প্রেসিডেন্ট পালালেও শ্রীলঙ্কা সঙ্কটেই

জনরোষে প্রধানমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রী পদ ছাড়ার পর এবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে পালালেও দেশটিতে সঙ্কট উত্তরণের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2022, 07:39 PM
Updated : 14 July 2022, 05:08 AM

কয়েকদিন আগে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ দখল করার পর এবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও ঢুকে পড়েছে। তারা পার্লামেন্ট ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েও বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে।

গোটাবায়া বুধবার মালদ্বীপে পালিয়ে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দিয়ে গেছেন।

বিক্ষোভ সামলাতে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন রনিল, বলবৎ হয়েছে কারফিউ। বিক্ষোভকারীদের থামাতে সেনাবাহিনীকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

তবে সেনাবাহিনীকে সেই নির্দেশ পালন না করার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির সাবেক সেনাপ্রধান শরৎ ফনসেকা, যিনি সেনাপ্রধান হিসেবে তামিল টাইগার দমন করে বীরের স্বীকৃতি পেলেও পরে রাজাপাকসের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েন।

ফনসেকার মতো শ্রীলঙ্কার বিরোধীদলীয় নেতা সাজিথ প্রেমাদাসাও মাত্র দুজন ব্যক্তিকে রক্ষা না করে দেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে রনিলের প্রতি বিক্ষোভকারীদের অনাস্থা ফুটে উঠেছে। বিরোধী দলগুলো এখন রনিলকেই বিদায় নিতে বলছেন।

স্বাধীনতার পর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়া শ্রীলঙ্কায় জনবিক্ষোভ প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে।

এক সময়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশটিতে চলছে খাদ্য সঙ্কট। জ্বালানি তেল কিনতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে মৃত্যুও হয়েছে কয়েকজনের। ওষুধসহ নিত্যপণ্যের সঙ্কটে জনজীবন বিপর্যস্ত।

দেশের এ পরিস্থিতির জন্য প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে এবং তার পরিবারকে দায়ী করে আসছে শ্রীলঙ্কার বিক্ষোভকারীরা। গত দুই দশক ধরে এই দ্বীপ রাষ্ট্রটির ক্ষমতায় রয়েছে রাজাপাকসে পরিবার, যাদের উৎখাতে এবার মাঠে নেমেছে লাখো বিক্ষোভকারী।

প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ বেদখল হওয়ার পর বুধবার প্রথম প্রহরে দেশ ছাড়েন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। স্ত্রীকে নিয়ে সামরিক একটি বিমানে চড়ে তিনি মালদ্বীপে গেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

সেখান থেকে তিনি সিঙ্গাপুরে যাওয়ার গুঞ্জন ছড়ালেও সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো খবর মেলেনি।

ছবি: রয়টার্স

তবে প্রতিবেশী দেশটিতে অবস্থানরত শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা বিক্ষোভ করেছেন বলে সিএনএন জানিয়েছে। রাজপাকসেদের আশ্রয় না দিতে মালদ্বীপ সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে তারা।

রাজাপাকসের পালানোর পরও বিক্ষোভ থামেনি কলম্বোয়। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ার পর দমবন্ধ হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে শ্রীলঙ্কার সংবাদপত্র ডেইল মিরর।

এদিকে গোটাবায়া মালদ্বীপে পালিয়ে গেলে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে প্রধানমন্ত্রী রনিলকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। পরে তাকে দায়িত্ব হস্তান্তরের গেজেটও প্রকাশিত হয়।

তবে আনুষ্ঠানিক পদত্যাগপত্র দেওয়ার বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি, যা বুধবারই আসবে বলে স্পিকার জানিয়েছিলেন।  

এদিকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টর দায়িত্ব নেওয়ার পর এক টেলিভিশন বক্তৃতায় বিক্ষোভকারীদের ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করেন রনিল। তিনি সেনাবাহিনীর উদ্দেশে বলেন, “শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য যা যা করা দরকার, তাই করুন। আমরা আমাদের সংবিধানকে ছিন্ন করতে পারি না।

“আমরা ফ্যাসিস্টদের ক্ষমতা দখল করতে দিতে পারি না। আমাদের গণতন্ত্রের জন্য এই ফ্যাসিবাদী হুমকির অবসান ঘটাতে হবে।”

রনিল বিক্রমাসিংহে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ভবন দখলকারী বিক্ষোভকারীদের সেগুলো ছেড়ে যেতে বলেন এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।

সারা দেশে জরুরি অবস্থা জারি এবং পশ্চিম প্রদেশে কারফিউ জারির পাশাপাশি কিছু আদেশ জারি করেন রনিল বিক্রমাসিংহে।

ছবি: রয়টার্স

তবে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে দমন-পীড়নের মাধ্যমে নস্যাৎ করার চেষ্টার অভিযোগ তোলেন বিরোধী নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা। 

সমাগি জন বলভেগায়া (এসজেবি) দলের প্রধান সাজিথ এক বিবৃতিতে বলেন, “ক্ষমতা লোভী প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন গ্যাংয়ের ছলচাতুরি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে, আর ছলচাতুরি করার সুযোগ নেই।” 

গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াইরত জনগণের বিরুদ্ধে না যেতে সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে শ্রীলঙ্কার বিরোধী দলীয় নেতা সরকারের প্রতি শান্তিপূর্ণ জনগণের জীবন নিয়ে না খেলার আহ্বান জানান।

এরপর স্পিকারের নেতৃত্বে এক বৈঠক থেকে রনিলকে অবিলম্বে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয় বলে শ্রীলঙ্কার সংবাদপত্র ডেইলি মিরর জানিয়েছে।

শুক্রবার শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের অধিবেশন বসার কথা রয়েছে। গোটাবায়ার আনুষ্ঠানিক পদত্যাগপত্র পেলে ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রস্তাব গ্রহণ হবে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ২০ জুলাই এমপির ভোটাভুটি হবে।

তবে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ না করলে সঙ্কট থেকেই যাবে বলে শঙ্কা করছেন বিরোধী এমপিরা।