শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি দল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে তিনটি দাবি পেশ করেন।
Published : 04 Feb 2024, 04:43 PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার দুপুর ১২টার দিকে বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এখনও চলছে।
এ সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি দল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য নূরুল আলমের সঙ্গে দেখা করে তিনটি দাবি পেশ করেন।
দাবিগুলো হল- বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে মামলা করা, তিনদিনের মধ্যে হলগুলোতে থাকা অছাত্রদের বের করা, ধর্ষক ও তাদের সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।
শনিবার রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ আবাসিক হলে ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে কৌশলে বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, তার পরিচিত মামুনুর রশীদ মামুনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে।
রাতের ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী ছয়জনকে আসামি করে আশুলিয়া থানায় ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন’ আইনে মামলা করেছেন।
ঘটনার প্রতিবাদে রোববার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে করা বিক্ষোভে শিক্ষকদের সমর্থন পায়।
এদিকে, উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আনিছা পারভিন বলেন, “আমরা তিনটি দাবি জানিয়েছি। উপাচার্যকে বলেছি, জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিষয়গুলো সমাধান করার জন্য। উপাচার্য আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।”
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে তিনি বলেন, “আমরা যখনই প্রশাসনের কাছে কোনো অন্যায়ের বিচারের জন্য যাই, তখনই তারা বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেলে বিষয়টা দেখব’, এটা তাদের মুখস্থ বুলি৷ এর আগেও এ ধরনের ঘটনার অভিযুক্তরা একটা নির্দিষ্ট দলের হওয়ায় তাদের বিচার হয়নি৷ আমরা চাই, এবারের ঘটনায় এক ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে মামলা করবে। এবার আমরা ধর্ষকের বিচার করে ছাড়ব এবং যারা ধর্ষকের সহযোগী তাদেরও বিচার করব।”
এদিকে, নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা ‘ধর্ষক ও সহযোগী, সমান অপরাধী’, ‘অছাত্র ধর্ষণ করে, প্রশাসন কী করে?’ এসব স্লোগান দিতে থাকেন।
বিক্ষোভকারীদের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল বলেন, “ক্ষমতার ব্যবহার কারা করে, সেটা সবাই জানে। এই দায় প্রশাসনের, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কিংবা বাইরে থেকে যারা ঘুরতে আসেন, তাদের নিরাপত্তা কে দিবে? অবশ্যই প্রশাসন। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে যদি নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এই প্রশাসনের থাকার দরকার নাই। যে ক্যাম্পাস আমার, সেই ক্যাম্পাস ধর্ষকের না।”
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আরেক শিক্ষার্থী জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের তানজিনা আমান তানজুম বলেন, “এই দায় সম্পূর্ণ প্রশাসনের। প্রশাসন যে অছাত্রদের এখনও হল থেকে বের করতে পারে না, সেই অছাত্ররাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। মনে হচ্ছে, প্রশাসন ধর্ষকদের পোষে।”
মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রোববার দুপুর ১২টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, “প্রধান আসামি মোস্তাফিজকে সাভার থানা এলাকা থেকে ভোরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
এছাড়া সকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সহযোগিতায় সাব্বির হাসান সাগর, সাগর সিদ্দিকী এবং হাসানুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রধান আসামি মোস্তাফিজকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, “আমরা সকলকে আশ্বস্ত করতে চাই, অপরাধী যে-ই হোক না কেন, তার পার পেয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আমরা কাজ শুরু করি এবং ছয় আসামির মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই।
“বাকি দু’জনকে গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আশা করছি, দ্রুতই তাদের গ্রেপ্তার করতে পারব।”
তারা অভিযোগ স্বীকার করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আপাতত এতটুকু আপনাদের জানানো হয়েছে। বাকি বিষয় তদন্তের পর আবার জানানো হবে।”
এদিকে, এ বিষয়ে বিকাল ৩টায় জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সভা এখনও চলছে।
আরও পড়ুন...
জাবিতে স্বামীকে আটকে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার