়ে নেয়। পরে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় কৃষ্ণসাগর দিয়ে শস্য রপ্তানি চুক্তিতেও সম্মত হয় তারা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে এত বড় আকারের যুদ্ধে সম্মুখসমরে না থেকেও জড়িয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ। কিইভকে মিত্র বিবেচনা করে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিতে থাকে তারা। ইউক্রেইনকে অর্থনৈতিক সহায়তার পাশাপাশি ধাপে ধাপে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র, সৈন্যদের প্রশিক্ষণও দিতে শুরু করে তারা। এর পাল্টায় রাশিয়া ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে আনে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে বৈরি দেশগুলোর সঙ্গে লেনদেনে ডলারের বদলে রুবলকে নিয়ে আসে তারা।

যুদ্ধের মধ্যেই ইউক্রেইনের আশপাশে নিজেদের সৈন্য উপস্থিতি জোরদার করেছে নেটো। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকিও বাড়াচ্ছে উদ্বেগ।

রুশ ‘আগ্রাসন’ বদলে দিয়েছে নর্ডিক অঞ্চলের অনেক দেশের মনস্তত্ত্ব; ফিনল্যান্ড ও সুইডেন নেটোতে যোগ দেওয়ার আবেদন করেছে, যদিও তাতে এখন পর্যন্ত বাগড়া দিয়ে রেখেছে নেটোরই আরেক সদস্য দেশ তুরস্ক। ইইউ-র নানান নিষেধাজ্ঞায় হাঙ্গেরি নিজ স্বার্থে আপত্তি দিয়ে ইউরোপের এ জোটের রুশবিরোধী শক্ত অবস্থানকে নানান ঘোরপ্যাঁচে আটকে দিচ্ছে।

ইউরোপের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য মহাদেশীয় মিত্ররাও রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থায় শামিল হয়েছে। তবে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে এশিয়ার দুই পরাশক্তি চীন ও ভারত। তারা রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যও চালিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়াকেও তাই বিশ্বের দুই জনবহুল দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে হচ্ছে। বেইজিং, দিল্লির মতো মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন মিত্র অনেক আরব দেশও ইউক্রেইন ইস্যুতে মুখ বুঝে আছে। ঘোলা পানিতে কেউই মাছ শিকারের সুযোগ হারাতে চাইছে না।

সেপ্টেম্বর থেকে ইউক্রেইনীয় বাহিনীর পাল্টা আক্রমণ রুশ বাহিনীকে তাদের দখলকৃত অনেক এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া ইউক্রেইনের চারটি অঞ্চল আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের সীমানাভুক্ত করে নেয়; অবশ্য তার আগে ওই অঞ্চলগুলোতে মস্কোপন্থি প্রশাসনের উদ্যোগে গণভোটও করিয়ে নেয় তারা। পাশপাশি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মস্কো প্রথমবারের মতো ‘সৈন্য সমাবেশের’ও ঘোষণা দেয়।

মুখোমুখি লড়াই এড়িয়ে তারা এখন ইউক্রেইনের বিদ্যুৎ (জ্বালানি কেন্দ্রগুলো তারা যুদ্ধের প্রথম দফাতেই টার্গেট করেছিল) খাতসহ গুরুত্বপূর্ণ সংবেদনশীল খাতগুলো ধ্বংসে বেশি মনোযোগী হয়েছে। ডাক দেওয়া সেনাদের প্রশিক্ষণ শেষে তাদের ফ্রন্টে পাঠানোর পর রাশিয়া ফের ইউক্রেইনের আরও এলাকা দখলে মনোযোগী হবে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

যুদ্ধে রাশিয়াকে পর্যদুস্ত করার লক্ষ্যে নামা পশ্চিমাদের সঙ্গে নানানভাবে সমঝোতার আলোচনাও চলছে রাশিয়ার। তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশকে এ কাজে নানান সময়ে মধ্যস্থতায় নামতেও দেখা গেছে। কিছুদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ইউক্রেইন নিয়ে আলোচনায় ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছেন। তবে মস্কো জানিয়েছে, আলোচনার আগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের দখল করা অংশকে স্বীকৃতি দিতে হবে।

ইউক্রেইনের পাশাপাশি উত্তেজনা বেড়েছে তাইওয়ান ও কোরিয়া অঞ্চলেও। বিবদমান সব পক্ষই নেমে পড়েছে সমরসজ্জায়। কিছুদিন আগে শি জিনপিং- জো বাইডেন বৈঠকে উত্তেজনা খানিকটা প্রশমিত হলেও পারদ যে আর চড়বে না, এমন আশাবাদ পাওয়া যাচ্ছে না।

Also Read: সর্বশেষ: ইউক্রেইনে রুশ আগ্রাসনে ইউরোপে ফিরল যুদ্ধ

Also Read: ইউক্রেইন থেকে বিশ্বের কত শস্য দরকার

Also Read: ইউক্রেইনে অন্যতম বৃহত্তম ক্ষেপণাস্ত্র হামলা রাশিয়ার

Also Read: রাশিয়ার ড্রোনে বিদ্যুৎহীন ওডেসার ১৫ লাখ বাসিন্দা: জেলেনস্কি

Also Read: ইউক্রেইনের কিইভে ড্রোন হামলা শুরু রাশিয়ার

দামামা তাইওয়ানে, কোরীয় উপদ্বীপে অস্ত্রের ঝনঝনানি

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর ইউরোপের যুদ্ধউন্মাদনা এশিয়াতেও নিয়ে আসে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং তার প্রশাসনকে অস্বস্তিতে ফেলে, যাবেন কি যাবেন না, তা নিয়ে রহস্য সৃষ্টি করেই পেলোসি শেষ পর্যন্ত স্বশাসিত দ্বীপটিতে নামেন।

বেইজিং তাইওয়ানকে তার একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ মনে করে, মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এর একত্রীকরণে প্রয়োজনে বল প্রয়োগেও পিছপা হবে না, এমন সুরও আছে তাদের।

অন্যদিকে, তাইপে নিজেদেরকে সার্বভৌম মনে করে। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আরও ধোঁয়াশাপূর্ণ- তারা তাইওয়ানকে চীনের অংশই মনে করে, তবে স্বশাসিত দ্বীপটি আক্রান্ত হলে তার পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতিও আছে তাদের। গোপনে তারা তাইওয়ানের সেনাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এমন খবরও গণমাধ্যমে আসে।

ইউক্রেইনে যুদ্ধের বাতাবরণের মধ্যে পেলোসির সফর তাইওয়ান প্রণালীকেও উত্তপ্ত করে তোলে। তার সফরের সময় থেকে চীন তাইওয়ানের আশপাশে যুদ্ধবিমান উড়িয়ে তাদের সতর্কবার্তাও জানান দেয়। পেলোসি চলে যাওয়ার কয়েকদশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় নৌমহড়াও দেখায় তারা। তাইওয়ান প্রণালীর কল্পিত মধ্যরেখা মুছতে তাদের প্রচেষ্টা উদ্বিগ্ন করে তোলে তাইপেকেও।

তবে ওই উত্তেজনা এখন খানিকটা থিতিয়ে এসেছে, যদিও অঞ্চলটি ঘিরে চীন ও তাইওয়ানের প্রস্তুতি মোটেও বিশ্ববাসীকে স্বস্তি দিচ্ছে না। বছরের শেষভাগে স্বশাসিত দ্বীপটির স্থানীয় নির্বাচনে পশ্চিমাপন্থি সাই ইং-ওয়েনের দলের ভরাডুবি বেইজিংয়ের জন্য সুসংবাদ হয়েই এসেছে।

