আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা দেখলেন কিম, সঙ্গে কন্যা

শুক্রবার পিয়ংইয়ং তাদের আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হোয়াসং-১৭’র পরীক্ষা চালায়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2022, 08:04 AM
Updated : 19 Nov 2022, 08:04 AM

উত্তর কোরিয়ার নতুন আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা পরিদর্শনে গিয়ে দেশটির শীর্ষ নেতা কিম জং উন পারমাণবিক অস্ত্র দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক হুমকি মোকাবেলার অঙ্গীকার করেছেন।

শনিবার দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কেসিএনএ কিমের এ অঙ্গীকারের কথা জানায় বলে খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।

বৃহস্পতিবার কোরীয় উপদ্বীপ ও এর আশপাশের অঞ্চলে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনসহ নিজেদের নিরাপত্তা উপস্থিতি জোরদার করার ঘোষণা দেয় ওয়াশিংটন। এর প্রতিক্রিয়ায় ‘কঠোর সামরিক জবাবের’ হুঁশিয়ারি দেওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে একটি স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে উত্তর কোরিয়া।

পরদিন শুক্রবার পিয়ংইয়ং তাদের আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হোয়াসং-১৭’র পরীক্ষা চালায়।

সেই উৎক্ষেপণ কিম তার ‘স্ত্রী ও মেয়েকে’ নিয়ে দেখেছেন বলে শনিবার জানিয়েছে কেসিএনএ। মেয়ের সঙ্গে কিমের ছবিও প্রকাশ করেছে তারা। 

এ ছবির মাধ্যমেই কিমের মেয়েকে প্রথমবার প্রকাশ্যে দেখা গেল, বলছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

কিমের এ মেয়ের নাম কিম চুয়ে এবং তার জন্ম ২০১৩ সালে বলেও ধারণা দিয়েছে তারা।

সাদা জ্যাকেট ও লাল জুতা পরিহিত কিমের মেয়ে বাবার সঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন এবং পরে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষায় আনন্দে উদ্বেলিত হন।

মেয়েকে নিয়ে প্রথমবার উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে যাওয়া কিম বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের বৈরি নীতির ফলে সৃষ্ট হুমকির কারণেই তার দেশকে তাদের ‘অনন্য পারমাণবিক প্রতিরোধ জোরদার উল্লেখযোগ্যভাবে ত্বরান্বিত’ করতে হয়েছে। 

“কিম জং উন দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেছেন যে, যদি শত্রুরা তাদের হুমকি অব্যাহত রাখে, তাহলে আমাদের দল ও সরকার পারমাণবিক অস্ত্র দিয়েই পারমাণবিক শক্তির প্রতিক্রিয়া দেখাবে এবং সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে,” বলেছে কেসিএনএ।

হোয়াসং-১৭ এর উৎক্ষেপণকে ‘সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রবল পারমাণবিক প্রতিরোধ’ সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া প্রতিরক্ষা নির্মাণ কৌশলের’ অংশ বলেছে উত্তর কোরিয়ার এ রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা; তারা একে ‘বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর কৌশলগত অস্ত্র’ বলেও অভিহিত করেছে।

শুক্রবার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি ৬০৪১ কিলোমিটার উচ্চতায় উঠে এবং ৬৯ মিনিটে প্রায় ১০০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়, বলেছে কেসিএনএ।

এর আগে জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসুকাজু হামাদা বলেছিলেন, উত্তর কোরিয়ার এ হোয়াসং ক্ষেপণাস্ত্রটি ১৫ হাজার কিলোমিটারের মতো পথ পাড়ি দিতে সক্ষম বলেই তারা মনে করছেন।

বৃহস্পতিবার উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চোয়ে সন হুই রোববার যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ত্রিদেশীয় সম্মেলনের ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করে পিয়ংইয়ংয়ের ‘কঠোর প্রতিক্রিয়ার’ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

ওই ত্রিদেশীয় সম্মেলনে নেতারা উত্তর কোরিয়ার চলমান ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সমালোচনা করে নিজেদের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন।

