অবশ্য অনেকেই মনে করেন, দেশকে এগিয়ে নিতে ইউনূসের বৈশ্বিক যোগাযোগ কাজে লাগানোর জন্য আগামীতে যে দলই সরকার গঠন করুক না কেন, তারা তাকে রাষ্ট্রপতি বানাতে পারে।
Published : 01 Apr 2025, 03:27 PM
জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম ২৯ মার্চ নিজের ফেইসবুক ওয়ালে লিখেছেন: “প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন স্টেটসম্যানকে পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশের একটি নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমার আজীবন থাকবে।”
সারজিস বলেননি যে তিনি এমনটা চাইছেনই। বরং এটা তার আকাঙ্ক্ষার কথা। এটাকে ‘উইশফুল থিঙ্কিং’ বলা ভালো। যৌক্তিকতা বা বাস্তবতার পরিবর্তে যে কল্পনা আনন্দদায়ক, সারজিস হয়তো তার ভিত্তিতেই এমনটি বলেছেন। ফেইসবুকে দেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সারজিসের এই স্ট্যাটাসের নিচে কমেন্ট পড়েছে ৩৭ হাজারের বেশি। সেখানে নানাজন নানারকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অনেকেই সারজিসের সঙ্গে যেমন একমত পোষণ করেছেন, তেমনি অনেকে তীব্র বিরোধিতাও করেছেন।
কেউ কেউ লিখেছেন, মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন নোবেলজয়ী বাংলাদেশীকে বাংলাদেশের উন্নয়নে যেভাবে কাজে লাগানো যেত, অতীতের সরকার সেটি না করে বরং তাকে অব্যাহতভাবে নাজেহাল করেছে। অপমান করেছে।
এই ইস্যুতে অনেকে রসিকতাও করেছেন। যেমন একজন লিখেছেন: ‘আজীবন ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে সরকার প্রধান হিসেবে দেখতে চাই। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।’
আবার আইন অনুযায়ী মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন কি না, সে প্রশ্নও কেউ কেউ তুলেছেন।
ইউনূস কীভাবে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন?
সারজিসের মতো আরও অনেকেই হয়তো মনে করেন বা বিশ্বাস করেন যে, মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন মানুষ দীর্ঘমেয়াদে সরকারপ্রধানের দায়িত্বে থাকলে দেশ বদলে যাবে। কিন্তু এখানে প্রশ্ন হলো, তিনি কোন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকবেন বা দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন? নির্বাচন ছাড়া আর কোনো উপায় কি আছে? তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে যদি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়, তাহলে তিনি ওই নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। অতএব সংখ্যাগরিষ্ঠ দল চাইলেও তাকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে পারবে না।
বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো বিধান নেই এবং এই সরকারকে অতীতের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতোও বিবেচনা করা হচ্ছে না বা তারা সেই প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় আসেনি, ফলে নির্বাচনের পরে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কোনো একজন এমপির ছেড়ে দেয়া আসনে উপনির্বাচন করে মুহাম্মদ ইউনূস বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসতে পারবেন কি না এবং তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন কি না, সেটি যতটা না আইনি ও সাংবিধানিক প্রশ্ন, তার চেয়ে বড় প্রশ্ন নীতি-নৈতিকতার।
বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধানের ৫৬ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদিগকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন। তবে শর্ত থাকে, তাদের সংখ্যার অন্যূন নয়-দশমাংশ (১০ জনে ৯ জন) সংসদ সদস্যগণের মধ্য হতে নিযুক্ত হবেন এবং অনধিক এক-দশমাংশ (দশজনে একজন) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার যোগ্য ব্যক্তিগণের মধ্য হতে মনোনীত হতে পারবেন।
পরের দফায় বলা হয়েছে, যিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতীয়মাণ হবেন, রাষ্ট্রপতি তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন। ফলে জাতীয় নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাবে যে দল, সেই দলের প্রধানকেই রাষ্ট্রপতি সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানান এবং তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন— এটিই রেওয়াজ।
মন্ত্রিসভার যে এক-দশমাংশ (দশজনে একজন) সদস্যকে টেকনোক্র্যাট কোটায় নিয়োগ দেয়া যায়, সেই বিবেচনায় নিযুক্ত কোনো মন্ত্রীকে যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের আস্থাভাজন বলে বিবেচনা করা হয় না, ফলে অনির্বাচিত কোনো ব্যক্তিকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রিসভায় যুক্ত করা হলেও তার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী হওয়া কঠিন। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত এবং রাষ্ট্রপতি মনে করলে এটি হতে পারে। ফলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যদি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারেন এবং তাকে যদি টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রিসভায় যুক্ত করাও হয়, তাহলে তার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী হওয়া অসম্ভব না হলেও কঠিন। কেননা, বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এরকম কোনো নজির স্থাপিত হয়নি।
সেক্ষেত্রে সারজিস আলম বা তার দল যদি সত্যিই মনে করে যে ড. ইউনূসকে তারা দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান, তাহলে বিকল্প উপায় হলো, মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টার পদ ছেড়ে জাতীয় নাগরিক পার্টিতে যোগ দিতে আহ্বান জানানো। যেহেতু এটি এখনও আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে, শিগগিরই দলটি নিবন্ধন পাবে বলে ধারণা করা যায় এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটিও গঠিত হবে, তখন মুহাম্মদ ইউনূসকে এই দলের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করতে পারেন তারা। সেক্ষেত্রে নাহিদ ইসলাম হতে পারেন দলের সাধারণ সম্পাদক। তখন দলে নবীন ও প্রবীণের সমন্বয় ঘটবে। তখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে আরেকজনকে নিয়োগ দিতে হবে। যদিও এই সম্ভাবনাটিও কম।
অবশ্য অনেকেই মনে করেন, দেশকে এগিয়ে নিতে ইউনূসের বৈশ্বিক যোগাযোগ কাজে লাগানোর জন্য আগামীতে যে দলই সরকার গঠন করুক না কেন, তারা তাকে রাষ্ট্রপতি বানাতে পারে। তিনি তখন বাংলাদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে সারা পৃথিবী ঘুরবেন। অনেকে মনে করেন, শেখ হাসিনা সরকার যদি ইউনূসকে অব্যাহতভাবে নাজেহাল না করতেন, তাহলে তার হয়তো এমন পরিণতি হতো না!