তাইওয়ানের কাছে আরেক অঞ্চলও অস্ত্রের ঝনঝনানিতে তটস্থ হয়ে আছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন প্রধানমন্ত্রী আসার এ বছর সর্বোচ্চ সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া; এর মধ্যে বেশ কয়েকটি উড়েছে জাপানের ওপর দিয়ে। কয়েকটি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রও ছুড়েছে তারা, যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম বলে ভাষ্য বিশ্লেষকদেরও। পিয়ংইয়ংয়ের এমন হুংকারের পাল্টায় ওয়াশিংটন-সিউল-টোকিও’ও নানান প্রস্তুতি নিচ্ছে। মার্কিন ও তার মিত্রদের মহড়ায় এ বছর বিমানবাহী রণতরীও যুক্ত হয়েছিল; মিত্রদের সুরক্ষায় এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের ইঙ্গিতও বাড়াচ্ছে শঙ্কা।

Also Read: সমুদ্রে ফের দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল উত্তর কোরিয়া

Also Read: দুই সপ্তাহের মধ্যে ষষ্ঠ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা উত্তর কোরিয়ার

Also Read: আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা দেখলেন কিম, সঙ্গে কন্যা

Also Read: পেলোসির তাইওয়ান সফর: উচ্চ সতর্কতায় চীনা বাহিনী, শুরু হচ্ছে মহড়া

Also Read: পেলোসি তাইওয়ানে: উত্তেজনার পারদ চড়ল এবার পূর্বেও

রাজাপাকসেদের পতন, ইমরানও গদিহারা

বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে বিপাকে পড়া শ্রীলঙ্কা স্বাধীনতার পর এবছরই সবচেয়ে বাজে অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়। রিজার্ভের ঘাটতিতে তেল আমদানি করতে না পারায় টানা লোডশেডিংয়ে ভুগতে হয় সোয়া দুই কোটি জনসংখ্যার দেশটিকে।

খাদ্য, ওষুধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি আর লাগামছাড়া মূল্যস্ফীতি দেশটিতে সরকারবিরোধী তীব্র আন্দোলনের জন্ম দেয়।

বিক্ষোভের এক পর্যায়ে বড়ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগ করলেও বিক্ষোভকারীদের রোষ কমেনি। তারা চায় প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ার পদত্যাগ। আন্দোলন আরও সংগঠিত রূপ নেয়। ঋণ শোধ করতে না পেরে শ্রীলঙ্কা একসময় নিজেদের দেউলিয়াও ঘোষণা করে। নিজের গদি বাঁচাতে গোটাবায়া মন্ত্রিসভায় রদবদল এনে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে সহায়তা চেয়ে আলোচনাও শুরু করেছিলেন। কিন্তু অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় জুলাইয়ে ক্ষুব্ধ জনতা প্রেসিডেন্টের

বাসভবন ও কার্যালয়ে হানা দিলে এক পর্যায়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে পদত্যাগপত্র দিতে হয় একসময় তামিল টাইগারদের গুঁড়িয়ে দিয়ে সিংহলিদের কাছে নায়কের মর্যাদা পাওয়া গোটাবায়াকে।

তার জায়গায় ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব নেওয়া রনিল বিক্রমাসিংহে পরে প্রেসিডেন্টের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব নেন; আইএমএফের ঋণ পাওয়ার আশ্বাস এবং নানান সংস্কারের মাধ্যমে পরিস্থিতি খানিকটা সামালও দেন তিনি। সরকারের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে দেশে ফেরেন গোটাবায়াও।

চলতি বছর পাকিস্তানেও ক্ষমতাচ্যুত হতে হয় ইমরান খানকে। অর্থনৈতিক সংকট দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটির সরকারকের নড়বড়ে করে দেয়। এক পর্যায়ে ইমরানের দলের ডজনেরও বেশি সাংসদ বিরোধীদের সঙ্গে হাত মেলালে বাধে গোল। আস্থা ভোটে টিকতে পারবেন না বুঝতে পেরে নানান নাটকেরও জন্ম দেন ইমরান। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। তাদের নির্দেশনা পেয়ে মধ্যরাতে পার্লামেন্টে ইমরানবিরোধী অনাস্থা প্রস্তাব ভোটে যায়। সেখানে হেরে কুরসি ছাড়তে হয় পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের প্রধানকে। ক্ষমতায় আসে শাহবাজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ নওয়াজ নেতৃত্বাধীন সরকার।

ক্ষমতা হারানোর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে বলে অভিযোগও করেন তিনি, আঙুল তোলেন সেনাবাহিনীর দিকেও। সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙা করতে দেশজুড়ে চষে বেড়াতে থাকেন। পিটিআইয়ের এক লংমার্চে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার অভিযোগও আসে। নেতাকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়, সেখানে চিকিৎসা নিয়ে ফের লংমার্চে যোগ দেন ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান।

Also Read: শ্রীলঙ্কায় রাজাপাকসে রাজত্বের কলঙ্কময় ইতি

Also Read: বিক্ষোভে জ্বলছে শ্রীলঙ্কা

Also Read: শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগ

Also Read: শ্রীলঙ্কাবাসীর সামনে এখন কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা

Also Read: প্রেসিডেন্ট পালালেও শ্রীলঙ্কা সঙ্কটেই

Also Read: পাকিস্তান: অনেক নাটকের পর আস্থাভোটে ক্ষমতাচ্যুত ইমরান খান

Also Read: ইসলামাবাদে বিক্ষোভের ডাক ইমরান খানের

Also Read: ইমরান খান: রাজনীতির খেলায় হেরে ক্ষমতা থেকে বিদায়

Also Read: ইমরান খানকে অযোগ্য ঘোষণার শুনানি ২০ ডিসেম্বর

চীনে শি’র ক্ষমতা পোক্ত, কোভিড সঙ্কটের প্রত্যাবর্তন

পট আগেই প্রস্তুত ছিল, শেষ পর্যন্ত হয়েছেও তাই। তৃতীয় মেয়াদে চীনের প্রেসিডেন্ট ও ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতা হয়েছেন শি জিনপিং। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সরিয়ে অক্টোবরে হওয়া কংগ্রেসে দলে নিজের প্রভাব আরও পোক্তও করেছেন তিনি।

এবার কংগ্রেসে শি-র পাশাপাশি আর কারা কারা বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ অর্থনীতির দেশটির ক্ষমতাকাঠামোতে স্থান পেতে পারেন তা নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যমের বেশ আগ্রহও ছিল, কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে সাবেক নেতা হু জিনতাওকে সরিয়ে নেওয়ার ভিডিও-ও বিশ্বজুড়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে।

চীনের কোভিডবিরোধী বিক্ষোভও বিশ্ব গণমাধ্যমের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। টিকাদান কর্মসূচি, ওমিক্রনের মতো বেশি সংক্রামক কিন্তু তুলনামূলক কম প্রাণ সংহারী ধরনের বিস্তৃতি, হার্ড ইমিউনিটি প্রভৃতি কারণে বিশ্বের অনেক দেশ গত বছর থেকেই বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে ভাইরাসকে সঙ্গী করে জীবনযাপন শুরু করলেও চীন সে পথে হাঁটেনি।

