চলমান বিক্ষোভের মধ্যে নীতি পুলিশ বিলুপ্ত করছে ইরান

মাশা আমিনি নামের তরুণীর নীতি পুলিশের হেফাজতে মারা যাওয়া নিয়ে ইরানে দু’মাস ধরে বিক্ষোভ চলছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2022, 03:30 PM
Updated : 4 Dec 2022, 03:30 PM

ইরানে দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভের পর নীতি পুলিশ ব্যবস্থা বিলুপ্ত করার কথা জানিয়েছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জাফর মোনতেজারি।

তিনি বলেন, ‘‘ইরানের বিচার বিভাগের সঙ্গে নীতি পুলিশের কোনো সম্পর্ক নেই এবং এটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।”

রোববার এক ধর্মীয় সমাবেশে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, নীতি পুলিশ বন্ধ করা হচ্ছে কিনা? জবাবে তিনি ওই মন্তব্য করেন।

তবে মোনতাজেরির এই মন্তব্য এখনও অন্য কোনও সংস্থা নিশ্চিত করেনি বলে জানিয়েছে বিবিসি।

বিষয়টি নিশ্চিত হলে এটি কর্তৃপক্ষের ছাড় হিসাবে বিবেচিত হবে। তবে বিক্ষোভ বন্ধে এ পদক্ষেপ যথেষ্ট হবে কিনা তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।

ইরানের কট্টরপন্থি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের আমলে দেশটিতে নীতি পুলিশি ব্যবস্থা চালু হয়। তখন বলা হয়েছিল, তারা ‘শালীনতা ও হিজাবের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে’ এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

দেশটিতে ২০০৬ সালে নীতি পুলিশ ইউনিট যাত্রা শুরু করেছিল। এ বছর ১৬ সেপ্টেম্বর মাশা আমিনি নামে ২২ বছরের এক কুর্দি তরুণী তেহরানে নীতি পুলিশের হেফাজতে মারা যান।

মারা যাওয়ার তিনদিন আগে ভাইয়ের সঙ্গে তেহরান গিয়ে নীতি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন মাশা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি হিজাব ঠিকমত পরেননি।

মাশার পরিবারের দাবি, গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ মাশার মাথায় তাদের লাঠি দিয়ে একাধিকবার আঘাত করে এবং তাদের গাড়িতে মাশার মাথা জোরে ঠুকে দেয়। আর তাতেই অজ্ঞান হয়ে কোমায় চলে যান মাশা।

হাসপাতালে তিনদিন কোমায় থাকার পর মারা যান ওই তরুণী। পুলিশের দাবি তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

১৭ সেপ্টেম্বর নিজ শহরে দাফন মাশার হয় এবং তার দাফনের পর মাশার মৃত্যুর বিচার চেয়ে সেখানে বিক্ষোভ হয়।

যে বিক্ষোভ একে একে পুরো ইরান জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ইরান সরকার কঠোর হাতে ওই বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করে। সরকার যত কঠোর হয়েছে বিক্ষোভে আগুন তত উসকে উঠেছে। এই বিক্ষোভে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখ করার মত।

বিক্ষোভে অনেক মানুষ প্রাণ হারান। মাশা আমিনি হত্যার বিচার চেয়ে শুরু হওয়া বিক্ষোভ নারীদের স্বাধীনতার অধিকারের দাবি এবং ইরানের বর্তমান সরকার বিরোধী বিক্ষোভে পরিণত হয়।

প্রথমে স্বীকার না করলেও ইরানের নিরাপত্তা ‍বাহিনী পরে স্বীকার করেছে, বিক্ষোভে তাদের সদস্যসহ মোট ২০০ জন নিহত হয়েছেন।

যদিও জাতিসংঘ ও একাধিক মানবাধিকার সংস্থা বলছে, তৃতীয় মাসে পড়া এ বিক্ষোভ এরই মধ্যে তিনশর বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।

দেশের বাইরেও ইরানের চলমান বিক্ষোভের পক্ষে জনমত গড়ে উঠেছে। অনেকেই প্রকাশ্যে বিক্ষোভের পক্ষে তাদের সমর্থন জানাচ্ছেন।

এ পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার মোনতাজেরি বলেছিলেন, নারীদের মাথা ঢেকে রাখা বিষয়ক আইনে কোনও পরিবর্তন প্রয়োজন কিনা সে বিষয়টি নিয়ে ইরানের ‘পার্লামেন্ট এবং বিচার বিভাগ উভয়ই কাজ করছে’।

শনিবার দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিও টেলিভিশনে এক বক্তৃতায় বলেন, ইরানের প্রজাতন্ত্র ও ইসলামিক বুনিয়াদ সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত।

Also Read: বিক্ষোভে ২০০ মৃত্যুর কথা স্বীকার করল ইরানি কর্তৃপক্ষ

‘‘কিন্তু সংবিধান বাস্তবায়নের যে পদ্ধতি রয়েছে সেখানে নমনীয় হওয়া যেতে পারে।”

১৯৭৯ ‍সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইরানে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সরকারকে উৎখাত করে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার পর নারীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়।

১৫ বছর আগে নীতি পুলিশ নারীদের হিজাবের বিষয়ে সতর্ক করা দিয়ে তাদের কাজ শুরু করেছিল; যেটা কালে কালে ধরপাকড় ও গ্রেপ্তার করা পর্যন্ত পৌঁছায়।

সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির আমলে নারীদের পোশাকের বিষয়ে কড়াকড়ি খুব একটা দেখা যায়নি।

কিন্তু চরম কট্টর রাইসি গত জুলাইয়ে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর ইরানের সব রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে হিজাব আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দেন।