ইউনূস সরকারের ৮ মাস
বলা হয় মর্নিং শোজ দ্য ডে। অর্থাৎ একটি সরকার বা একটি দল কিংবা একজন সরকারপ্রধান সুযোগ পেলে পাঁচ দশ বছরে কী করবেন বা করতে পারবেন সেটি প্রথম ছয় মাসে কিছুটা হলেও আন্দাজ করা যায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের গত প্রায় ৮ মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, বিশেষ করে মব বন্ধ করতে না পারা নিয়ে জনপরিসরে দারুণ সমালোচনা আছে। আগে যেমন মানুষ পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলকে ভয় পেত, এখন ভয় পায় ‘মব’। কোনো একটা ইস্যুতে কিছু লোক একত্র হয়ে একটা মব তৈরি করে যে কোনো সময় যে কারো ওপর আক্রমণ করে বসতে পারে— এমন একটি পরিস্থিতি যে তৈরি হলো, সেটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে সরকার এখনও শতভাগ সফল হয়নি। উপরন্তু ১৯৭১, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ইস্যুতে সৃষ্ট বেশ কিছু মবের ঘটনায় সরকারের নির্লিপ্ততা নানাবিধ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে জনমনে।
নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল বলা হলেও চাল ও ভোজ্যতেলের দামে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হচ্ছে না। বিগত বছরগুলোতে রোজার মাসে নিত্যপণ্যের দাম যেমন চড়া ছিল, এবার সেরকম ঘটনা ঘটেনি বলে মানুষ খুশি। লোডশেডিং নেই বলেও মানুষ আনন্দিত। কিন্তু আগামী দিনগুলোয় তীব্র গরম পড়ে গেলে পরিস্থিতি কী হবে সেটি এখনই বলা মুশকিল। বিশেষ করে শিল্প-কারখানায় গ্যাস সরবরাহের অপ্রতুলতা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। ফলে তীব্র গরমের মাসগুলোয় সরকার যদি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পারে সেটি বিরাট কাজ হবে এবং তখন সাধারণ মানুষও হয়তো বলবে ‘ইউনূস সরকারই ভালো’। প্রসঙ্গত, সোমবার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে ড. ইউনূস জনতার সঙ্গে করমর্দনের সময় অনেকেই ‘স্যার পাঁচ বছর, স্যার পাঁচ বছর’; ‘ইউনূস সরকার, বারবার দরকার’— বলে আওয়াজ দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
অর্থাৎ মানুষ যদি তার নিজের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে পায়; তার জীবিকা নিয়ে কোনো ধরনের অনিশ্চয়তা না থাকে; আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ কমে যায়; মানুষের মনে যদি নিরাপত্তাহীনতার বোধ না থাকে; যে কোনো মবের বিরুদ্ধে সরকার যদি সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেয় এবং দলীয় ও সাংগঠনিক পরিচয় যাই হোক, তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসে; মানুষ যদি মনে করে কোনো দলের প্রতি সরকারের পক্ষপাত নেই বা কোনো দলই সরকারের বিশেষ আনুকূল্য পাচ্ছে না— তাহলে ইউনূস সরকারের ব্যাপারে মানুষের ধারণা অধিকতর ইতিবাচক হতে থাকবে। তখন সত্যিই সারজিস আলমের মতো অনেক সাধারণ মানুষও হয়তো বলা শুরু করবেন যে, ড. ইউনূসকে পাঁচ বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই।
নির্বাচন বিলম্বিত করাই লক্ষ্য?
