টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত ব্যাটসম্যান চমকে দিলেন বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে, ৫৩ চারে ৩৮১ বলে ৩৪৪ রানে অপরাজিত থেকে এখন তিনি চোখ রাখছেন ৪০০ রানের সীমানায়।
Published : 06 Apr 2025, 10:32 AM
দিনের শেষ ওভারে তুমুল উত্তেজনা। রেকর্ডটি কি এ দিনই হবে? টম ব্যান্টনের প্রয়োজন তখন আর আট রান। অনিয়মিত লেগ স্পিনার কাশিফ আলির ওভারের প্রথম বলে রান এলো না। পরের বলে বাউন্ডারি হলো বটে, তবে ‘বাই’ থেকে। তৃতীয় বলেই বাউন্ডারি হলো ব্যান্টনের ব্যাট হয়েই। পরের বলে দুই রান লেগ বাই থেকে। উত্তেজনা তখন তুঙ্গে। অবশেষে পঞ্চম বলে চার মেরে দিলেন তিনি মিড উইকেট দিয়ে। গ্যালারি থেকে ভেসে এলো তুমুল উল্লাস আর করতালি। ব্যান্টন উঁচিয়ে ধরলেন দু হাত। তার নাম খোদাই হয়ে গেল ইতিহসে।
সমারসেট কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের সুদীর্ঘ ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর এখন ব্যান্টনের। রেকর্ড গড়া ইনিংস খেলেও তিনি থামেননি। উস্টারশায়ারের বিপক্ষে ম্যাচের দ্বিতীয় দিন শেষে অপরাজিত আছেন ৩৪৪ রানে। তৃতীয় দিনে রোববার মাঠে নামবেন চারশতে চোখ রেখে।
ব্যান্টন ভেঙে দিয়েছেন জাস্টিন ল্যাঙ্গারের রেকর্ড। ২০০৬ সালে সারের বিপক্ষে ৩৪২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান।
সমারসেটের হয়ে ট্রিপল সেঞ্চুরি করা মাত্র অষ্টম ব্যাটসম্যান ব্যান্টন। সবশেষটি করেছিলেন জেমস হিলড্রেথ, ২০০৯ সালে।
এবারের কাউন্টি মৌসুমের প্রথম রাউন্ডেই এমন তোলপাড় ফেলে দিলেন ব্যান্টন।
৪৯৬ মিনিট ক্রিজে কাটিয়ে ইনিংসটি খেললেন তিনি। অথচ ইংলিশ ক্রিকেটে বা বিশ্ব ক্রিকেটে তার মূল পরিচিতি সীমিত ওভারের বিশেষজ্ঞ হিসেবে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ হিসেবে। এই ম্যাচের আগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার সেঞ্চুরি ছিল তিনটি, কিন্তু বিশ ওভারের ক্রিকেটে শতরান করে ফেলেছেন চারটি। ইংল্যান্ডের হয়ে সাতটি ওয়ানডে ও ১৪টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এর আগে ট্রিপল বা ডাবল সেঞ্চুরি তো দূরের কথা, দেড়শ রানের ইনিংসও ছিল না তার। সর্বোচ্চ ছিল ১৩৩। সেই তিনিই এখন ৪০০ রানের ইনিংস খেলার পথে।
তবে বড় ইনিংস খেললেও তার ব্যাটিংয়ে চেনা আগ্রাসী ধরন ঠিকই ছিল। ৩৪৪ রান করেছেন ৯০.২৮ স্ট্রাইক রেটে! ৩৮১ বলের ইনিংসে চার মেরেছেন ৫৩টি, ছক্কা ১টি।
টন্টনে ম্যাচের প্রথম দিনে স্রেফ ৪৫.৩ ওভারে ১৫৪ রানে শেষ হয় উস্টারশায়ারের ইনিংস। ব্যাটিংয়ে নেমে সমারসেটের শুরুটাও ভালো ছিল না। ৩৯ রানের মধ্যে তিনটি উইকেট হারায় তারা। বিপর্যয়ের মধ্যেই নেমে দারুণ খেলে পাল্টা জবাব দেন ব্যান্টন।
টম অ্যাবেলের সঙ্গে ১০১ রানের জুটিতে সামাল দেন বিপদ। অ্যাবেল ফেরেন ৫২ রানে। ব্যান্টন দিন শেষ করেন ৮৪ রানে অপরাজিত থেকে।
দ্বিতীয় দিনে শনিবার দিনজুড়ে রাজত্ব করে আরও ২৬০ রান যোগ করেও অপরাজিত রয়ে যান ২৬ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
টম টেইলরকে চার মেরে শতরানে পা রাখেন তিনি ১২৪ বল খেলে। সেখান থেকে দুইশ পর্যন্ত যেতে বল লাগে তার ১১৭টি।
দুইশ পেরিয়েই ইনিংসের একমাত্র ছক্কাটি মারেন তিনি ইথান ব্রুকসের বলে।
প্রায় একই গতিতে ছুটে দুইশ থেকে তিনশতে পৌঁতে যেতে বল খেলেন তিনি ১১০টি। এরপরও না থেমে পেরিয়ে যান ল্যাঙ্গারের রেকর্ড।
পঞ্চম উইকেটে ব্যান্টন ও জেমস রু মিলে যোগ করেন ৩৭১ রান। সমারসেটের ইতিহাসে সেরা পঞ্চম জুটির রেকর্ড এটি। ২০০৫ সালে জন ফ্রান্সিস ও ইয়ান ব্ল্যাকওয়েলের ৩২০ রানের জুটি পেরিয়ে যান তারা।
কিপার-ব্যাটার রু আউট হন ১৫২ রান করে। পরে কেসি অলড্রিজ বেশিক্ষণ টেকেননি। তবে অধিনায়ক লুইস গ্র্রেগগির (৩০*) সঙ্গে ৭৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দিন শেষ করেন ব্যান্টন।
আরও কত দূর তিনি যেতে পারবেন, সেটি ফুটে উঠবে রোববার। তবে যা করেছেন, এতেই আকাশে উড়ছেন ব্যান্টন।
“খুবই অদ্ভুত লাগছে, একটু আবেগপ্রবণ হয়েও পড়েছিলাম ড্রেসিং রুমে। ক্রিকেটে আমার জীবনের সেরা দিন এটি এবং সম্ভবত আমার সেরা দিন হয়েই থাকবে এটি আজীবন। স্পেশাল কিছু মনে হচ্ছে এবং এসবকে সাধারণ ধরে নেওয়ার সুযোগ নেই। এই ধরনের দিন সহসা আসে না। যখন আসে, তখন কাজে লাগাতে হয়।”
ব্যান্টন জানালেন, কখনও কখনও ক্লান্তি পেয়ে বসেছিল তাকে। তবে রেকর্ডটি এ দিনই করতে মরিয়া ছিলেন তিনি।
“মিথ্যে বলব না, বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। তবে নিজেকে বলছিলাম, ‘ব্যাটিং করে যাও, চালিয়ে যাও…।’ কিছু কিছু সময় মনে হচ্ছিল, ড্রেসিং রুমে ফিরে যেতে পারলেই ভালো। তবে রেকর্ডটি এ দিনই করতে চেয়েছিলাম। তাই সুযোগ পেলেই শট খেলেছি।”
৬ উইকেটে ৬৩৭ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে সমারসেট।