সিউলে হ্যালোউইন উৎসব যেভাবে পরিণত হল সত্যিকারের ভূতুড়ে রাতে

মৃতদেহের স্তূপ থেকে জীবিতদের বের করে আনার চেষ্টা করছিলেন উদ্ধারকর্মীরা। চারদিকে ভেসে আসছিল আর্তনাদ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2022, 03:10 PM
Updated : 30 Oct 2022, 03:10 PM

মহামারীর বিধিনিষেধ কাটিয়ে দীর্ঘদিন পর হ্যালোউইন উৎসবে মেতে উঠেছিল সিউলের লাখো মানুষ; বাঁধাভাঙা উচ্ছ্বাসে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকা তরুণ-তরুণীদের আনন্দের জোয়ার পৌঁছে যায় এক সংকীর্ণ গলিতে, সেখানে হঠাৎ পাল্টে যায় পরিস্থিতি।

সংকীর্ণ গলিতে প্রায় দশ হাজার মানুষ একসঙ্গে ঢুকে পড়ায় দমবন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়, ভিড়ের মধ্যে সামনে পেছনে দুই দিকের চাপে পদদলিত হয়ে একে একে সড়কে পড়তে থাকে নিথর দেহ।

রাফায়েল রশিদ নামের এক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক বিবিসিকে বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় ইতায়েওনে যা ঘটেছে, সে সময় কেউ তা বুঝে উঠতে পারেননি। কিছু পুলিশ তাদের গাড়ির উপর দাঁড়িয়ে সবাইকে ওই এলাকা ছেড়ে সরে যেতে বলছিল।

“আমি যতদূর দেখেছি, সেখানে অন্তত দশ হাজার মানুষ ছিল। এত বেশি মানুষ… আমরা ফুটপাতে পিষ্ট হয়ে যাচ্ছিলাম।”

প্রত্যক্ষদর্শী চিকিৎসক লি বিওম-সুক স্থানীয় সম্প্রচার মাধ্যম ওয়াইটিএনকে বলেন, সিপিআর (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) দিয়ে কয়েকজনকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়া মানুষের সংখ্যা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। অনেক দর্শনার্থীও ঘটনাস্থলে ছুটে এসে সিপিআরের মাধ্যমে আহতদের বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন।

তিন বছর পর এবারই প্রথম হ্যালোউইনে নানা রকম কস্টিউম পরে ইতায়েওনের সড়কে উৎসবে মেতেছিল সিউলের হাজার হাজার কিশোর ও তরুণ। পার্টিতে যোগ দিতে পেরে তাদের আনন্দ ছিল বাঁধভাঙা। কিন্তু প্রচণ্ড ভিড়ে ইতায়েওনের গলিতে দেড়শর বেশি মানুষের মৃত্যু হ্যালোউইনের রাতকে যেন সত্যিকারের ভূতুড়ে রাতে পরিণত করে।

ওই ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোর বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, সংকীর্ণ ঢালু গলিটি এতই জনাকীর্ণ ছিল যে লোকজনের নড়ার উপায় ছিল না। ভিড়ের চাপে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসার অবস্থা ছিল সরবার। হ্যালোউইনের রাতে ভর করেছিল বাস্তব আতঙ্ক।

মৃতদেহের স্তূপ থেকে জীবিতদের বের করে আনার চেষ্টা করছিলেন উদ্ধারকর্মীরা। চারদিকে ভেসে আসছিল আর্তনাদ। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, তার মনে হচ্ছিল, কোনো যুদ্ধের সিনেমার মধ্যে পড়ে গেছেন।

ভয়ঙ্কর ওই পরিস্থিতি থেকে বেঁচে যাওয়া এক নারী বলেন, “আমার মত একজন খাটো মানুষও শ্বাস নিতে পারছিল না। গলির মাঝখানে থাকা সবাই তখন হাঁসফাঁস করছিল। গলির এক কিনারে থাকায় আমি বেঁচে গেছি।”

২১ বছর বয়সী পার্ক জং-হুন বিবিসিকে বলেন, সেখানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল।

সমবয়সী মুন জু-ইয়ং বলেন, “অনেক বেশি লোক ছিল, আর প্রচণ্ড ভিড় ছিল। আমি জানি পুলিশ ও উদ্ধারকারীরা কঠোর পরিশ্রম করছেন, কিন্তু আমি বলব, উৎসব উদযাপনের প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল।”

ইতায়েওন এলাকা রাতের উৎসবের জন্য বিখ্যাত। প্রত্যেক সপ্তাহান্তে স্থানীয় ও বিদেশিরা সেখানে জমায়েত হন। আর হ্যালোউইনের রাতে বছরের সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় সেখানে।

৫৩ বছর বয়সী ইতায়েওনের লি সু-মি রয়টার্সকে বলেন, “ওই তরুণরা, যাদের বলা হয় কোভিড জেনারেশন, প্রথমবারের মতো তারা হ্যালোউইন উদযাপন করার সুযোগ পেয়েছিল। সেই উৎসবে যে এরকম বিপর্যয় নেমে আসবে, কেউ কল্পনাও করেনি।”

ইতায়েওনে যারা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগই কিশোর বা বয়স ২০ এর কোঠায়। তাদের মধ্যে ১৯ জন বিদেশিও রয়েছেন।

বলা হচ্ছে, ২০১৪ সালের পর সিউলে এটি সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা। এর আগে ফেরি ডুবে সেখানে ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

এ ঘটনায় জরুরি বৈঠক করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক-ইয়ল। দেশে শোক ঘোষণা করার পাশাপাশি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন, আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “এটা সত্যিই বেদনাদায়ক। এই ট্র্যাজেডি, বিপর্যয়, গত রাতে সিউলের কেন্দ্রস্থলে যেটা ঘটে গেল, এটা হওয়া উচিত ছিল না।”

আরও খবর

হ্যালোউইনে পদদলনে মৃত্যু বেড়ে ১৫১, দক্ষিণ কোরিয়ায় শোক