পেলোসি তাইওয়ানে গেলে ‘পরিণতি মারাত্মক’ হবে: চীন

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার যদি তার সফর নিয়ে অগ্রসর হন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘মারাত্মক পরিণতি’ ভোগের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বেইজিং।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2022, 10:30 AM
Updated : 27 July 2022, 10:30 AM

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সম্ভাব্য তাইওয়ান সফরের গুঞ্জন চীনকে ক্ষুব্ধ করার পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের জন্যও তা গুরুতর ভূরাজনৈতিক চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে বলেছে, পেলোসি যদি তার সফর নিয়ে অগ্রসর হন, তাহলে ‘মারাত্মক পরিণতি’ ভোগ করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের পর দেশটির তৃতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার পেলোসি। যদি চীনের হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য করে তিনি তাইওয়ান চলেই যান, তাহলে ১৯৯৭ সালের পর স্বশাসিত দ্বীপটিতে যাওয়া সবচেয়ে উচ্চপদস্থ মার্কিন রাজনীতিক হবেন তিনি।

তার এই সম্ভাব্য তাইওয়ান সফরের গুঞ্জনই চীনকে অস্থির করে তুলেছে বলে মনে করছে বিবিসি।

চীন তাইওয়ানকে তার নিজের বিচ্ছিন্ন প্রদেশ মনে করে; একদিন না একদিন প্রদেশটি মূলভূখণ্ডের সঙ্গে একত্রিত হবে বলেও মনে করে তারা। সেই ধারণা বাস্তবায়নে প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয় না বেইজিং।

যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে চীনের অংশ মেনে নিয়ে ‘এক চীন’ নীতির প্রতি সমর্থন জানালেও তাইওয়ানের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক ও সামরিক যোগাযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটন-তাইপে মাখামাখিও চীনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে তারা তাইওয়ানে পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতির ব্যাপারে একের পর এক সতর্কবার্তা দিয়ে যাচ্ছে।

সবশেষ মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকারের সম্ভাব্য সফর নিয়ে তারা এমন কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে যে এমনকী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনকেও ক্যালিফোর্নিয়ার আইনপ্রণেতা পেলোসির তাইওয়ানে যাওয়া আটকানোর চেষ্টা করতে হচ্ছে।

কয়েকদিন আগেই বাইডেন সাংবাদিকদের বলেছেন, স্পিকারের তাইওয়ান সফর এ মুহূর্তে ঠিক হবেনা বলে সামরিক বাহিনীও মনে করছে।

তবে তার হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বলেছে, এ ধরনের সফর নিয়ে চীন যে গরম গরম কথা বলছে তা ‘স্পষ্টতই অসহযোগিতামূলক এবং অপ্রয়োজনীয়’।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরে জানায়, পেলোসি এ ধরনের কোনো সফরের ঘোষণা দেননি আর তাইওয়ান বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানও বদলায়নি।

যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা তাইওয়ানের সঙ্গে ‘শক্তিশালী, অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক’ বজায় রাখলেও ওয়াশিংটনের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক বেইজিংয়ের সঙ্গে, তাইপের সঙ্গে নয়।

বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাধিক ইস্যুতে উত্তেজনা চলছে, পেলোসির সফরের গুঞ্জন তাতে ইন্ধন যোগাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে শিগগিরই ফোনালাপ হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

কেন তাইওয়ানে যেতে চান পেলোসি?

যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ এবং কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট, রিপাবলিকান উভয় অংশের মধ্যেই তাইওয়ানের প্রতি দৃঢ সমর্থন বিদ্যমান।

আর মার্কিন কংগ্রেসে পেলোসির ৩৫ বছরের ক্যারিয়ারে তাকে সবসময়ই চীনের কট্টর সমালোচক হিসেবেই দেখা গেছে।

পেলোসি চীনের মানবাধিকার রেকর্ডের নিন্দা জানিয়ে আসছেন, চীনা গণতন্ত্রপন্থি ভিন্নমতাবলম্বীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং ১৯৮৯ সালের তিয়ানআনমেন স্কয়ারের দমনপীড়নে হতাহতদের স্মরণ করতে স্থানটি সফরও করেছেন।

পেলোসির প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল এপ্রিলেই তাইওয়ান সফর করার, কিন্তু কোভিড আক্রান্ত হওয়ায় তার ওই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

এখনও তিনি তার সম্ভাব্য তাইওয়ান সফর নিয়ে কিছু খোলাসা করছেন না। কয়েকদিন আগে কেবল বলেছেন, “গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তাইওয়ানের প্রতি সমর্থন দেখানো।”

চীন কেন তার সফরের বিরোধিতা করছে?

