তাইওয়ান প্রণালীর মাঝরেখা ঘেঁষে চীনা যুদ্ধবিমানের আনাগোনা

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি সম্ভাব্য তাইওয়ান সফরের আগে ওই অঞ্চলে চীনা যুদ্ধবিমানের আনাগোনা শুরু হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2022, 11:49 AM
Updated : 2 August 2022, 11:52 AM

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তার এবারের এশিয়া সফরেই তাইওয়ান যাচ্ছেন বলে বিষয়টি সম্বন্ধে অবগত এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

তার এ সম্ভাব্য সফরের কয়েক ঘণ্টা আগে একাধিক চীনা যুদ্ধবিমান তাইওয়ান প্রণালীকে ভাগ করা মাঝরেখার কাছ ঘেঁষে উড়ে গেছে বলে এক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

পেলোসির সফর সম্বন্ধে অবগত ওই কর্মকর্তা বলেছেন, মঙ্গলবার রাতের দিকে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার তাইওয়ানে পৌঁছাবেন।

তার এ সফরকে ঘিরে তাইওয়ানকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন প্রদেশ মনে করা চীনের দিক থেকে একাধিক হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।

এর প্রতিক্রিয়ায় সোমবার যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা চীনের ‘সামরিক আস্ফালনে’ ভীত নয়।

মঙ্গলবার সকালে তাইওয়ান প্রণালীর মাঝরেখা ঘেঁষে চীনা যুদ্ধবিমানের আনাগোনার পাশাপাশি সোমবার থেকেই অনানুষ্ঠানিক ওই বিভেদরেখার কাছে একাধিক চীনা যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতিও দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।

সূত্রটি বলেছে, চীনা যুদ্ধজাহাজ ও বিমান মঙ্গলবার সকালে এমনভাবে মাঝরেখাকে ‘চেপে ধরেছে’ যে তা অস্বাভাবিক এবং ‘খুবই উসকানিমূলক’।

এদিন এক বিবৃতিতে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা তাইওয়ানের আশপাশে শুরু হওয়া সামরিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানে। ‘শত্রুর হুমকির’ মোকাবেলায় যথোপযুক্ত সেনা মোতায়েন করা হবে বলেও জানিয়েছে করেছে তারা।

এ নিয়ে চীনের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্তব্য চাওয়া হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের দিক থেকে সাড়া মেলেনি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

তাইওয়ানের প্রণালীর পশ্চিম পাশে চীনের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় শহর জিয়ামিনে আগে থেকেই বিপুল সামরিক উপস্থিতি বিদ্যমান ছিল। সেখানকার বাসিন্দারা মঙ্গলবার শহরটির বিভিন্ন অংশে বিপুল সাঁজোয়া যান চলাচলের কথা জানিয়েছেন, অনলাইনে ছবিও দিয়েছেন।

চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও সম্ভাব্য সংঘাত এবং দেশপ্রেমে বলীয়ান হয়ে তাইওয়ানকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একীভূতকরণের সম্ভাবনা নিয়ে উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছে। তাদের টুইটারসদৃশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবুতে পেলোসির সফরই আলোচনার শীর্ষে স্থান করে নিয়েছে।

পেলোসির ভ্রমণসূচি সম্বন্ধে অবগত এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে সহ পেলোসির যাবতীয় বৈঠকই বুধবার হওয়ার কথা। যে কারণে তার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল বুধবার ভোরের দিকেও স্বশাসিত দ্বীপটিতে নামতে পারেন।

“সবই অনিশ্চিত,” বলেছেন তিনি।

এদিকে তাইওয়ানের খবরের কাগজ লিবার্টি টাইমস অনামা সূত্রের বরাত দিয়ে পেলোসির দল মঙ্গলবার তাইওয়ান সময় রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে (বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ২০ মিনিট) স্বশাসিত দ্বীপে নামবেন বলে জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার পেলোসি মালয়েশিয়া সফর করেছেন, আগের দিন সিঙ্গাপুর দিয়ে তার এশিয়া সফর শুরু হয়। এই সফরে তিনি দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানও যাবেন বলে তার কার্যালয় থেকে আগেই জানানো হয়েছিল।

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার এবার তাইওয়ান যাবেন কিনা, সে বিষয়ে তার কার্যালয় কিছু বলেনি।

তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পেলোসির সফরের পরিকল্পনা বিষয়ক খবর নিয়ে তাদের কোনো মন্তব্য নেই।

আর হোয়াইট হাউস বলেছে, পেলোসির তাইওয়ানে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার যে তাইওয়ানে যাবেনই তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি তারা।

পেলোসি তাইওয়ানে গেলে চীন স্বশাসিত দ্বীপটির কাছে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে, বড় আকারে বিমান ও নৌ কর্মকাণ্ড চালাতে পারে কিংবা তাইওয়ান প্রণালী যে আন্তর্জাতিক জলসীমা নয় এ ধরনের ‘মিথ্যা আইনি দাবির’ মাত্রা বাড়াতে পারে বলে সোমবার ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের ধারণা দিয়েছেন হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কারবি।

“আমরা টোপ গিলবো না বা অস্ত্রের ঝনঝনানিতে জড়াবো না। একইসঙ্গে, আমাদের ভয় দেখানোও যাবে না,” বলেছেন তিনি।

চারটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, পেলোসি বুধবার তাইওয়ান সময় বিকালে চীনের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সরব ছোট একটি দলের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

বৈঠকটি নিউ তাইপে সিটির ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস মিউজিয়ামে হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছে এ সম্বন্ধে অবগত একটি সূত্র।

সোমবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলছেন, পেলোসি যদি তাইওয়ান সফরে যান, তাহলে তা হবে ‘চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে গুরুতর হস্তক্ষেপ’, তেমনটা হলে চীনের সেনাবাহিনী ‘চুপ করে বসে থাকবে না’।

চীনা সেনাবাহিনী কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে ঝাও বলেছেন, “তিনি (পেলোসি) যদি যাওয়ার দুঃসাহস দেখান, তাহলে অপেক্ষা করুন এবং দেখুন।”

তাইওয়ানে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ভ্রমণকে চীন স্বশাসিত দ্বীপটির বিচ্ছিন্ন হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় ইন্ধন দেওয়া হিসেবে দেখে।

তাইওয়ানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও দ্বীপটির সুরক্ষায় সহযোগিতা করতে তারা আইনিভাবে বাধ্য।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের পর প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার নেওয়ার এখতিয়ার রাখা পেলোসি দীর্ঘদিন ধরেই চীনের সমালোচক হিসেবে খ্যাত। এমন এক সময়ে তার তাইওয়ান সফরের গুঞ্জন চলছে, যখন ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে সম্পর্কে ফাটল আরও চওড়া হচ্ছে।

Also Read: চীনের হুমকির মুখেও ‘তাইওয়ান সফরে যাচ্ছেন’ পেলোসি

Also Read: পেলোসির সফর ঘিরে তাইওয়ানের কাছে চার মার্কিন যুদ্ধজাহাজ