বিক্ষোভে জ্বলছে শ্রীলঙ্কা

অর্থনৈতিক সঙ্কটে টালমাটাল শ্রীলঙ্কায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসে। তবে তাতেও ক্ষোভ কমেনি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2022, 07:21 PM
Updated : 9 May 2022, 07:21 PM

সান্ধ্য আইনের মধ্যেও রাজাপাকসের পৈত্রিক বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা, জ্বালিয়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন এমপি এবং একজন বিচারপতির বাড়ি।

বিক্ষোভে সহিংসতায় প্রাণও হারিয়েছেন একজন এমপি। তবে বলা হচ্ছে, তিনি বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি ছোড়ার নিজেই নিজের উপর গুলি চালান।

বিবিসি জানিয়েছে, কলম্বোয় সহিংসতায় ওই সংসদ সদস্যসহ পাঁচজন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে প্রায় দুইশ জন।

স্বাধীনতার পর থেকে এখনই সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সঙ্কটে রয়েছে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। বিরোধী দলগুলো এই দুর্দশার জন্য প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে এবং তার বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসেকেই দায়ী করছেন।

গত কয়েক মাস ধরে জনবিক্ষোভের মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে পরিবারের কয়েক সদস্যকে বাদ দেন মাহিন্দা। কিন্তু তাতেও বিক্ষোভ থামছিল না।

রোববার বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ডাকে নজিরবিহীন এক হরতালে গোটা দেশ অচল হয়ে পড়ার পর মাহিন্দার পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়ালেও নিশ্চিত খবর মিলছিল না।

সোমবারও রাজধানী কলম্বোজুড়ে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ চলার মধ্যে শ্রীলঙ্কার সংবাদপত্র ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা।

পাশাপাশি স্বাস্থ্যমন্ত্রী চান্না জয়াসুমানা এবং শ্রমমন্ত্রী বিদুরা বিক্রমানায়েকেও পদত্যাগ করেছেন বলে সংবাদপত্রটি জানায়।

শ্রীলঙ্কার পদত্যাগকারী প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। ছবি: রয়টার্স

শ্রীলঙ্কার ডেইলি মিররের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার এক বিশেষ বৈঠকে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া দেশজুড়ে চলা রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে বড় ভাই মাহিন্দাকে পদত্যাগ করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন, তার কয়েকদিনের মধ্যেই সাড়া দিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করায় প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া একটি সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য পার্লামেন্টে থাকা সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে বিরোধী এসজেবি পার্টি নিশ্চিত করেছে, তাদের নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা সম্ভাব্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না।

কলম্বোয় সরকারবিরোধীদের গুরুত্বপুর্ণ একটি বিক্ষোভস্থলে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের হামলার পরপরই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর আসে।

ভারতের সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি জানায়, সকালে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে ক্ষমতাসীন দলের একদল সমর্থক জড়ো হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ না করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। এরপর প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দার সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়। এই বৈঠক শেষ করে মিছিল করে গিয়ে প্রেসিডেন্ট দপ্তরের সামনে অবস্থানরত সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের উপর হামলা চালায় তারা।

তারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠি ও লোহার পাইপ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। হামলকারীদের সেখান থেকে সরাতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে।

বিবিসি জানিয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের এ হামলার ঘটনার পর দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

তবে বুধবার পর্যন্ত কারফিউ জারির পর পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার খবর মিলছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে কুরুনাগেলা শহরে রাজাপাকসের পৈত্রিক বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। ওই শহরে সাবেক মন্ত্রী জনস্টেন ফার্নান্দোর একটি বারও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কলম্বোয় সরকারবিরোধীদের গুরুত্বপুর্ণ একটি বিক্ষোভস্থলে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের হামলার ঘটনা ঘটে। ছবি: রয়টার্স

কলম্বোয় এমপি মাহিপালা হেরাথ, জানাকা বান্দ্রার বাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষোভকারীরা।

এনডিটিভি জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা দুই এমপির পাশাপাশি সাবেক তিন মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন দিয়েছে।

এমপি সনাথ নিশানথার বাড়িতে আগুন দেওয়ার পর জ্বলন্ত ঘর থেকে আগুনের শিখা উঠতে দেখা গেছে ভিডিওতে।

আরেকটি ভিডিওতে শ্রীলংকার রাজনৈতিক দল এসএলপিপি’র রাজনীতিবিদদের বাড়িঘর এবং যানবাহনে বিক্ষোভকারীদেরকে আগুন দিতে দেখা গেছে।

বিক্ষুব্ধ জনতা প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবি করলেও তিনি ক্ষমতা ছাড়তে নারাজ।

বিবিসি লিখেছে, অর্থনৈতিক সঙ্কট মানুষের জীবন সঙ্গিন করে তোলায় শ্রীলঙ্কার মানুষ বিক্ষোভে নেমেছে।

গত এক বছরে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। খাবার, জ্বালানি সঙ্কট তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে পর্যটন থেকে আয় তলানিতে নামার পর ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরু হলে শ্রীলঙ্কার সঙ্কট প্রকট হয়ে দেখা যায়।

শ্রীলঙ্কার বড় সঙ্কট হয়ে এসেছে হাতে বৈদেশিক মুদ্রা ডলার না থাকা। এজন্য সরকার মহামারীকে দায়ী করলেও বিশেষজ্ঞরা দুষছেন অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাকে।

শ্রীলঙ্কা সরকার এখন ৫১ বিলিয়ন দেনার ভারে ডুবতে বসেছে। ঋণের কিস্তি হিসেবে দেশটির এই বছর ৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের কথা থাকলেও ওই অর্থও দেশটির হাতে নেই।

বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কা সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে হাত পাতলেও তেমন সাহায্য পায়নি।