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার যেমন উন্নয়নকে নির্বাচন ও গণতন্ত্রের বিকল্প হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং তাদের অন্যতম প্রধান স্টেকহোল্ডার জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচনের বিকল্প হিসেবে বলছে ‘সংস্কারের কথা’। এনসিপির তরফে পরিষ্কারভাবে বলা হচ্ছে যে, জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যা ও অন্যান্য অপরাধে যুক্ত ব্যক্তি এবং দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের আগে কোনো নির্বাচন নয়। এই ইস্যুতে এ মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তি বিএনপির সঙ্গে সরকার ও এনসিপির দূরত্ব বাড়ছে। অন্যদিকে এনসিপিকে সরকারের অংশ হিসেবে কাজ করতে দেখে সাধারণ মানুষ করছে এই দলটি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছে। ফলে এই দলের নেতারা যখন আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন যে তারা অন্তত পাঁচ ইউনূসকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান বা বিচার ও সংস্কারের আগে নির্বাচন হবে না— তখন সঙ্গত কারণেই জনমনে এই প্রশ্ন ওঠে যে, তাহলে কি তারা নির্বাচন বিলম্বিত করে দীর্ঘমেয়াদে এই সরকারকে রাখতে চান?
ইদানিং মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়টিও নতুন করে আলোচনায় আসছে। বলা হচ্ছে, বিএনপি-জামায়াত-এনসিপিসহ অন্যান্য দলের নেতাদের নিয়ে একটা জাতীয় সরকার গঠন করা হবে, যারা ২০২৯ সাল পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করবে। কিন্তু অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি এটি মানবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে, যখন দলটির নেতারা বুঝতে পারছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। তাছাড়া নির্বাচন নিয়ে যত দীর্ঘসূত্রতা হবে, রাজনৈতিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ততই বাড়তে থাকবে বলেও অনেকে মনে করেন।
নির্বাচনই বড় সংস্কার
জুলাই অভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন বা সামনের সারিতে ছিলেন, তাদের অনেকেই এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন যেসব কারণে, তার অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল নির্বাচন। অর্থাৎ ভোট দিতে না পারা। যাদের বয়স এখন ২৫ বছর, যারা আরও ৭ বছর আগেই ভোটার হয়েছেন, কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি, তারাই মূলত অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কেননা বিগত সরকার পুরো নির্বাচনি ব্যবস্থাটিকে এমনভাবে ধ্বংস করেছে যে, সেখানে ভোট ছাড়াই কিংবা সাজানো ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় অর্ধেকের বেশি আসনে প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন; ২০১৮ সালের নির্বাচনটি অভিহিত হয়েছে ‘রাতের ভোট’ নামে আর সবশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন হয়েছে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে— যেটিকে অনেকেই ‘আমি ও ডামির নির্বাচন’ বলে নাম দিয়েছেন।
এরকম বাস্তবতায় সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে জন্ম নেয়া যে আন্দোলনটি শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের এক দফায় রূপ নিল এবং যেখানে বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ যোগ দিয়েছে, তাদেরও রাগ ও ক্ষোভের একটি বড় কারণ ছিল নিজের ভোট নিজে দিতে না পারা।
সুতরাং মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়া তথা মানুষকে নির্বিঘ্নে ও আনন্দচিত্তে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়া এবং সরকারি প্রভাব ও চাপমুক্ত রেখে একটি অবাধ-সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য এবং সর্বোপরি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সংস্কার বলে অনেকে মনে করেন। বিশেষ করে বিএনপি এই কথাটিই বারবার বলছে। তাদের মতে, নির্বাচন ছাড়া অন্যান্য সংস্কারগুলো হতে হবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংসদে পাস করার মধ্য দিয়ে সেসব সংস্কার বাস্তবায়ন করবেন। অতএব এনসিপি কিংবা দেশের বিরাট অংশের মানুষও যদি মনে করে যে মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়া এসব সংস্কার হবে না, সংস্কারের জন্য তাকে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে হবে। কিন্তু তিনি অনির্বাচিত প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকবেন নাকি কোনো না কোনো আইনি ও সাংবিধানিক পথ বের করে নির্বাচিত হয়ে আসবেন— সেটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
পরিশেষে…
মনে রাখতে হবে, ড. ইউনূস যদি একদিনের জন্যও প্রধানমন্ত্রী হতে চান, সেটি হতে হবে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। জনগণ আসলেই তাকে চায় কিনা, সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে নির্বাচন। যে নির্বাচনি ব্যবস্থাটি ধ্বংস করার কারণে আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় দল এবং শেখ হাসিনার মতো একজন পরাক্রমশালী শাসকেরও পতন হয়েছে। ফলে জনমনে এই শঙ্কাও রয়েছে যে, নির্বাচনি ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে বা উপেক্ষা করে কোনো বিকল্প উপায়ে একটি অনির্বাচিত সরকারকে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় রাখার পরিকল্পনা আখেরে দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে পারে— যা ব্যর্থ করে দিতে পারে মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমম্পন্ন মানুষের সারা জীবনের অর্জন ।