দ্রৌপদীর লড়াইটা এই যশবন্ত সিনহার সঙ্গে। তবে দ্রৌপদী বিজেপি’র সমর্থন পাওয়ায় তারই রাষ্ট্রপতি হওয়ার সম্ভাবনা একটু বেশি।
সাবেক শিক্ষক ৬৪ বছর বয়সের দ্রৌপদী ওড়িশার মেয়ে। গত কয়েক দশক ধরে তিনি বিজেপি’র জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি প্রাদেশিক গভর্নর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
যদি দ্রৌপদী নির্বাচিত হন, তবে তিনি হবেন ভারতের প্রথম আদিবাসী নারী যিনি দেশটির সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হবেন। ভারতে প্রেসিডেন্ট পদটি অনেকটা অলঙ্কারিক। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ হলেও দেশ পরিচালনায় প্রেসিডেন্টের তেমন কোনো ভূমিকা নেই।
ভারতের পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সদস্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর প্রতিনিধিদের ভোটে একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোটে জেতাতে বিজেপির হাতে যথেষ্ট ভোট আছে। দ্রৌপদীর বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, তার ‘বিশ্বাস আছে’ তিনি (দ্রৌপদী) একজন ‘অসাধারণ প্রেসিডেন্ট’ হবেন।
বিবিসি জানায়, বিজেপির পার্লামেন্টারি বোর্ড নিজেদের মধ্যে একটি বৈঠক শেষে মঙ্গলবার তাদের পছন্দের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দ্রৌপদী মুর্মুর নাম ঘোষণা করে।
বিজেপি প্রেসিডেন্ট জেপি নাড্ডা বলেন, বিজেপি এবং তাদের মিত্রদের কাছ থেকে ২০ জনের নামের প্রস্তাব এসেছিল। আলোচনার মাধ্যমে তাদের মধ্য থেকে দ্রৌপদী মুর্মুকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
দ্রৌপদী নিজে তার মনোনয়ন পাওয়ার খবর টেলিভিশন থেকে পান বলে বিবিসি-কে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এ খবর তাকে একইসঙ্গে ‘বিস্মিত’ এবং ‘আনন্দিত’ করেছে।
পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘ময়ুরভাঞ্জ জেলার মত একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন আদিবাসী নারী হিসেবে আমি দেশের সর্বোচ্চ পদের জন্য একজন প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারব এমনটা আগে ভাবিনি।”
ওড়িশার সব রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দ্রৌপদীর মনোনয়নকে স্বাগত জানানো হয়েছে। তারা তাকে ‘মাটির মেয়ে’ বলে বর্ণনা করেছে। দ্রৌপদী বলেন, ওড়িশার সব আইনপ্রণেতার সমর্থন তাকে ‘আশাবাদী’ করে তুলেছে।
বিরোধী দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সেই যশবন্ত সিনহাও একসময় বিজেপি নেতা ছিলেন। অটল বিহারি বাজপেয়ীর আমলে তিনি বিজেপি সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী ছিলেন। তবে তিনিই এখন বিজেপি এবং মোদীর কট্টর এবং সক্রিয় সমালোচকদের একজন।
যশবন্ত অবশ্য বিরোধী দলের প্রথম পছন্দ ছিলেন না। তারা প্রথমে শরদ পাওয়ার, ফারুক আব্দুল্লাহ এবং মহাত্মা গান্ধীর নাতি গোপালকৃষ্ণ গান্ধীকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তারা সবাই সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
আগামী ১৮ জুলাই ভারতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে এবং ২১ জুলাই ফল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রাম নাথ কোভিন্দের স্থলাভিষিক্ত হবেন। আগামী ২৪ জুলাই প্রেসিডেন্ট রাম নাথ কোভিন্দের মেয়াদ শেষ হবে।
দ্রৌপদী মুর্মু আলোচনায় ২০১৭ থেকেই
১৯৫৮ সালের ২০ জুন ময়ুরভাঞ্জ জেলার বাইদাপোসি গ্রামে জন্মগ্রহণ করনে দ্রৌপদী মুর্মু। তিনি ভারতের সবথেকে প্রাচীন এবং বৃহৎ আদিবাসী গোষ্ঠী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মেয়ে।
একটি গ্রামের গ্রাম প্রধানের মেয়ে দ্রৌপদী রাজ্যের রাজধানী ভূবনেশ্বরের রামাদেবী উইমেন্স কলেজে লেখাপড়া করেছেন।
ওড়িশা রাজ্য সরকারের একজন কেরানি হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি রাজ্যের কৃষি ও জ্বালানি অধিদপ্তরে একজন জুনিয়র এসিস্টেন্ট হিসেবেও কাজ করেছেন।
১৯৯৪-৯৭ সাল পর্যন্ত রাইরংপুরে শ্রী অরবিন্দ ইনটেগরাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে শিক্ষকতাও করেছেন তিনি।
দ্রৌপদীর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। সেবার তিনি রাইরংপুরে স্থানীয় নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
বিজেপির হয়ে রাইরংপুর আসন থেকে তিনি ২০০০ ও ২০০৯ সালে দুইবার বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০০-২০০৪ সালে তিনি রাজ্যের জোট সরকারের একজন মন্ত্রীও ছিলেন।
প্রথমে বাণিজ্য ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করলেও পরে তিনি মৎস ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয় সামলান। ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি রাজ্য বিজেপির ‘পিছিয়ে পড়া আদিবাসী’ শাখার প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
ঝাড়খণ্ড রাজ্যের প্রথম নারী রাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর ২০১৫ সালে তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে বিদায় নেন। দ্রৌপদী ওড়িশার প্রথম আদিবাসী নেত্রী যিনি রাজ্যপালের দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত টানা ছয় বছর তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। বিবিসি জানায়, দ্রৌপদী মুর্মু বেশ সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার কার্যালয়ের দরজা সব সময় সব শ্রেণীর মানুষের জন্য খোলা থাকত।