বিক্ষোভে ২০০ মৃত্যুর কথা স্বীকার করল ইরানি কর্তৃপক্ষ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা একটি ভিডিওতে ইরানের কর্তৃপক্ষকে ক্লাইম্বার এলনাজ রেকাবির পৈত্রিক বাড়ি গুড়িয়ে দিতেও দেখা গেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2022, 04:29 AM
Updated : 4 Dec 2022, 04:29 AM

নিরাপত্তা হেফাজতে এক নারীর মৃত্যুর পর ইরানজুড়ে শুরু হওয়া ব্যাপক অস্থিরতায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ ২০০ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে দেশটির শীর্ষ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ।

যদিও জাতিসংঘ ও একাধিক মানবাধিকার সংস্থা বলছে, তিন মাসে পড়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভে এরই মধ্যে তিনশর বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।

এদিকে শনিবার দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান নাগরিকদের অধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিচ্ছে; তিনি দেশটির এখনকার শাসনকাঠামোরও গুণগান গেয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ঘরের বাইরে নারীরা বাধ্যতামূলক হিজাব পরার নীতি মানছে কিনা, তা দেখভালের দায়িত্বে থাকা নীতি পুলিশের হেফাজতে ২২ বছর বয়সী কুর্দি নারী মাশা আমিনির মৃত্যু সেপ্টেম্বরের শেষদিক থেকে ইরানের অসংখ্য শহরে হিজাববিরোধী বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটায়; পরে একপর্যায়ে তা সরকারবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভে রূপ নেয়।

এতে ইরানের সমাজের সর্বস্তরের মানুষ অংশ নিলে এবারের বিক্ষোভ ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর দেশটির মোল্লাতন্ত্রের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা একটি ভিডিওতে ইরানের কর্তৃপক্ষকে ক্লাইম্বার এলনাজ রেকাবির পৈত্রিক বাড়ি গুড়িয়ে দিতে দেখা গেছে।

অক্টোবরে একটি আন্তর্জাতিক ক্লাইম্বিং প্রতিযোগিতায় এলনাজকে মাথায় স্কার্ফ পরা ছাড়াই খেলতে দেখা গিয়েছিল।

অনেকেই একে বিক্ষোভের প্রতি তার সমর্থন বলে ধরে নিলেও এলনাজ পরে বলেছিলেন, মাথায় স্কার্ফ না পরা ‘উদ্দেশ্যমূলক ছিল না’।

ইরানের উত্তরপশ্চিম প্রদেশ জানজানের বিচারবিভাগের প্রধান শনিবার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, এলনাজের পরিবার স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি পেতে ব্যর্থ হওয়ায় ৪ মাস আগেই ওই ভিলাটি গুড়িয়ে দেওয়ার আদেশ জারি হয়েছিল।

রয়টার্স জানিয়েছে, ইরানি কর্তৃপক্ষের ব্যাপক দমনপীড়নের মধ্যেও বিক্ষোভকারীরা দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল খোমেনির বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন; ইসলামী সরকার ব্যবস্থার অবসানে বারবার দাবিও জানাচ্ছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা এক ভিডিওতে পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা হাফত হাউজসহ রাজধানী তেহরানের একাধিক এলাকায় শনিবারও বিক্ষোভ হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে।

যদিও ওই ফুটেজটির সত্যতা তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।

দেশটির কর্তৃপক্ষ ইরানজুড়ে চলা কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও ইসরায়েলসহ বিদেশি শত্রুদের দায়ী করে আসছে।

শনিবার পার্লামেন্ট সদস্যদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট রাইসি জানান, কয়েকবছর আগে দেখা হওয়া এক আফ্রিকান আইনজীবী তাকে বলেছিলেন- গণতন্ত্রের সঙ্গে আদর্শের মেলবন্ধন থাকায় বিশ্বের মধ্যে ইরানের সংবিধানই সবচেয়ে প্রগতিশীল।

“আমাদের সংবিধান ইসলামী ব্যবস্থার নিশ্চয়তা দেয়; একইসঙ্গে এটি মৌলিক অধিকার ও আইনি স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়,” বলেছেন তিনি।

ইরানের বিচারবিভাগ সংশ্লিষ্ট বার্তা সংস্থা মিজান জানিয়েছে, সাম্প্রতিক ‘দাঙ্গায়’ ২০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বলে স্বীকার করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল।

অথচ সোমবারই ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর ঊর্ধ্বতন এক কমান্ডার আমিরআলি হাজিজাদেহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ সাম্প্রতিক অস্থিরতায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বলেছিলেন।

জাতিসংঘের নিয়োগ দেওয়া ইরান বিষয়ক স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ জাভেদ রেহমান মঙ্গলবার বলেন, বিক্ষোভে তিনশর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৪০টি শিশুও আছে।

মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বার্তা সংস্থা এইচআরএএনএ শুক্রবার জানায়, তাদের হিসাবে ইরানে ৪৬৯ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে, যাদের ৬৪ জনই অপ্রাপ্তবয়স্ক।

বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর ৬১ সদস্যও মারা পড়েছে বলে জানিয়েছে তারা। গ্রেপ্তার হয়েছে ১৮ হাজার ২১০ বিক্ষোভকারী।

এদিকে সুপরিচিত বালুচ মৌলভী আবদুলহামিদ গত মাসের শেষদিকে ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে দমনপীড়ন, হত্যা ও গ্রেপ্তার বন্ধে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন; তিনি ইরানের সরকারব্যবস্থার পরিবর্তনে গণভোট আয়োজনেরও দাবি জানান।

“গত ৪৩ বছর ধরে চলে আসা নীতি যে অচল হয়ে পড়েছে, জনগণের এই বিক্ষোভ তাই দেখাচ্ছে,” বলেছিলেন তিনি।