তাদের ‘শূন্য কোভিড’ নীতি মৃত্যু ও সংক্রমণ অনেকখানিই দমিয়ে রেখেছিল। কিন্তু হঠাৎ লকডাউনসহ কঠোর সব বিধিনিষেধ সাংহাইসহ ব্যবসায়িক গুরুত্বপূর্ণ অনেক অঞ্চলের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা থমকে রেখেছিল।

প্রায় তিন বছরধরে চলা এসব বিধিনিষেধে হাসফাঁস করছিল দেশটির জনগণ, বছরের শেষভাগে এসে সেখান থেকে বের হয়ে বিধিনিষেধবিরোধী বিক্ষোভে নামে তারা।

কর্তৃপক্ষ তাদের ‘শূন্য কোভিড’ নীতি থেকে সরে বিধিনিষেধ একে একে তোলা শুরু করলে বিক্ষোভ অবশ্য অল্প কয়েকদিনেই থেমে যায়। তবে দেশটিতে টিকাদান কম ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় তড়িঘড়ি সব বিধিনিষেধ তুলে নিলে কোভিডে মৃত্যু ১৫ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে যে করোনাভাইরাসের আবির্ভাব পরবর্তীতে বিশ্বজুড়ে মহামারী সৃষ্টি করেছিল, সেই চীনেই এখন কোভিডের ঊর্ধ্বগতি নতুন শঙ্কার জন্ম দিচ্ছে।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মহামহারী শুরু থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৫ কোটি ৭১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে, প্রাণ হারিয়েছে ৬৬ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি মানুষ।

কোভিড নিয়ে আরেক লঙ্কাকাণ্ড বাধে অস্ট্রেলিয়ায়, বছরের শুরুতে। টিকা না নেওয়ায় জানুয়ারিতে দেশটি টেনিস তারকা নোভাক জকোভিচের ভিসা বাতিল করে দিলে তা নিয়ে আদালতে যান পুরুষ টেনিসে র্যাংকিংয়ে এক নম্বরে থাকা এ সার্বিয়ান। পরে আদালতও তার আবেদন বাতিল করে দিলে জোকোভিচকে অস্ট্রেলিয়া ছাড়তে হয়, এ ডামাঢোলে শেষ পর্যন্ত তিনি অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলতেই পারেননি।

বছরের মাঝামাঝিতে ইউরোপসহ বিশ্বের ২৯টি দেশে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের ঘটনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে উদি্বগ্ন করলেও শেষ পর্যন্ত তা বেশি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি। নভেম্বরে সংস্থাটি বর্ণবাদী নামটি বদলালে রোগের নতুন নাম হয় ‘এমপক্স’।

Also Read: তৃতীয় মেয়াদে শি, ক্ষমতায় নিয়ন্ত্রণ আরও মজবুত

Also Read: নতুন মতাদর্শ দিয়ে ক্ষমতা আরও সুসংহত করলেন শি

Also Read: চীনে শি জিনপিংয়ের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ

Also Read: বিক্ষোভের মুখে কোভিড বিধিনিষেধ শিথিল করছে চীন

Also Read: বিক্ষোভে উত্তাল চীনে নিরাপত্তা জোরদার, সাংবাদিকসহ কয়েকজন গ্রেপ্তার

Also Read: মাঙ্কিপক্স ছড়িয়েছে ১২ দেশে, ছড়াতে পারে আরও

Also Read: ভারতে এবার দিল্লিতে মাঙ্কিপক্স আক্রান্তের সন্ধান

Also Read: মাঙ্কিপক্সের নতুন নাম এমপক্স

মাহাথিরের বিদায়, ভারতে প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি

এ বছর মালয়েশিয়ায় সাধারণ নির্বাচন হয়েছে। তাতে সবচেয়ে বেশি আসনে জিতে ক্ষমতায় বসতে পেরেছে আনোয়ার ইব্রাহিমের দল। অন্যদিকে দুই দশকেরও বেশি সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী থাকা মাহাথির মোহাম্মদ ৫৩ বছরে প্রথম নিজের সংসদীয় আসন খুইয়েছেন। ৫ প্রার্থীর মধ্যে কেবল চতুর্থই হননি, বাজেয়াপ্ত হয়েছে তার জামানতও।

এ বছরই ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন দ্রেপৈদী মুর্মু; এই পদে প্রথম আদিবাসী নারী ও সবচেয়ে তরুণও তিনি। গত জুলাইয়ে রাষ্ট্রপতি হিসাবে জয়ের জন্য দ্রৌপদীর প্রয়োজন ছিল ৫,৪০,৯৯৬ ভোট। তৃতীয় রাউন্ড ভোট গণনার পরেই সেই অঙ্ক ছাড়িয়ে তিনি পেয়ে যান ৫,৭৭,৭৭৭ ভোট। ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) দেশের রাষ্ট্রপতি পদে পছন্দের প্রার্থী হিসেবে বেছে নেয় এই সাঁওতাল নারী দ্রৌপদী মুর্মুকে।

অন্য আরও কয়েকটি দেশেও চলতি বছর নির্বাচন হয়েছে। নেপালে এ বছরের সাধারণ নির্বাচন শেষে প্রধানমন্ত্রী পদে ফিরেছেন মাওবাদী গেরিলা নেতা পুষ্প কমল প্রচণ্ড।

ইসরায়েলের সাধারণ নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় ফেরার পথে পা বাড়িয়ে রেখেছেন এক বছর আগেই ক্ষমতাচ্যুত হওয়া দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এবার পার্লামেন্টে তার অবস্থান বেশ পোক্ত হওয়ায়, ইসরায়েলে কয়েক বছর ধরে চলা সরকারকেন্দ্রীক অস্থিরতার অবসান হতে পারে বলেও অনেকের আশা।

রডরিগো দুতার্তের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ফিলিপিন্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে দেশটির ক্ষমতায় মার্কোস পরিবারকে ফেরান ফের্দিনান্দ ‘বংবং’ জুনিয়র।

তিন যুগ আগে ঐতিহাসিক এক গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক ফের্দিনান্দকে ক্ষমতাচ্যুত করার এত বছর পর তার ছেলের নির্বাচনে জয়কে বিশ্লেষকরা আগ্রোহদ্দীপক হিসেবেই দেখছেন। ফের্দিনান্দের সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে রয়েছেন দুতার্তের মেয়ে সারা।

ওদিকে, অক্টোবরে ব্রাজিলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে ফের দেশটির ক্ষমতায় ফিরেছেন বামপন্থি লুইজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভা। প্রথম দফার ভোটে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর সঙ্গে তার ব্যবধান সামান্য থাকলেও দ্বিতীয় দফায় বাজিমাত করেন তিনি।

তবে তার জয় বোলসোনারো আনুষ্ঠানিকভাবে মেনে না নেওয়ায় একধরনের অস্বস্তি থাকলেও ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা হস্তান্তরে এখন পর্যন্ত কোনো বাধা সৃষ্টি করেননি বলে জানাচ্ছে পশ্চিমা গণমাধ্যম। বোলসোনারোর কট্টর ডানপন্থি ভক্তরা অবশ্য এখনও হাল ছাড়েনি, তারা মহাসড়ক আটকে বিক্ষোভ চালানোর পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়াচ্ছে।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতা পেদ্রো ক্যাস্তিয়ো দেড় বছরের মাথাতেই ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিরোধীরা দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল, বিরোধী নিয়ন্ত্রিত পার্লামেন্টে কয়েকদফা অনাস্থা প্রস্তারে উৎরে গেলেও শেষ পর্যন্ত পার পাননি এ বামপন্থি নেতা। অভিশংসিত হওয়ার কয়েকঘণ্টা আগে তিনি পার্লামেন্ট বিলুপ্তির চেষ্টাও করেছিলেন বলে ভাষ্য বিরোধীদের, একই কারণে ক্ষমতাচ্যুতির পর তাকে আটকও করা হয়েছে। ক্যাস্তিয়োর সমর্থকরা অবশ্য হাল ছাড়েননি, দেশটির নতুন প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ ও নির্বাচনের দাবিতে টানা বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। 