চোয়ে তাদের একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষার জন্য কোরীয় উপদ্বীপের আশপাশে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের যৌথ সামরিক মহড়া এবং ওই অঞ্চলে মার্কিন নিরাপত্তা উপস্থিতি জোরদারের প্রচেষ্টাকে দায়ী করেন।  

যে কোনো পারমাণবিক হুমকির মোকাবেলায় ‘আরেকটি বিশ্বাসযোগ্য ও সর্বোচ্চ সক্ষমতার’ প্রদর্শনী হোয়াসং-১৭ এর পরীক্ষার মাধ্যমে দেখানো হল, বলেছেন কিম।

এমন এক সময়ে এ পরীক্ষা হল যখন উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা ওয়াশিংটন ও এর মিত্রদেরকে পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে যে কোনো সামরিক পদক্ষেপ যে তাদের জন্যই ‘আত্মবিধ্বংসী’ হবে, সে বিষয়ে সাবধান করে দিতে চাইছেন।

“শত্রুদের হিস্টিরিয়াগ্রস্ত আগ্রাসী যুদ্ধমহড়ার জবাবের বিষয়ে দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির বিষয়টি স্পষ্ট করবে আমাদের দল ও সরকার।

“মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যত সামরিক ধাপ্পা দেবে, তাদের মিত্র ও যুদ্ধমহড়ায় ‘বর্ধিত প্রতিরোধ জোরদারের প্রস্তাবে’ নিবিষ্ট হবে, ডিপিআরকের সামরিক পাল্টা আক্রমণ তত বেশি হবে,” দেশের আনুষ্ঠানিক নামের আদ্যক্ষর ব্যবহার করে বলেছেন কিম।

উত্তর কোরিয়ার আনুষ্ঠানিক নাম ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়া, ব্যবহারের সুবিধার্থে অনেকেই একে ডিপিআরকে নামে ডাকে।

কেসিএনএ জানিয়েছে, কিম কৌশলগত অস্ত্রশস্ত্রের দ্রুত উন্নয়নসাধন এবং আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র ও কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ইউনিটের আরও নিবিড় প্রশিক্ষণের নির্দেশনা দিয়েছেন, যেন তারা ‘যে কোনো পরিস্থিতিতে, যে কোনো মুহূর্তে’ নির্ভুলভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে।

২০২০ সালের এক সামরিক কুচকাওয়াজে অবমুক্ত হোয়াসং-১৭ ক্ষেপণাস্ত্রটির প্রথম পরীক্ষা হয় চলতি বছরের মার্চে।

এটি পারমাণবিক ওয়ারহেড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনাকে ফাঁকি দিতে একাধিক ওয়ারহেড ও ডিকয় বহনের ব্যবস্থাও এতে আছে বলে অনুমান অনেকের।

যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে উত্তর কোরিয়া নিয়ে আলোচনা করতে সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো একত্রিত হবে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এরই মধ্যে উত্তরের সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কড়া প্রতিবাদও জানিয়েছে।

২০১৭ সালে পিয়ংইয়ং যেবার সর্বশেষ পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল, সেবার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাবে চীন, রাশিয়ারও সমর্থন ছিল। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী এই দুই সদস্য দেশ সর্বশেষ মে মাসে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের জন্য উত্তর কোরিয়ার ওপর আরও ব্যবস্থা নেওয়ার মার্কিন প্রস্তাবে ভিটো দিয়েছিল।

আন্তঃমহদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার সেই অস্ত্র, যেটি তাদের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূরের লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টালি অনুযায়ী, শুক্রবারেরটি নিয়ে এ বছরই পিয়ংইয়ং মোট ৮টি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাল।

তবে এগুলোর মধ্যে ৩ নভেম্বরেরটিসহ বেশ কয়েকটির পরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছে বলেও দাবি দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের।

৩ নভেম্বর মারা ওই আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি উঁচুতে ওঠার পর অকার্যকর হয়ে পড়ে, বলছে তারা।

আরও পড়ুন:

Also Read: জাপানের কাছে পড়ল উত্তর কোরিয়ার আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র

Also Read: ফের হুঁশিয়ারি দিয়ে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল উত্তর কোরিয়া