মালয়েশিয়ায় প্রথমবারের মত ঝুলন্ত পার্লামেন্ট

ঝুলন্ত পার্লামেন্টের কারণে নতুন সরকার গঠন নিয়ে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে তা অবসানে মালয়েশিয়ার রাজা মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2022, 03:08 PM
Updated : 21 Nov 2022, 03:08 PM

ভোটে ক্ষমতাসীন জোট বারিসান ন্যাশনালের ভরাডুবি আর প্রধান বিরোধীদল আনোয়ার ইব্রাহিমের পাকাতান হারাপান জোট সবচেয়ে বেশি আসনে জিতলেও সরকার গঠনের মত প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি কোনও দল।

ফলে মালয়েশিয়া ইতিহাসে প্রথমবারের মত ঝুলন্ত ‍পার্লামেন্ট দেখছে। গত শনিবার দেশটির জাতীয় নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

ভোটের আগের জনমত জরিপগুলোতে আনোয়ার ইব্রাহিমের দলের এগিয়ে থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুবের বারিসান জোটের এতটা ভরাডুবির আভাস পাওয়া যায়নি। বরং হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলেছিল।

এবারের নির্বাচনে বড় চমক হয়ে এসেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের দল পারিকাতান ন্যাশনাল।

প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুবের দল এবার মাত্র ৩০টি আসনে জয়লাভ করেছে। যা দলটির ইতিহাসে সব থেকে বিপর্যয়কর ফলাফল। স্বাধীনতার পর ছয় দশক ধরে মালয়েশিয়া শাসন করা বারিসানের এবার এমন ভরাডুবি মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্রে বড় ধরনের বদলেরও ইঙ্গিত দিচ্ছে।

দুই দশকেরও বেশি সময় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা বারিসান জোটের বর্ষীয়ান নেতা মাহাথির মোহাম্মদ ৫৩ বছর পর প্রথমবার নিজের পার্লামেন্টারি আসন খুইয়েছেন। ৯৭ বছর বয়সের এই নেতা এত কম ভোট পেয়েছেন যে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

১৯৮১ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত দাপটের সঙ্গে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা মাহাথির মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তার হাত ধরেই ৮০’র দশকে মালয়েশিয়ার অর্থনীতির দ্রুত অগ্রগতি হয়েছে।

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত দেশটি তিনজন প্রধানমন্ত্রী দেখেছে।

শনিবারের ভোটেও কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটিতে অস্থিতিশীলতা আরও বাড়বে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন।

এদিকে, সরকার গঠনের জন্য আনোয়ার ইব্রাহিম তার একসময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী দল বারিসানের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমর্থন চেয়েছেন বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স। যাতে তিনি মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের দলকে টপকে সরকার গঠন করতে পারেন।

ঝুলন্ত পার্লামেন্টের কারণে নতুন সরকার গঠন নিয়ে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে তা অবসানে মালয়েশিয়ার রাজা মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে দলগুলোকে জোট গঠন করে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে হবে।

আনোয়ার বলেছেন, তিনি প্রতিপক্ষ বারিসান ন্যাশনাল জোটের কয়েকজন নেতার সঙ্গে সোমবার দেখা করে সম্ভাব্য জোট গঠনের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এখনও কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে আনোয়ার ওই আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে ‘সন্তুষ্টি’ প্রকাশ করেছেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘একটি স্থিতিশীল সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে তাতে আমি সন্তুষ্ট। ওটা খুবই গঠনমূলক ছিল। আমি এখনও খুব আশাবাদী যে আমরা সরকার গঠন করতে পারব।

‘‘একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে বারিসান নেতারা অন্যান্য দলের সঙ্গেও আলোচনায় বসবে।”

ওই সংবাদ সম্মেলনের পর আনোয়ারের জোট একটি বিবৃতিতে জানায়, সরকার গঠনের বিষয়ে তারা বারিসান ন্যাশনালের সঙ্গে ‘চূড়ান্ত আলাচনার পর্যায়ে’ প্রবেশ করেছেন।

মালয়েশিয়ার ২২২ আসনের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ১১২টি আসন। আনোয়ারের দল পেয়েছে ৮২টি আসন। মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের পারিকাতান ন্যাশনাল ৭৩টি আসন। কিন্তু গত রোববার ছোট দুইটি দলের সমর্থন পাওয়ায় এখন পারিকাতান ন্যাশনাল জোটের হতে ১০১টি আসন রয়েছে বলে জানায় রয়টার্স।

যদিও নিজেদের ভোটের ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ ফল করেছে মালয়েশিয়ার দীর্ঘদিনের প্রভাবশালী দল বারিসান ন্যাশনাল। কিন্তু জোট সরকার গঠনের জন্য তাদের কাছ থাকা ৩০টি আসন আনোয়ার এবং ইয়াসিন উভয়ের দলের সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১১২টি আসন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

আনোয়ার ইব্রাহিম এক সময় বারিসান জোটের নেতৃত্বে থাকা ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (ইউএমএনও) পার্টির নেতা ছিলেন। ৮০’র দশকে আনোয়ার দলত্যাগ করলে ইউএমএনও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে তদন্ত শুরু করে এবং আনোয়ারকে দীর্ঘদিন কারাবন্দি থাকতে হয়।

বারিসান এখন যদি আনোয়ারের দলকে সমর্থন দেয় তবে সেটা মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে উল্লেখ করার মত বিষয় হবে।

এদিকে, মুহিউদ্দীন ইয়াসিনের দল পেরিকাতান ন্যাশনাল জোট দাবি করেছে, তাদের কাছে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনের সমর্থন রয়েছে। যদিও কারা তাদের সমর্থন দিয়েছে যে বিষয়ে কিছু জানায়নি। তবে বলেছে, তারা ১১২ এমপির জোট পেশ করেছে।

ইসলামি কট্টরপন্থি বেশ কয়েকটি দলের সমর্থন আগে থেকেই মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের পক্ষে ছিল।