পেলোসি তাইওয়ানে: উত্তেজনার পারদ চড়ল এবার পূর্বেও

ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানে পা রাখার পরপরই সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছে চীন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2022, 07:44 PM
Updated : 2 August 2022, 07:44 PM

নেটো আর রাশিয়ার বিবাদে পশ্চিমে উইক্রেইন হয়েছে রণাঙ্গন, তারমধ্যে ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর পূর্বেও যুদ্ধের দামামা বাজার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

এখানেও এক দিকে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার প্রশান্ত মহাসাগরীয় মিত্ররা, অন্যদিকে চীনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ইউক্রেইনে আগ্রাসন চালানো রাশিয়া।

চীনের হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য করে মঙ্গলবার রাতে তাইওয়ানে পা রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার পেলোসি।

২৫ বছরের মধ্যে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের কোনও স্পিকার এই প্রথম তাইওয়ানে গেলেন, যে দ্বীপটিতে চীন নিজেদের অংশ বলেই দাবি করে।

পেলোসি এশিয়ার সফরে তাইওয়ানে যাবেন, এমন খবর ফাঁস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেইজিং হুঁশিয়ার করেছিল, ওয়াশিংটন ‘আগুন নিয়ে খেলছে’।

কিন্তু তা উপেক্ষা করে পেলোসি তাইপেতে নামলেন। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে পেলোসিকে যখন হোটেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন হোটেলের বাইরে চীনের পক্ষে বিক্ষোভ চলছিল বলে বিবিসি জানিয়েছে।

Also Read: পেলোসি তাইওয়ানে গেলে ‘পরিণতি মারাত্মক’ হবে: চীন

কমিউনিস্ট চীনের বিপরীতে দাঁড়িয়ে তাইওয়ানের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি সমর্থন জানাতে এই সফর করছেন পেলোসি।

সংক্ষিপ্ত এই সফরে বুধবার সকালে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইঙ্গ-ওয়েনের সঙ্গে বৈঠক করবেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট নেতা। দুপুরের পরপরই তিনি তাইপে ছাড়বেন।

পেলোসি এবং তার সফরসঙ্গী প্রতিনিধি দলের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাইওয়ানের ‘প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের প্রতি’ যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় সমর্থনের ‘প্রতিশ্রুতির সম্মানার্থেই’ এই সফর।

“তাইওয়ানের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় এই অংশীদারের প্রতি আমাদের সমর্থন আরও মজবুত করাসহ আমাদের অভিন্ন স্বার্থের বিষয়টিতে অগ্রগতি সাধন এবং মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের পথে এগুনোর দিকে মনোনিবেশ করা হবে।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “বিশ্বে স্বৈরতন্ত্র এবং গণতন্ত্রের মধ্যে কোনও একটিকে বেছে নেওয়ার এই সময়ে তাইওয়ানের জনগণের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একাত্মতা আজ আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”

তাইওয়ানের সরকারি সংবাদ সংস্থা লিখেছে, পেলোসির এই সফর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক গভীর করবে বলে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট মনে করেন। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতিশীলতাই চায় তাইওয়ান।

তবে প্রশান্ত মহাসাগরের এই অঞ্চলটিতে যখন পরাশক্তিগুলোর মহড়ায় বরাবরই অস্থিতিশীল, তখন পেলোসির এই সফর তা আরও চরমে তোলার ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

বিবিসি’র চীন প্রতিনিধি স্টেফান ম্যাকডনেল লিখেছেন, পেলোসি তাইওয়ান সফরে গেলে চীন যেমন সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখানোর কথা বলছিল, তেমনটাই দেখা যাচ্ছে।

পেলোসি তাইপেতে নামা মাত্রই চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থার খবর দেওয়া হয় যে তাদের ফাইটার জেটগুলো তাইওয়ান প্রণালীর উপর মহাড়া দিয়েছে।

এর পরপরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং টুইট করেন, আত্মরক্ষার জন্য এগিয়ে যেতে চীনকে বাধ্য করা হচ্ছে।

পেলোসির সফরের প্রতিক্রিয়ায় চীনের নেওয়া যে কোনো পদক্ষেপ এখন যৌক্তিকতা পাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

চীনের সামরিক বাহিনী গণমুক্তি ফৌজ তাইওয়ান সংলগ্ন উপকূলে সমরসজ্জা বাড়িয়েছে বলেও খবর এসেছে।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা দপ্তরের উদ্ধৃতি দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, ২১টি চীনা যুদ্ধবিমান তাইওয়ানের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে।

চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা মঙ্গলবার রাত থেকেই তাইওয়ানের কাছে যৌথ সামরিক মহড়া পরিচালনা করবে। একই সঙ্গে তারা তাইওয়ানের পূর্বে সমুদ্রে প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষাও চালাবে।

তাইওয়ানের উত্তর, দক্ষিণ-পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যৌথভাবে আকাশ ও সমুদ্রে চীনের ওই মহড়া চলবে। তাইওয়ান প্রণালীতে দীর্ঘ পাল্লার ‘লাইভ ফায়ারিং’ করা হবে।

এদিকে পেলোসির সফর ঘিরে সেখানে মার্কিন যুদ্ধজাহাজও মোতায়েনের খবরও এসেছে পশ্চিমা গণমাধ্যমে।

ফলে সব মিলিয়ে ওই অঞ্চলে উত্তেজনা চরমে উঠছে।

গত সোমবার এশিয়া সফর শুরু করেন পেলোসি। প্রথমে তিনি সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান যাবেন বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হলেও তাইওয়ানের কথা বলা ছিল না।

কিন্তু আন্তর্জাতিক সব সংবাদ মাধ্যমে নানা সূত্রের বরাত দিয়ে পেলোসির তাইওয়ানে যাওয়ার খবর আসছিল।

আর তা দেখেই হুঁশিয়ার করে আসছিল চীন। সফরের পর বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্কে খুব খারাপ প্রভাব ফেলবে।

আর এই পরিস্থিতিতে চীনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পেলোসির এই সফর একটা স্পষ্ট উসকানি, আর তা একটি সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি করল।

Also Read: তাইওয়ান প্রণালীর মাঝরেখা ঘেঁষে চীনা যুদ্ধবিমানের আনাগোনা