“যদি ধর্ষণের ঘটনাসহ অন্যান্য এত এত অপরাধের দায় কাউকে দেওয়া না হয়, তাহলে সে দায় উপাচার্যের ওপরই বর্তায়।”
Published : 13 Mar 2024, 02:45 PM
পাঁচ দফা দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে তৃতীয় দিনের মতো অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি করেছে ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’।
বুধবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলে। এ সময় কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করতে পারেননি।
নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের সংগঠক অধ্যাপক পারভীন জলী রোববার রাতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এরপর সোমবার সকালে প্রশাসনিক ভবনে ঢোকার সবগুলো গেইটে তালা লাগিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা।
গত দুদিনের মতো, সকাল থেকে প্রশাসনিক ভবনের ফটকগুলোতে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। ফটকে ব্যানার ঝুলিয়ে সামনে অবস্থান করছেন আন্দোলনকারীরা। ভবনের সামনে একটি কাঠের ব্যারিকেড দিয়ে রাখা হয়েছে।
নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া আন্দোলনকারীদের একজন। তিনি বলেন, “গত ৩ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া আন্দোলন, আজকের দিন পর্যন্ত গড়িয়েছে। নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রশাসনিক ভবন অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে।
“প্রশাসন আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও তাতে আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি না। তাই আমাদের পাঁচ দাবির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।"
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ বলেন, “ধর্ষণের ঘটনার দিন প্রক্টরের উপস্থিতিতে ধর্ষক মোস্তাফিজুর পালিয়ে গেছে। ইউজিসি বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায় এড়াতে পারে না। আর র্যাব বলেছে, দীর্ঘদিন ধরে প্রতি মাসে প্রায় ৭-৮ হাজার পিস ইয়াবা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে।
“যদি তাই হয়, তবে এই প্রক্টরের কাজ কী! এছাড়াও অসংখ্য অভিযোগ তিনি নিজে ধামাচাপা দিয়েছেন। তাই প্রক্টর কে অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত করতে হবে; সে পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।"
আন্দোলনকারী শিক্ষক ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী বলেন, "পাঁচ দফা দাবিতে নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ চলছে। উপাচার্যের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তিনি তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান, তবে সেটি প্রশাসনিক ভবনের মধ্যে।
“আমরা জানিয়েছি, একটা আন্দোলন চলছে। এর মধ্যে কিভাবে প্রশাসনিক ভবনের মধ্যে আলোচনা হতে পারে? বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও বিভিন্ন জায়গা রয়েছে সেখানে আলোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু তিনি সেসব জায়গায় আলোচনায় বসবেন না। তিনি গো ধরে বসে আছেন, প্রশাসনিক ভবনেই বসতে চান। তাহলে বলা যেতেই পারে, তিনি সমাধান চাচ্ছেন না।"
এদিকে বেলা ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ, গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক নীলাঞ্জন কুমার সাহা ও জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নুহু আলম নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এ সময় নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ ও চারজন ডিনের মধ্যে আলোচনা হয়।
কী আলোচনা হয়েছে? জানতে চাইলে গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, আন্দোলনকারীদের দাবি, প্রক্টর-প্রাধ্যক্ষের সাময়িক অব্যাহতি দিতে হবে এবং তদন্ত সাপেক্ষে বিচার করতে হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে তারা আলোচনায় বসতেও রাজি।
“এই বার্তাগুলো উপাচার্য স্যারের কাছে আমরা পৌঁছে দেব।”
আলোচনা প্রসঙ্গে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, "আমরা আলোচনা করতে প্রস্তুত, কিন্তু প্রশাসন থেকে সে সদিচ্ছা দেখছি না। আমরা ডিনদের জানিয়েছি রেজিস্ট্রার ভবন ছাড়া যেকোনো জায়গায় আমরা আলোচনা করব না এবং আলোচনায় বসার ক্ষেত্রে প্রক্টর ও প্রাধ্যক্ষের সাময়িক অব্যাহতির এই বিষয় মাথায় রেখেই প্রশাসনের আশা উচিত।
"যদি ধর্ষণের ঘটনাসহ অন্যান্য এত এত অপরাধের দায় কাউকে দেওয়া না হয়, তাহলে সে দায় উপাচার্যের ওপরই বর্তায়। এটাই বিধিতে বলা আছে।"
গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে কৌশলে বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, তার পরিচিত মামুনুর রশীদ মামুনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে।
পরে ভুক্তভোগীর স্বামী ছয়জনকে আসামি করে ঘটনার রাতেই আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের ব্যানারে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-ধর্ষক ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা; মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্ত করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা এবং র্যাগিং সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা; ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা।
এছাড়া নিপীড়কদের ‘সহায়তাকারী’ প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অপরাধ তদন্ত করা এবং তদন্ত চলাকালে প্রশাসনিক পদ থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া; মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে, জড়িতদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও রয়েছে আন্দোলনকারীদের।
আরও পড়ুন
পাঁচ দফা: জাবির প্রশাসনিক ভবন অবরোধ দ্বিতীয় দিনে
জাবিতে ধর্ষণ: ছাত্রলীগ নেতার সনদ বাতিল, পাঁচজন স্থায়ী বহিষ্কার
জাবিতে প্রক্টর-প্রাধ্যক্ষের অব্যাহতিসহ ৫ দাবিতে মশাল মিছিল
জাবিতে ধর্ষণ: তদন্তের স্বার্থে প্রক্টর-প্রাধ্যক্ষের অব্যাহতির দাবি
জাবি ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতার বহিষ্কারাদেশ বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ
জাবিতে ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতাকে বহিষ্কারে বিক্ষোভ
যৌন নিপীড়ন: জাবি শিক্ষক মাহমুদুর চাকরিচ্যুত
জাবিতে নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের মশাল মিছিল
জাবিতে ধর্ষণ: তৃতীয় দিনের মতো প্রশাসনিক ভবন অবরোধ
জাবিতে ধর্ষণ: আচার্যকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান
জাবিতে ধর্ষণ: মশাল মিছিল শেষে উপাচার্য ও শিক্ষার্থীদের বিতণ্ডা
জাবিতে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সংহতি সমাবেশে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও
জাবিতে ধর্ষণ: রিমান্ড শেষে কারাগারে ৪ আসামি
জাহাঙ্গীরনগরে ধর্ষণ: ঘটনার যে বিবরণ দিল র্যাব
জাহাঙ্গীরনগরে ‘ধর্ষণ’: বাকি দুই আসামিও গ্রেপ্তার
জাবিতে ধর্ষণ: দিনভর বিক্ষোভে নামল আরও অনেকেই
জাবি প্রশাসনের ব্যর্থতায় যৌন নিপীড়ন বন্ধ হয়নি: ইউজিসি
জাবিতে ধর্ষণ: তৃতীয় দিনেও উত্তাল ক্যাম্পাস
আগের ঘটনায় ব্যবস্থা না নেওয়ায় জাবিতে ফের ধর্ষণ: ১৮ নাগরিক
জাবিতে ধর্ষণের প্রতিবাদের নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’
‘ধর্ষকের জন্ম বিচারহীনতায়’: জাহাঙ্গীরনগরে ক্ষোভ
ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে জাহাঙ্গীরনগরে মশাল মিছিল
জাবিতে ধর্ষণ: জড়িতদের সনদ স্থগিত, ক্যাম্পাসে 'অবাঞ্ছিত'
জাবিতে ধর্ষক-নিপীড়কের কুশপুতুল দাহ
জাবিতে স্বামীকে আটকে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
জাবিতে ধর্ষণ: ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজ ও মামুনকে সহায়তা করেন চারজন