বাংলা নববর্ষ কখনোই কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের অনুষ্ঠান ছিল না। এটি ছিল কৃষিনির্ভর সমাজের চক্রাকার জীবনের ছন্দ মেনে তৈরি হওয়া এক সময়চিত্র।
Published : 14 Apr 2025, 05:08 AM
পহেলা বৈশাখ। জীর্ণ পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে এক নতুন সূর্যের আলোয় স্নান করে আসে এই দিনটি— বাংলা বছরের প্রথম দিন। গ্রাম বাংলার মাঠঘাট থেকে শুরু করে নগরের কংক্রিট-ঘেরা বুকে এই দিনটিই যেন সবচেয়ে প্রাণবন্ত, সবচেয়ে রঙিন। এই পহেলা বৈশাখ কি শুধুই উৎসব? না, এটি আমাদের পরিচয়ের, আত্মমর্যাদার একটি বলিষ্ঠ ভাষ্য।
বাংলা সালের উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন মত থাকলেও অধিকাংশ ইতিহাসবিদের মতে, মোগল সম্রাট আকবর এই পঞ্জিকা প্রবর্তন করেন খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে। ফসলি বছরের ওপর ভিত্তি করে শুরু হওয়া এই পঞ্জিকা একদিকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল, অন্যদিকে কৃষক ও সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী হয়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে এই দিনটিই হয়ে ওঠে ‘হালখাতা’, ব্যবসায়িক পুনর্গঠনের দিন।
যেটি একসময় ছিল হিসাব-নিকাশের দিন, সেটি আজ পরিণত হয়েছে জাতীয় উৎসবে। এ রূপান্তর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ উৎসবের রূপান্তর মানেই এক জনগোষ্ঠীর মানসিক রূপান্তর। মেলা, বৈশাখী গান, আলপনা, মঙ্গল শোভাযাত্রা, পান্তা-ইলিশ— সব মিলিয়ে একটি সাংস্কৃতিক অভ্যুত্থান।
বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যুষিত শহরগুলো, বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট যখন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র আয়োজন করে, তখন ওই কল্পনাশক্তি, রং ও প্রতীকচিহ্ন আমাদের উৎসবকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দেয়। ২০১৬ সালে ইউনেস্কো যখন মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ হিসেবে ঘোষণা করে, তখন পহেলা বৈশাখের উৎসব আর শুধু একটি দেশের বা জনগোষ্ঠীর উৎসব থাকে না— তা হয়ে ওঠে মানবিক ঐতিহ্যের অংশ। যদিও এ বছর শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনে জাতিসংঘের সংস্থাটির স্বীকৃতিতে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। ২০১৬ সালে বাংলা বছরকে বরণ করে নেওয়ার এই শোভাযাত্রাটি ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পায়। ততদিনে 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' নামে খ্যাতি পেলেও সাড়ে তিন দশক আগে ১৯৮৯ সালে যাত্রা শুরুর সময় এর নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলে করা হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।
বাংলা নববর্ষ নিয়ে সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত প্রসঙ্গ হলো ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এর গ্রহণযোগ্যতা। যারা বৈশাখ উদযাপনকে ‘অনৈসলামিক’ আখ্যা দিয়ে বিরোধিতা করেন, তাদের ভাষ্য হলো, এ উৎসব হিন্দু সংস্কৃতি বা পৌত্তলিকতার বহিঃপ্রকাশ। অপরদিকে যারা এই দিনটির পক্ষে বলেন, তাদের যুক্তি হলো, এটি একটি ধর্মনিরপেক্ষ সাংস্কৃতিক উৎসব, যা হাজার বছর ধরে বাংলা ভূখণ্ডে বসবাসকারী সকল ধর্মের মানুষ উদযাপন করে এসেছে।
বাস্তবতা হলো, বাংলা নববর্ষ কখনোই কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের অনুষ্ঠান ছিল না। এটি ছিল কৃষিনির্ভর সমাজের চক্রাকার জীবনের ছন্দ মেনে তৈরি হওয়া এক সময়চিত্র। হালখাতা, বাণিজ্যিক হিসাব মেলানো, ক্ষেতের ফসল ঘরে তোলা— এসব কাজের সঙ্গে ধর্ম নয়, যুক্ত ছিল ভূমি, অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞান। ধর্মীয় ট্যাগ লাগিয়ে এই দিনটিকে সংকুচিত করা মানে ইতিহাসকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা।
দুঃখজনক হলেও সত্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশাখবিরোধী মনোভাব সমাজের একটি অংশে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। অনেকেই এই জাতীয় উৎসবটিকে সন্দেহের চোখে দেখে। অথচ খ্রিস্টীয় নতুন বছর উদযাপনে দ্বিধাবোধ নেই ওই একই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর।
এই দ্বৈত মানসিকতা আমাদের জাতীয় চেতনার জন্য ভয়াবহ এক সংকেত। যদি একটি জাতি তার সাংস্কৃতিক মূলকে সন্দেহ করে, তবে তার অস্তিত্বই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। সংস্কৃতি কেবল গানের, নাচের, পোশাকের ব্যাপার নয়— এটি আত্মপরিচয়ের কেন্দ্রে বসে থাকা এক গভীর মানবিক সত্তা।
২.