প্রাণঘাতী বিক্ষোভের কারণে বছরের শুরুতেই পদত্যাগে বাধ্য হন সুদানের প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদক। কাজাখস্তানে বছরের শুরুতে তীব্র বিক্ষোভ সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দেয়। পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী আকসার মমিন; প্রেসিডেন্ট কাশিম জোমার্ট তোকায়েভ দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট নুরসুলতান নাজারবায়েভকে দেশের নিরাপত্তা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেন।

জানুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন বুরকিনা ফাসোর প্রেসিডেন্ট রোচ কাবোরে। সেপ্টেম্বরে আরেকদফা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসেন ক্যাপ্টেন ইব্রাহিত ত্রায়োরে।

পর্তুগালের আইনসভার নির্বাচনে সবাইকে চমকে দিয়ে জিতে যায় আন্তোনিও কস্তার সোশালিস্ট পার্টি। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন ইয়ুন সুক-ইয়ল। গ্যাব্রিয়েল বরিস সবচেয়ে কম বয়সী প্রেসিডেন্ট হিসেবে চিলির ক্ষমতায় বসেন।

চলতি বছর কোস্টারিকার সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হন সোশাল ডেমোক্রেটিক পার্টির রড্রিগো শাভেজ রোবলস।

এপ্রিলে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করেন আব্দরাব্বু মানসুর হাদি, ভাইস প্রেসিডেন্টকি দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে তাদের দুজনের ক্ষমতা হস্তান্তর করেন রাশেদ আল-আলিমির নেতৃত্বাধীন প্রেসিডেন্সিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিলের কাছে।

আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের মৃত্যুর পর তার ছেলে মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান মে-তে দেশটির প্রেসিডেন্ট হন।

অস্ট্রেলিয়ায় সাধারণ নির্বাচনে জিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন অ্যান্থনি আলবানিজ। জুনে দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটে জিতে প্রেসিডেন্ট হন সাবেক গেরিলা গুস্তাভো পেত্রো।

সেপ্টেম্বরে ইতালির নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে ডানপন্থি জাতীয়তাবাদী রক্ষণশীল দল ব্রাদার্স অব ইতালি।

Also Read: জামানত হারালেন মাহাথির, ঝুলন্ত পার্লামেন্টের পথে মালয়েশিয়া

Also Read: মালয়েশিয়ায় প্রথমবারের মত ঝুলন্ত পার্লামেন্ট

Also Read: ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু

Also Read: ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে মোদীর পছন্দ কে এই সাঁওতাল নারী দ্রৌপদী?

Also Read: ইসরায়েলে নির্বাচন: এগিয়ে নেতানিয়াহু, বলছে বুথফেরত জরিপ

Also Read: নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন শের বাহাদুর দেউবা

বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ পরিণতি

এবছর বিশ্বজুড়ে অসময়ে তীব্র বৃষ্টি, দীর্ঘস্থায়ী বন্যার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনকেই কারণ হিসেবে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। এ আলোচনাই এবারের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে মূল আলোচ্যসূচি হয়ে উঠেছিল। গরিব ও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর চাপে শেষ পর্যন্ত মিশরের শার্ম আল শেখে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত গরিব দেশকে সহায়তা দিয়ে হয় ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ চুক্তি।

তীব্র বৃষ্টি এবং হিমবাহ গলে সৃষ্ট পানি পাকিস্তানে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা নিয়ে আসে। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এ বন্যা পাকিস্তানের বিস্তৃর্ণ অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে; মারা পড়ে এক হাজার ৭৩৯ জন, ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়ে যায় ৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। এমনিতেই অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত পাকিস্তান সরকারকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় দ্বারস্থ হতে হয় আন্তর্জাতিক মহলের।

কেবল আফ্রিকাতেই বন্যা এ বছর দুই হাজারের মতো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে নাইজেরিয়ায়, ছয় শতাধিক। বন্যার কারণে দেশটিতে কলেরার প্রাদুর্ভাবও দেখা দেয়, তাতে মৃত্যু হয় আরও ৬৪ জনের।

জুলাইয়ে ভারতের অমরনাথে মেঘ ভেঙে বৃষ্টিতে সৃষ্ট হঠাৎ বৃষ্টিতে অন্তত ১৬ জন নিহত হয়। মে মাসে শুরু হওয়া উত্তরপূর্ব ভারত ও বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যায় ৩০০র বেশি মানুষ মারা যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুই দেশের প্রায় কোটিখানেক মানুষ। মে-জুনে ব্রাসিলের উত্তরপূর্বে বন্যা-ভূমিধসে শতাধিক নিহত হয়। জুনে আসামের শিলচরে মনুষ্যসৃষ্ট বন্যাও কেড়ে নেয় ২০০র বেশি মানুষের প্রাণ।

মে, জুলাই, অগাস্টে আফগানিস্তানে ভয়াবহ বন্যায় মারা যায় ৬৭০ জন। ব্রাজিলে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি রিউ দি জানেইরুর পিত্রোপোলিসে তীব্র বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যা, ভূমিধস কেড়ে নেয় ৩৬৫ জনের প্রাণ। মে-তে ব্রাজিলের রিসিফের বন্যায় মারা যায় আরও ১০৬ জন। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির মূল্য। দাঁড়ায় ৫০০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার। জুলাইয়ের শেষদিকে ইরানে ৩১টি প্রদেশে ছড়িয়ে পড়া বন্যা কেড়ে নেয় আরও ৯৫ জনের প্রাণ।

জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় মৃত্য ৪ হাজারে কাছাকাছি পৌঁছে যায়। তীব্র বৃষ্টিকেই মূলত এই বন্যার জন্য দায়ী করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে জুলাই-অগাস্টের বন্যায় প্রাণ হারিয়েছে ৪৪ জন। এ বছর বন্যা হয়েছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো মরুপ্রধান দেশেও।

চলতি বছর জানুয়ারির মাঝামাঝি দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ অংশে ভয়াবহ তাপদাহের দেখা মেলে, সেসময় ওই অঞ্চলের তাপমাত্রা মধ্যপ্রাচ্যের তাপমাত্রাকে অতিক্রম করে পরিণত হয় বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ অঞ্চলে।

উত্তর আমেরিকায় মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাপদাহ শতাধিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। এ বছর চীনেও জুন-অগাস্টে ভয়াবহ তাপদাহ দেখা যায়। জুন থেকে অগাস্টে একাধিক তাপদাহে ইউরোপ দেখে বিপুল সংখ্যক মৃত্যু। জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্তুগালে ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়।

তাপদাহের কারণে ভারত ১৯০১ সালের পর এ বছরই সবচেয়ে উষ্ণ মার্চ মাস পেয়েছে। কাছাকাছি সময়ে পাকিস্তানের নওয়াবশাহ শহরের তাপমাত্রা ছোঁয় ৪৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি। পাকিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শেরি রেহমান সেসময় বছরটিকে ‘বসন্তবিহীন’ বছর বলে অভিহিত করেন। তাপদাহ মে-র প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই কেবল সরকারি হিসাবেই দেশ দুটির ৯০ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়।

জুনের শেষদিক থেকে জাপানে তাপদাহ শুরু হয়। শেষ হয় অগাস্টে। তাপদাহের কারণে দেশটিতে ১৫ হাজারের বেশি লোককে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। ইউরোপ চলতি বছর ৫০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে খরা দেখেছে; খরা ভুগিয়েছে উত্তর আমেরিকার দেশগুলোকেও।

আফগানিস্তানে এবছর ৩টি ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে জুনে খোস্তে ভূমিকম্পে হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ যায়। বাকি দুই কম্পন কেড়ে নিয়েছে আরও প্রায় অর্ধশত। নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিমা জাভায় ৫ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে মৃত্যু হয় ৩৩৪ জনের। চীনের সিচুয়ানে ভূমিকম্পে মারা গেছে ১০০র কাছাকাছি মানুষ।

এবছর পাপুয়া নিউগিনি, মেক্সিকো, জাপান, টোঙ্গা, পেরু, ফিলিপিন্স, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, ভানুয়াতু, নিউ কালাদোনিয়া ও ফিজিতে ৭ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্পদেখা গেলেও এগুলোতে খুব বেশি প্রাণহানি হয়নি।

কলম্বিয়ায় ডিসেম্বরে ভূমিধসে প্রাণ যায় ৩৩ জনের। জানুয়ারিতে ব্রাজিলে পাহাড় থেকে ধসে পড়া পাথর লেকে ঘুরে বেড়ানো পর্যটকবাহী নৌকায় পড়লে নিহত হয় ১০ জন।

প্রায় ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের কারণে জানুয়ারির শেষদিন ও ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন একুয়েডরে একাধিক ভূমিধসে প্রাণ যায় প্রায় ৩০ জনের। জুনে ভারতের মণিপুরে ভূমিধসে মৃত্যু হয় ৫৮ জনের।

ঘূর্ণিঝড় আনা জানুয়ারিতে মাদাগাস্কার, মোজাম্বিক, দক্ষিণ আফ্রিকা, মালাউয়ি, জিম্বাবুয়ে ও জাম্বিয়ার ১৪২ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বাতসিরাই কেড়ে নিয়েছে মাদাগাস্কারের শতাধিক বাসিন্দাকে। মাদাগাস্কার, মোজাম্বিক ও মালাউয়িতে ঘূর্ণিঝড় গোম্বের কারণে মৃত্যু হয়েছে ৭২ জনের। এপ্রিলে ফিলিপিন্সে আঘাত হানা মেগি নেয় দুই শতাধিক মানুষের প্রাণ।

ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম, লাওস, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ায় তাণ্ডব চালানো নোরু ৪০ জনের প্রাণ গেছে। একই মাসে দক্ষিণ আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ইয়ানে মৃত্যু হয়েছে দেড় শতাধিক মানুষের।

পরের মাসে মধ্য ও উত্তর আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় দ্বীপের বেশ কয়েকটি দ্বীপদেশকে ভোগানো ঘূর্ণিঝড় জুলিয়ায় প্রাণ যায় ৯১ জনের। অক্টোবরে ফিলিপিন্সে নালগায়ে ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ গেছে ১৬৪ জনের।

এবছর যুক্তরাষ্ট্র, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপের পাশাপাশি আফ্রিকার মরক্কো, এশিয়ার কাজাখস্তান, মঙ্গোলিয়া, পাকিস্তান ও রাশিয়ার সাইবেরিয়ার লাখ লাখ একর জমি পুড়িয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দেশে দেশে বজ্রপাতের পরিমাণও বাড়ছে; এ বছর কেবল ভারতেই বজ্রপাতে ৯০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার।

Also Read: পাকিস্তানে বন্যা: দুর্দশায় লাখ লাখ মানুষ

Also Read: পাকিস্তানে বন্যা: আটকে পড়া আরও ২০০০ মানুষ উদ্ধার

Also Read: পাকিস্তানে বন্যাবাহিত রোগে ৯ জনের মৃত্যু

Also Read: প্রলয়ঙ্করী বন্যা: পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ পানির নিচে, মৃত্যু ছাড়াল ১১০০

Also Read: পাকিস্তানে বন্যায় ক্ষতি অন্তত ’১০ বিলিয়ন ডলার’

Also Read: আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ২২

থামেনি সন্ত্রাসী হামলা, বাড়ছে গুলির ঘটনাও

বছরের প্রথম সপ্তাহেই নাইজেরিয়ায় ফুলানি দস্যুদের হামলায় নাইজেরিয়ায় দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর মেলে। ২১ জানুয়ারি ইসলামিক স্টেটের এক জঙ্গি ইরাকের একটি সামরিক ঘাঁটিতে ঢুকে ঘুমন্ত ১১ সেনাকে হত্যা করে।

একই মাসে বেলুচ বিদ্রোহীরা পাকিস্তানের দাশতে একটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালিয়ে ১০ সেনাকে হত্যা করে। ফেব্রুয়ারিতে ডিআর কঙ্গোতে উদ্বাস্তু শিবিরে জঙ্গিদের হামলায় ৬০ জনের বেশি নিহত হয়। ওই মাসের ১৯ তারিখ সোমালিয়ায় একটি রেস্তেরাঁয় আল-শাবাবের আত্মঘাতী হামলায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়।

৪ মার্চ পাকিস্তানের পেশোয়ারে শিয়া মসজিদের বাইরে এক আইএস জঙ্গি পুলিশ সদস্যদের গুলি করার পর ভেতরে ঢুকে নিজেকে উড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় ৬৪ জনের প্রাণ যায়। জঙ্গিদল আইএস এ হামলার দায় স্বীকার করে নেয়।

মার্চের শেষ সপ্তাহ ও এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ইসরায়েলি একাধিক ছুরি হামলা, গুলির ঘটনায় প্রায় যায় প্রায় ২০ জনের। ২৩ মার্চ সোমালিয়ার বেলেদোয়েইনে ও মোগাদিশুতে আল শাবাবের সিরিজ হামলায় প্রাণ যায় ষাটের বেশি মানুষের, আহত হয় শতাধিক।

আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরীফে এক শিয়া মসজিদে ২১ এপ্রিলে ইসলামিক স্টেটের বোমা হামলায় মারা যায় ৩১ জন।

জুনে নাইজেরিয়ায় ক্যাথলিক চার্চে জঙ্গিদের গুলি ও বোমায় প্রাণ যায় অন্তত ৪১ জনের। একই মাসে বুরকিনা ফাসোতে এক গ্রামে জঙ্গিদের হামলায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। ১৮ ও ১৯ জুন মালিতে মোপতি অঞ্চলের একাধিক গ্রামে বন্দুকধারীরা ১৩২ জনকে হত্যা করে।