চীন তাইওয়ানকে তার ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে, প্রয়োজন পড়লে অংশটিকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একীভূত করতে বল প্রয়োগের হুমকিও দিয়ে আসছে তারা; যা সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে।

ইদানিং তাইপে ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বাড়াবাড়ি রকমের কূটনৈতিক মেলামেশাও চীনকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে; এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের ৬ আইনপ্রণেতা আচমকা স্বশাসিত দ্বীপটি সফর করেন।

সোমবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান সতর্ক করে দিয়ে বলে্ছেন, পেলোসি যদি তার সফর নিয়ে অগ্রসর হন, তাহলে তার দেশ (চীন) ‘দৃঢ় ও কড়া পদক্ষেপ’ নেবে।

“এবং মারাত্মক সব পরিণতির দায় যুক্তরাষ্ট্রকে নিতে হবে,” বলেন তিনি।

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বেইজিংয়ের সামরিক প্রতিক্রিয়ারও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন।

“যুক্তরাষ্ট্র যদি এরপরও (সফর নিয়ে) অগ্রসর হয, চীনের সামরিক বাহিনী চুপচাপ বসে থাকবে না এবং ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতা’ নিয়ে বাইরের হস্তক্ষেপ ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিতে শক্তিশালী ব্যবস্থা নেবে,” চাযনা ডেইলিকে এমনটাই বলেছেন কর্নেল তান কেফেই।

পেলোসির সফর যেভাবে উত্তেজনা বাড়াতে পারে

চলতি বছরের শেষদিকে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেস হতে যাচ্ছে, তাতে দলটি নজিরবিহীনভাবে শি জিনপিংকে তৃতীয়বারের মতো দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে পারে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট শি’র সঙ্গে দিনকয়েকের মধ্যেই কথা বলবেন এবং তাদের আলোচনায় তাইওয়ান ও ‘উত্তেজনার নানান ইস্যু’ স্থান পেতে পারে। শি ও বাইডেন সর্বশেষ মার্চে একে অপরের সঙ্গে কথা বলেছিলেন।

এমন এক সময়ে তাদের মধ্যে ফের কথা হতে যাচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তার এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের সামরিক বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি এবং দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের ‘আগ্রাসী ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের’ বিষয়ে সতর্ক করছেন।

পেলোসির সম্ভাব্য সফরের পাল্টায় চীন কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে, তা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে।

২০২০ সালে তৎকালীন মার্কিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অ্যালেক্স আজার যখন তাইওয়ানে গিয়েছিলেন, তখন চীনের বিমানবাহিনীর জেটগুলো তাইওয়ান প্রণালীর মধ্যবর্তী রেখা অতিক্রম করে ভেতরে ঢুকে পড়েছিল, চলে এসেছিল তাইপের ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায়।

পেলোসি তাইওয়ান যেতে চাইলে তাকেও এই ধরনের বা এর চেয়েও কড়া প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে বলে কয়েকদিন অগে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের সাবেক সম্পাদক ইঙ্গিত দিয়েছেন।

“যদি পেলোসি তাইওয়ানে যান, তাহলে চীনের সামরিক বাহিনীর বিমানগুলো তার বিমানকে সঙ্গী করেই দ্বীপটিতে প্রবেশ করবে, প্রথমবারের মতো মূল ভূখণ্ডের সামরিক বিমান দ্বীপটি অতিক্রম করে ইতিহাস সৃষ্টি করবে,” লিখেছেন হু জিজিন।