বাংলা নববর্ষ কেবল একটি বর্ষপঞ্জির পালাবদল নয়, এটি এক সংস্কৃতির নবজাগরণ। কিন্তু এই নবজাগরণের পথ একেবারে নির্বিঘ্ন নয়। বরং এখানে রয়েছে প্রতীকের সংঘর্ষ, সংস্কৃতির অনুবাদ, এবং ক্রমবর্ধমানভাবে ধর্ম ও রাজনীতির ছায়া।
১৯৮৯ সালে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রথম বর্ষবরণের শোভাযাত্রা আয়োজন করে, তখন এটি ছিল এক শিল্পতাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক প্রতিবাদ। সামরিক শাসনের অন্ধকার সময়ের পর, সাধারণ মানুষের হৃদয়ে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা, ভালোবাসার জয়গান ও অশুভের বিরুদ্ধে অবস্থান— এই ছিল মূল বার্তা। ওই শোভাযাত্রায় ‘গণতন্ত্র চাই’, ‘জয় হোক মানবতার’— এমন স্লোগানও ছিল। অর্থাৎ, মঙ্গল শোভাযাত্রা একটি প্রতীকী রাজনৈতিক উচ্চারণ।
এরপর থেকে প্রতিবারই এই শোভাযাত্রা নতুন নতুন প্রতীক ধারণ করেছে। মুখোশ, বিশালাকৃতির পাখি, ঘোড়া, ডানাওয়ালা প্রাণী— এসব আমাদের লোককথা, সংস্কৃতি এবং অবচেতনের বহিঃপ্রকাশ। এগুলো যেমন আনন্দের, তেমনি গভীর রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক বার্তাবাহী।
কিন্তু এখানেই শুরু হয় বিরোধিতার জায়গা। অনেকেই এটিকে ‘পৌত্তলিক সংস্কৃতির ছায়া’ হিসেবে উপস্থাপন করতে শুরু করে কেউ কেউ। অথচ এটি কোনো ধর্মীয় আচার নয়; বরং তা একধরনের শিল্পীসুলভ প্রতিবাদ ও সৌন্দর্যের সম্মিলন।
পহেলা বৈশাখ শহরে যতটা রঙিন, গ্রামে ততটা সাদামাটা— এই ধারণাটি একপাক্ষিক হলেও পুরোপুরি ভুল নয়। শহরে চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা, রমনার বটমূলে বর্ষবরণের গানসহ নানারকম ফিউশন ফ্যাশন, গণমাধ্যমের সরবতা— সব মিলিয়ে এটি হয়ে ওঠে এক উজ্জ্বল নাগরিক আয়োজন।
অন্যদিকে, গ্রামীণ বৈশাখে মেলা, নৌকা বাইচ, লাঠিখেলা, গম্ভীরা, যাত্রাপালা কিংবা পুতুলনাচের মতো লোকায়ত সংস্কৃতির চর্চা চলে। অনেক জায়গায় এই উৎসব এখনো পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ— পান্তা, আলুভর্তা, নতুন কাপড়, হালখাতা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে।