অগাস্টের তৃতীয় সপ্তাহে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে হায়াত হোটেলে জোড়া গাড়ি বোমা হামলায় মৃত্যু হয় ৩০ জনের। পরের মাসে কাবুলে রাশিয়ার দূতাবাসে ইসলামিক স্টেটের বোমা হামলায় মারা যায় ১০ জন। অক্টোবরে ইরানে শাহ চেরাগ মসজিদে বন্দুকধারীদের হামলায় প্রাণ যায় ১৩ জনের। ২৯ অক্টোবর মোগাদিশুতে জোড়া গাড়িবোমা হামলায় আরও ১২১ জন মারা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রে এবছরও প্রায় প্রতিদিনই ম্যাস শুটিং বা বন্দুকধারীর হামলায় একাধিক হতাহতের ঘটনা দেখা গেছে। এক হিসাবে দেশটিতে কেবল নভেম্বর পর্যন্ত ৭০৫টি ম্যাস শুটিংয়ের ঘটনায় ৭৩৬ জনের মৃত্যু ও ২ হাজার ৭৮৫ জনের আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

জুলাইয়ে ইলিনয়ের হাইল্যান্ড পার্কে একটি ভবনের ছাদ থেকে স্বাধীনতা দিবসের প্যারেড দেখতে আসা মানুষের উপর এক বন্দুকধারীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে ৭ জন নিহত হয়, আহত হয় প্রায় অর্ধশত।

২৪ মে টেক্সাসে ১৮ বছর বয়সী এক ছেলে ঘরে দাদিকে মেরে পরে একটি স্কুলে ঢুকে ১৯ শিশুসহ ২১ জনকে গুলি করে হত্যা করে। একই মাসে নিউ ইয়র্কের বাফেলোতে একটি সুপারমার্কেটে ঢুকে এক শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী তরুণ ১০ জনকে গুলি করে হত্যা করে।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ট্রাক্টর ট্রেইলারের মধ্যে মেলে ৫৩ অভিবাসনপ্রত্যাশীর লাশ। অগাস্টে নিউ ইয়র্কে ছুরিকাহত হন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ-আমেরিকান ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি।

৬ অক্টোবর থাইল্যান্ডের নং বুয়া লামফু প্রদেশে সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তার গুলি ও ছুরি হামলায় ২৪ শিশুসহ ৩৬ জন নিহতের ঘটনা সমগ্র বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দেয়।

জুলাইয়ের শেষদিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে ড্রোন হামলা চালিয়ে আল-কায়েদার শীর্ষ নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরিকে হত্যা করার দাবি করে।

নভেম্বরে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ওপর হামলা হয়। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এর লংমার্চ চলার মধ্যে এক সমাবেশে বন্দুকধারীর গুলিতে ইমরান খান ও তার দলের অন্যান্য নেতাসহ ৭ জন আহত এবং দলের এক কর্মী নিহত হন।

Also Read: সমাবেশে গুলি, ইমরান খান আহত

Also Read: ইমরানের ওপর হামলার ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট

Also Read: কানাডায় গোলাগুলিতে সন্দেহভাজনসহ নিহত ৬

Also Read: পাকিস্তানে পুলিশ স্টেশনে জঙ্গি হামলা, চার পুলিশ নিহত

Also Read: ইমরান খান হত্যাচেষ্টা: পাকিস্তান এবার কোন পথে?

জাপানে আবে হত্যা, ইরানে নীতি পুলিশ ‘বিলুপ্ত’

জুলাইয়ে জাপানে এক নির্বাচনী প্রচারে বক্তব্য দিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান দেশটিতে টানা সবচেয়ে বেশিদিন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা শিনজো আবে।

বহির্বিশ্বের জাপানের শির আরও উঁচু করা, ৬৭ বছর বয়সী আবে বছরকয়েক আগে ক্ষমতা ছাড়লেও জাপানের রাজনীতিতে তার প্রভাব কম ছিল না।

দেশটিতে বন্দুক হামলার ঘটনা বিরল, রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তায়ও তেমন কড়াকড়ি থাকে না। যে কারণে হাতে বানানো একটি অস্ত্র দিয়ে হামলাকারী সহজেই আবেকে গুলি করতে সক্ষম হন। এ মৃত্যু বিশ্বজুড়ে নাড়া দেওয়ার পাশাপাশি জাপানের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা ব্যবস্থাতেও বড় ধরনের পরিবর্তনের ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে।

আবের মৃত্যুতে ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেন দেশটির পুলিশপ্রধান সেপ্টেম্বরে নিরাপত্তা হেফাজতে ২২ বছর বয়সী কুর্দি তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যুর ঘটনা ইরানকে তাঁতিয়ে দেয়। অসংখ্য শহরে হাজারো নারী-পুরুষ দেশটির মোল্লাতন্ত্র আর কঠিন পোশাকবিধির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নামে।

ইরান কর্তৃপক্ষ কঠোর দমনপীড়ন চালিয়েও তা বন্ধ করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত বিতর্কিত নীতি পুলিশ বাতিলের ইঙ্গিত দেয়। নারীরা ঘরের বাইরে পোশাকবিধি ঠিকঠাক মানছে কিনা তা দেখার দায়িত্বে থাকা এ নীতি পুলিশই মাশাকে গ্রেপ্তার করেছিল।

তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই আন্দোলন এরই মধ্যে পাঁচশ’র বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বলে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে। সম্প্রতি বিক্ষোভে সম্পৃক্ত বেশ কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনা ইরানের চলমান বিক্ষোভকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে বলেও অনেকে ধারণা করছেন।

Also Read: জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে গুলি করে হত্যা

Also Read: চলমান বিক্ষোভের মধ্যে নীতি পুলিশ বিলুপ্ত করছে ইরান

Also Read: বিক্ষোভে ২০০ মৃত্যুর কথা স্বীকার করল ইরানি কর্তৃপক্ষ

রানি এলিজাবেথের মৃত্যু, ব্রিটিশ সিংহাসনে নতুন রাজা 

সত্তর বছর ধরে ব্রিটিশ সিংহাসন সামলানো রানি এলিজাবেথ এ বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ৯৬ বছর বয়সে চিরনিদ্রায় গেলে তার ছেলে চার্লস নতুন রাজা হন। এই পট পরিবর্তনে বদলে যায় যুক্তরাজ্যের জাতীয় সঙ্গীত, মুদ্রা।

শাসনকালে ১৪ জন প্রধানমন্ত্রীকে যুক্তরাজ্যে সরকার গঠন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ জন প্রেসিডেন্টের আসা-যাওয়াও।

রানির মৃত্যুতে সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোতেও শোকের ছায়া বিস্তৃত হয়। কয়েকদিন ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রিয় রানিকে শেষবারের মতো বিদায় জানায় যুক্তরাজ্যের জনগণ।

রানির মৃত্যু ও নতুন রাজার অভিষেকের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের জনগণকে চলতি বছরেই তিনজন প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে হয়েছে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি, কোভিড বিধিনিষেধের মধ্যে ডাউনিং স্ট্রিটে মদের পার্টিসহ নানান কেলেঙ্কারিতে জনপ্রিয়তা কমে উপনির্বাচনে টোরিদের হরের পর বরিস জনসন দলের ভেতর প্রবল বিদ্রোহের মুখোমুখি হন; একদফা বিদ্রোহ সামাল দিয়ে, আস্থা ভোটে টিকে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। একের পর এক মন্ত্রীর পদত্যাগের পর শেষ পর্যন্ত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিতে হয় জনসনকে।

নেতৃত্বের পরীক্ষায় জিতে সেপ্টেম্বরে কনজারভেটিভ পার্টির প্রধানের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী পদে বসেন লিজ ট্রাস। অর্থনৈতিক সংকট সামাল এবং গভীরভাবে বিভক্ত কনজারভেটিভদের ঐক্যবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি ছিল তার। কিন্তু অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আরও গোল বাধিয়ে মাত্র ৪৫ দিনের মাথাতেই ডাউনিং স্ট্রিট ছাড়তে হয় দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময় ক্ষমতায় থাকা এ নারী প্রধানমন্ত্রীর।

ট্রাসের পদত্যাগে ভাগ্য খুলে যায় নেতৃত্ব নির্বাচনে তার কাছেই পরাজিত হওয়া ঋষি সুনাকের। ক্ষমতা হাতে নিয়ে তড়িৎ কিছু পদক্ষেপে যুক্তরাজ্যর প্রথম এ ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী পরিস্থিতি অনেকটাই সামলে নিতে পেরেছেন বলে অনেকে মনে করছেন।

এ বছর বিশ্ব আরও যাদের হারিয়েছে তার মধ্যে আছেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ নেতা মিখাইল গর্বাচেভ, আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ও চীনের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াং জেমিন। সেপ্টেম্বরে চলচ্চিত্রকার জঁ লুক গদারের মৃত্যুও বিশ্বজুড়ে নামায় শোকের ছায়া।

উপমহাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী লতা মুঙ্গেশকর আর কিংবদন্তি ক্রিকেটার শেন ওয়ার্নও এই বছর পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছেন। একেবারে শেষপ্রান্তে ফুটবল সম্রাট পেলের মৃত্যু কাঁদিয়েছে বিশ্বকে।

Also Read: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জীবনাবসান

Also Read: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্য যেভাবে অতুলনীয়

Also Read: রানির শেষকৃত্যে যাচ্ছেন বিশ্ব নেতারা: ম্যানহোল থেকে ছাদ, সবখানে পুলিশ

Also Read: রানির সেই হাসি ভোলার নয়: ক্যামিলা

Also Read: আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটেনের রাজা হলেন তৃতীয় চার্লস

Also Read: নতুন রাজা চার্লস

Also Read: কেমন রাজা হবেন চার্লস?

মাস্কের টুইটার দখল

খুবই সন্তর্পণে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সোশাল মিডিয়ায় ঢোকা শুরু করেন টেসলা ও স্পেসএক্স প্রধান। জানুয়ারি মাস থেকে শেয়ার কিনছিলেন তিনি, মার্চ মাসে জানা যায় টুইটারের ৫ শতাংশের বেশি এখন মাস্কের দখলে। পরের মাসেই প্ল্যাটফর্মটির সবচেয়ে বেশি শেয়ারের মালিন বনে যান তিনি।মাস শেষ হওয়ার আগেই ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে কোম্পানি কিনে নেওয়ার সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন তিনি।

মে মাসের মাঝামাঝি সুর বদলে যায় তার; প্ল্যাটফর্মে বট ও স্প্যাম অ্যাকাউন্টের সংখ্যা টুইটারের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যের চেয়ে অনেক বেশি বলে অভিযোগ তোলেন। দুই মাস পর সমঝোতা চুক্তি থেকে সরে আসার ইচ্ছার কথাও জানান মাস্ক।

কিন্তু টুইটার তখন বলে, সমঝোতা চুক্তির কারণে অধিগ্রহণ সম্পন্ন করতে আইনত বাধ্য ইলন মাস্ক।

অক্টোবরে বিষয়টি আদালতে উঠলে বিচার কাজ শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে ফের মত পাল্টান মাস্ক। তার মধ্যেই টুইটারকে নিজের করে নেন মাস্ক।

তার দায়িত্বপর্ব শুরু হয় সিইওসহ একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার চাকরি খেয়ে। পুরো পরিচালনা পর্ষদকে বিদায় করেন নিজেই সিইও ও পরিচালক বনে যান টেসলাপ্রধান।

তার দায়িত্ব নেওয়ার পর টু্ইটারে শুরু হয় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা, কর্মী ছাঁটাই, চাকরি ছাড়ার হিড়িক। এ পরিস্থিতিতে অফিস সাময়িক বন্ধও রাখতে হয় টুইটারকে। পশ্চিমা বিশ্বে অন্যতম জনপ্রিয় এ সোশাল প্ল্যাটফর্মের এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শেয়ারহোল্ডার সৌদি রাজপুত্র আলওয়ালিদ বিন তালাল।

Also Read: মাস্কের হাতে টুইটার, অ্যাম্বার হার্ডের অ্যাকাউন্ট গায়েব

Also Read: টুইটার: ভোটের ফল মাস্কের সরে দাঁড়ানোর পক্ষেই

Also Read: মাস্ক একাই টুইটারের পরিচালক, তিনিই সিইও

Also Read: দলবেঁধে মাস্কের নাম দখল, টুইটারে নিষিদ্ধ কৌতুক শিল্পীরা

Also Read: টুইটার প্রধানের পদ ছাড়বেন মাস্ক? সিদ্ধান্ত দিলেন ভোটে

নাসার জয়জয়কার, স্বপ্ন দেখাচ্ছে নিউক্লিয়ার ফিউশনের শক্তি

এ বছর নাসা তাদের নতুন চন্দ্রযান ওরিয়নের সাহায্যে ২৫ দিনের আর্টেমিস ওয়ান মিশন সফলতার সঙ্গে শেষ করতে পেরেছে। তিনবার ব্যর্থতার পর ১৬ নভেম্বর ফ্লোরিডায় নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চপ্যাড ৩৯বি থেকে স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (এসএলএস) রকেটে চড়ে শুরু হয়েছিল ওরিয়নের চন্দ্রযাত্রা।

মহাকাশের প্রতিকূল পরিবেশে ওরিয়নের কার্যক্ষমতা ও নির্ভরযোগ্যতা যাচাই শেষে নিরাপদেই পৃথিবীতে ফেরে চন্দ্রযানটি। এ যাত্রায় কোনো স্পেস স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে পৃথিবী থেকে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার মাইল দূরে গিয়ে ফেরত আসে ওরিয়ন।

মহাকাশে ছুটে চলা কোনো গ্রহাণু পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার হুমকি তৈরি করলে, সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য মহাকাশযান দিয়ে কীভাবে ধাক্কা মেরে তার এর গতিপথ বদলে দেওয়া যায় – তা পরখ করে দেখতে ৬৮ লাখ মাইল দূরের ডাইমরফোস গ্রহাণুর দিকে ‘ডার্ট’ ছুড়ে মারে নাসা।

সেপ্টেম্বরে তাদের সে মিশনে ডার্ট আঘাত হানার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত মহাকাশযানের গায়ে বসানো ক্যামেরা দিয়ে পুরো ঘটনা প্রবাহের ওপর নজরও রেখেছিল মার্কিন এ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।

এ বছর মহাকাশে নিজেদের মহাকাশ স্টেশন তিয়ানগংয়ের নির্মাণ কাজও শেষ করেছে চীন। ভূপৃষ্ঠের ৩৪০ কিলোমিটার থেকে ৪৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় ভেসে আছে স্পেস স্টেশনটি। মহাকাশে মানব জীবনধারণের খুঁটিনাটি আর অন্যান্য বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার সবটাই এখন নিজস্ব স্পেস স্টেশনে করতে পারবে চীন। 