শহরের বৈশাখ উৎসব আজকাল ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছে— যেখানে বহুজাতিক কোম্পানি থেকে শুরু করে ফ্যাশন হাউস পর্যন্ত সক্রিয়। অন্যদিকে গ্রামবাংলায় এই উৎসবের প্রাণ হচ্ছে আন্তরিকতা, সরলতা এবং লোক-সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতা।
এখানে প্রশ্ন ওঠে, এই দুটি বৈশাখ কি আলাদা? নাকি একটি আরেকটির পরিপূরক? যদি পরিপূরক হয়, তাহলে রাষ্ট্র ও সমাজের কর্তব্য হওয়া উচিত এই সংস্কৃতিগুলোর মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা, শ্রেণিবিচ্ছিন্নতা নয়।
বাংলা নববর্ষের উৎসবকে ঘিরে সবচেয়ে যে বড় চ্যালেঞ্জ এসেছে, তা হলো এর বিরুদ্ধে সংগঠিত বিরোধিতা। কিছু উগ্রধর্মীয় গোষ্ঠী নববর্ষ উদযাপনকে ইসলামের পরিপন্থী হিসেবে প্রচার করতে থাকে। তারা এটিকে ‘হিন্দুয়ানী উৎসব’, ‘বেদের সংস্কৃতি’ ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এমনকি ২০০১ সালের রমনা বটমূলে বোমা হামলা আমাদের স্মৃতিতে গেঁথে থাকা এক ভয়াবহ ঘটনা।
এই ধরনের ধর্মীয় উগ্রতা একদিকে যেমন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ধর্মনিরপেক্ষতা খর্ব করে, অন্যদিকে জনগণের মনে ভীতির বীজ বপন করে। অথচ সংস্কৃতি মানুষের ধর্মীয় পরিচয় নয়, বরং মানুষের বসবাস ও চিন্তার অভ্যাস।
এখানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, রাষ্ট্র কোথায় দাঁড়িয়ে আছে? রাষ্ট্র যদি সত্যিকার অর্থে সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদে বিশ্বাসী হয়, তবে শুধু রমনার বটমূলের গান নয়, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া, প্রশাসনিক উদ্যোগের মাধ্যমেই নববর্ষকে তুলে ধরা উচিত।
বর্তমানে বৈশাখের অনুষ্ঠানে যেভাবে করপোরেট ঢেউ, রাজনৈতিক ফায়দা ও ধর্মীয় সংকীর্ণতা প্রবেশ করছে, তাতে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এই উৎসবের মৌলিক রূপ কী হারিয়ে যাবে? উদারতার জায়গায় যদি সাম্প্রদায়িকতা ঢুকে পড়ে, তবে নববর্ষ কেবল এক দিনের আনুষ্ঠানিকতা হয়ে দাঁড়াবে। অথচ আমাদের প্রয়োজন ছিল এটি এক জাতিগত সংস্কৃতির রেনেসাঁ হয়ে ওঠা।
এই কাজটি কোনো একক গোষ্ঠীর নয়। এটি রাষ্ট্র, নাগরিক সমাজ, শিল্পী, শিক্ষার্থী, গ্রামীণ সংস্কৃতির বাহক— সবার সম্মিলিত দায়িত্ব। কারণ, সংস্কৃতি যদি হারায়, ইতিহাস যদি মুছে যায়, তাহলে একদিন আমরা নিজেরাই হারিয়ে যাব।
৩.