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের তোলা প্রথম ছবি নাসা প্রকাশ করেছে এ বছরের ১২ জুলাই। পৃথিবীর জন্মপূর্ব মহাবিশ্বের একটুকরা ফুঁটে উঠেছে সেই ছবিতে। তারপর থেকে একে একে পিলারস অফ ক্রিয়েশন, শনির চাঁদ টাইটানের মেঘ, দুই ছায়াপথের এক হয়ে যাওয়া, বৃহস্পতির অরোরার চোখ ধাঁধানো ছবি পাঠিয়ে মহাকাশ প্রেমীদের মাতিয়ে রেখেছে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরের শীতল মহাকাশে একলা প্রহরীর মতো মহাবিশ্বের দিকে নজর রাখা এই ওয়েব টেলিস্কোপ।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের হাত ধরে এ বছর চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় আরব বিশ্বের প্রথম মহাকাশযানও।

চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা নিয়ন্ত্রিত নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রথমবারে মত গবেষণাগারে শক্তি উৎপাদনে সাফল্য পেয়েছেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার লরেন্স লাইভমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির ন্যাশনাল ইগনিশন ফ্যাসিলিটিতে বিজ্ঞানীরা সফলভাবে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন, যেখানে ব্যবহার করা জ্বালানির চেয়ে বেশি মাত্রায় শক্তি তৈরি সম্ভব হয়েছে।

সত্যি সত্যি যদি পৃথিবীতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে নিউক্লিয়ার ফিউশন ঘটানো যায়, তার মধ্য দিয়ে দৃশ্যত অসীম পরিমাণ শক্তি উৎপাদন করা যাবে পরিবেশবান্ধব উপায়ে।

বছরের শুরুতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা জয়েন্ট ইউরোপিয়ান টোরাস (জেইটি) ল্যাবরেটরির গবেষকরাও হাইড্রোজেনের দুটি আইসোটপ ব্যবহার করে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে তাপ উৎপাদনের নতুন রেকর্ড গড়ার দাবি করেছিলেন।

যন্ত্রপাতি আধুনিকায়নের জন্য তিন বছর বন্ধ রাখার পর এ বছর থেকে ফের পুরোদমে কাজ শুরু করেছে লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডর।

Also Read: নিউক্লিয়ার ফিউশনে শক্তি তৈরিতে সাফল্য যুক্তরাষ্ট্রে

Also Read: গ্রহাণুকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিতে মহাকাশযান পাঠালো নাসা

বিশ্বজুড়ে নানা দুর্ঘটনা

প্রতিবছরের মতো এবছরও নানা দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছে বিশ্ব। গত ২১ মার্চ চীনের ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী বোয়িং বিমান গুয়াংজুর কাছে গুয়াংসিতে বিধ্বস্ত হলে ১৩২ আরোহীর সবাই মারা পড়ে।

মে-তে নেপালের একটি বিমান পোখারা থেকে জমসম বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে মুস্তাং জেলায় বিধ্বস্ত হলে ২২ জনের মৃত্যু হয়। নভেম্বরে প্রিসিশন এয়ারের একটি বিমান লেক ভিক্টোরিয়ায় বিধ্বসস্ত হলে মারা যায় ১৯ জন।

১ অক্টোবর ইন্দোনেশিয়ার এক স্টেডিয়ামে ফুটবল খেলা নিয়ে দাঙ্গা বেঁধে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের ছোড়া কাঁদুনে ছোটাছুটি, হুড়োহুড়ির মধ্যে শ্বাসরুদ্ধ ও পদদলিত হয়ে ৪০টির বেশি শিশুসহ অন্তত ১৩৩ জনের মৃত্যু হয়।

ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ পরে ওই স্টেডিয়ামটি ভেঙে ফেলারও সিদ্ধান্ত নেয়।

একই মাসের শেষদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের এক এলাকায় হ্যালোউইন উৎসবে ব্যাপক মানুষের উপস্থিতিতে ভিড়ের মধ্যে পদদলিত হয়ে অন্তত ১৪৬ জনের মৃত্যু হয়। বিপুল সংখ্যক মানুষ একটি সরু গলিতে পড়ে গেলে এ পদদলনের ঘটনা ঘটে।

অক্টোবরের শেষে ভারতের গুজরাটে ব্রিটিশ আমলের একটি ঝুলন্ত সেতু ধসে প্রায় দেড়শ মানুষের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার মাত্র কয়েকদিন আগেই সংস্কার শেষে সেতুটি খুলে দেওয়া হয়েছিল।

Also Read: ইন্দোনেশিয়ায় ফুটবল স্টেডিয়ামে দাঙ্গা, পদদলিত হয়ে নিহত ১২৫

Also Read: সিউলে হ্যালোউইন উৎসব যেভাবে পরিণত হল সত্যিকারের ভূতুড়ে রাতে

অলিম্পিক ও বিশ্বকাপ ফুটবল

বেইজিংয়ে এ বছর হয়েছে শীতকালীন অলিম্পিক। এর মধ্য দিয়ে চীনের এ রাজধানী প্রথম কোনো শহর হিসেবে গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন অলিম্পিক আয়োজনের গৌরব অর্জন করল। ডিসেম্বরে ফুটবল বিশ্বকাপ জিতে আর্জেন্টিনা বৈশ্বিক এ আসরে ৩৬ বছরের কাপখরা কাটায়।

Also Read: রোনালদোকে ছাড়িয়ে মেসির ব্যতিক্রমী রেকর্ড

Also Read: ‘সর্বকালের সেরা মেসির কারণে বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা’

Also Read: বিশ্বকাপ: মানবাধিকার না ব্র্যান্ড-মুনাফা?

Also Read: ছাপ-দাগ দুটোই রেখে যায় বিশ্বকাপ

ইউক্রেইন যুদ্ধ কৌশল নিয়ে পুতিনের তৎপরতা

বছরের শেষপ্রান্তিকে এসে নতুন করে উত্তপ্ত হচ্ছে ইউক্রেইন যুদ্ধ পরিস্থিতি। রাশিয়া ইউক্রেইনে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা যেমন বাড়িয়েছে, তেমনি যুদ্ধের পরবর্তী কৌশল নিয়ে তৎপর হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডারদের কাছে যুদ্ধ কৌশল কী হতে পারে সে পরামর্শ চেয়েছেন তিনি। জেনারেলদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও করছেন। গেছেন বেলারুশ সফরেও। সেখানে রুশ সেনারা মহড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেইনজুড়ে নতুন করে ব্যাপক হামলা শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইউক্রেইন এপর্যন্ত যুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ দেখিয়ে বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। তাই নতুন বছরে ইউক্রেইন যুদ্ধে জিতবে কিনা সে প্রশ্ন এখন সামনে চলে এসেছে। কিইভ তো আগেই বলেছে, রাশিয়ার সর্বশেষ সেনাকে নিজেদের ভূখণ্ড থেকে তাড়াতে না পারা পর্যন্ত তারা থামবে না।

অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞই মনে করছেন, খুব সহজে জয় না এলেও ইউক্রেইন হয়ত শেষমেশ যুদ্ধে জিততেও পারে।

Also Read: ইউক্রেইনজুড়ে রাশিয়ার নতুন হামলা

Also Read: রুশ জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠক করলেন পুতিন

Also Read: ইউক্রেইনজুড়ে নতুন হামলার শঙ্কার মধ্যে বেলারুশ যাচ্ছেন পুতিন

Also Read: ইউক্রেইন যুদ্ধের কৌশল ঠিক করতে কমান্ডারদের পরামর্শ নিলেন পুতিন

Also Read: বিশ্বকে চমকে দেওয়া ইউক্রেইন ২০২৩ সালে পারবে যুদ্ধে জিততে?