বাংলা নববর্ষের উৎসব যেমন আনন্দের, তেমনি তা একটি গভীর রাজনৈতিক বার্তা বহন করে— বাঙালিত্বের সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ। যখন পাকিস্তানি শাসকেরা ‘উর্দু একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল, তখন বাংলা নববর্ষ উদযাপন, রবীন্দ্রসংগীত, একুশে ফেব্রুয়ারি— এসব কিছু হয়ে উঠেছিল একেকটি প্রতিবাদের ভাষা।
১৯৬৫-৬৯ সময়কালে রবীন্দ্রসংগীত, কবিগান, বাউল সংগীত, লোকনাট্যের আয়োজন— এসবই হয়ে উঠেছিল এক ধরনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব। সত্তরের নির্বাচনের আগপর্যন্ত রাজনৈতিক নেতারাও বারবার বলেছেন, সংস্কৃতি যদি স্বাধীন না হয়, রাজনীতি কখনো স্বাধীন হতে পারে না।
১৯৭১ সালে বিজয়ের পর আমরা দেখেছি, বাংলা নববর্ষকে জাতীয় উৎসবে রূপ দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৮০-এর দশকে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধেও নববর্ষ এক প্রতিবাদী উদযাপন ব্যবস্থা হয়ে ওঠে।
অর্থাৎ, বাংলা নববর্ষ একটি ‘কালচারাল রেজিস্ট্যান্স’— এটি আত্মপরিচয়ের প্রশ্ন, এটি ‘আমি বাঙালি’ বলার সাহস। যে সমাজ নিজের উৎসব লালন করতে পারে না, সে নিজেকে স্বাধীন ভাবলেও, আদতে এক সাংস্কৃতিক ঔপনিবেশিকতার শিকার হয়।
বাংলা নববর্ষকে ঘিরে এক শ্রেণির লোক যেভাবে ‘ধর্ম বনাম সংস্কৃতি’ নামে দ্বৈত বিভাজন তৈরি করতে চায়, তা এক আত্মঘাতী প্রবণতা। পহেলা বৈশাখ কোনো ধর্মীয় উৎসব নয়; এটি একটি ঋতু, জীবিকা ও জীবনের উৎসব। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান— সব বাঙালিই এই উৎসবে অংশ নেয়।
বাংলা সনের প্রবর্তক সম্রাট আকবর মুসলিম হলেও তিনি বাংলার কৃষিজীবী মানুষের আর্থিক ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনেই এ সালের প্রচলন করেছিলেন। ব্যবসায়ীদের হালখাতা, কৃষকদের খাজনা পরিশোধ, নতুন বছরের শুভারম্ভ— কোনোটাই ধর্মীয় নয়, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা।
তবে রাষ্ট্র যদি এই উৎসবকে শুধু কিছু শহুরে এলিট আয়োজনে সীমাবদ্ধ রাখে বা সাম্প্রদায়িক সুরক্ষার নামে পুলিশি ঘেরাটোপে বন্দি করে ফেলে, তাহলে এই উৎসব তার প্রাণ হারাবে। বরং রাষ্ট্রের দায়িত্ব হওয়া উচিত প্রত্যন্ত অঞ্চল, স্কুল, কলেজ, স্থানীয় প্রশাসন, গ্রামীণ সাংস্কৃতিক দলগুলোর মাধ্যমে বৈশাখকে ভবিষ্যতের বহুত্ববাদী সমাজের ভিত্তি করে তোলা।
আজকের তরুণ প্রজন্ম অনেক বেশি তথ্যপ্রবাহের মাঝে রয়েছে, কিন্তু আত্মপরিচয়ের সংকটে ভুগছে। তারা জানে না তাদের ভাষা, গান, লোকশিল্প, উৎসব কীভাবে একদিন রাজনীতি ও সামাজিক মুক্তির হাতিয়ার ছিল।
তাদের জন্য বৈশাখ কেবল ফুলের সাজ নয়, বরং এক প্রতিরোধ-আলোকিত মানসিক প্রস্তুতি। বৈশাখ শেখায়, নতুন করে শুরু করতে হয়। খারাপকে পেছনে ফেলে ভালোকে গ্রহণ করতে হয়। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে হয়।
যেখানে নানা অজুহাতে মানুষ হত্যা করা হয়, মঞ্চ ভাঙা হয়, বই পোড়ানো হয়— সেখানে একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা, একটি গান, একটি কবিতা, একটি ঢাকের শব্দই হয়ে উঠতে পারে আলো, সাহস ও সংহতির কণ্ঠস্বর।
বাংলা নববর্ষ কোনো নিছক আনুষ্ঠানিকতা নয়। এটি একটি আত্ম-পরিচয়, সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব ও নৈতিক সাহসের অনুশীলন। এখানে মানুষ ধর্মে নয়, মানবতায় মিলিত হয়। এখানে ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ, শহর-গ্রাম, হিন্দু-মুসলিম বিভাজন বিলীন হয়। এটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ‘জাতীয়তাবাদী সংস্কৃতি’, যা প্রতিবার আমাদের শিখিয়ে দেয়, আমরা মানুষ, আমরা বাঙালি, আমরা একসাথে বাঁচতে চাই।
বৈশাখ আসুক বারবার, প্রতিবার। আলো নিয়ে, সাহস নিয়ে, ভালোবাসা নিয়ে।