Published : 06 May 2025, 01:20 AM
বছরের পর বছর ধরে ভুগতে থাকা দেশের স্বাস্থ্য খাতে গুণগত পরিবর্তন আনতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করার পদক্ষেপ চায় সংস্কার কমিশন। সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে আইন সংস্কার, নতুন আইন তৈরির প্রস্তাবও এসেছে। তবে কাঙ্খিত সংস্কারের পথ পেরিয়ে ভঙ্গুর এ খাতের স্বাস্থ্য কতটা ফেরানো যাবে সেই প্রশ্নও সামনে এসেছে।
কমিশনের সুপারিশগুলোকে এ খাতের দাওয়াই হিসেবে দেখছেন স্বাস্থ্যখাত বিশেষজ্ঞরা। এগুলোর বাস্তবায়ন হলে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চেহারা পাল্টে যাবে। তবে বর্তমান বাস্তবতায় সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা কঠিন বলে মনে করছেন তারা।
স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার কমিশনের এক গুচ্ছ সুপারিশের অনেক ভালো কিছুর ভিড়ে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয় কমিশন এড়িয়ে গেছে বলেও পর্যবেক্ষণ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
প্রস্তাবের বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলেই প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো শতভাগ বাস্তবায়ন করতে সময় লাগবে, একসাথে করাও যাবে না। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজটা শুরু করতে হবে।
”আমরা বলেছি বাস্তবায়নে যদি আমাদের হেল্প চায় আমরা তা সানন্দে করতে রাজি আছি।”
এ কমিশনের প্রতিবেদন জমা পড়ার মাধ্যমে গণ অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে দুই ধাপে গঠিত ১১ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ্যে এল।
সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে দীর্ঘ এ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিশন। কমিশন বলছে, স্বাস্থ্যখাতে প্রস্তাবিত রূপান্তর প্রক্রিয়াটি শেষ করতে আনুমানিক দুই বছর সময় লাগবে।
সরকারের আন্তঃমন্ত্রণালয়ের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটির মাধ্যমে এর বাস্তবায়নে কার্যক্রম পরিচালনার পরামর্শ কমিশনের।
কমিশন সংবিধান সংশোধন করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে একটি ‘মৌলিক অধিকার’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে।
এছাড়া বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস চালু, মেডিকেল পুলিশ গঠন, জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের মত একগুচ্ছ সুপারিশ এসেছে।
কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, "অতি দরিদ্র মানুষ সব ধরনের সেবা বিনামূল্যে পাবে৷ ১০ শতাংশ দরিদ্র রোগী বেসরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে সেবা পাবে। অত্যাবশ্যকীয় ঔষধ প্রাথমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ভর্তুকিমূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে এবং ওষুধের তালিকা প্রতি দুই বছর পর হালনাগাদ করতে হবে।
ক্যান্সার, ডায়বেটিসের ওষুধের ভ্যাট ট্যাক্স মওকুফ করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। জরুরি ওষুধের সংখ্যা বাড়ানো ও দুই বছর পর পর সেই তালিকা হালনাগাদ করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
কমিশন বলেছে, ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা চিকিৎসকের কাছে সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে তাদের পণ্যের প্রচার করতে পারবেন না। কেবল চিকিৎসকদের ই-মেইলে বা ডাকযোগে তাদের পণ্য সম্পর্কিত তথ্য পাঠাতে পারবেন।
প্রতিবেদন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনকে ‘যুগান্তকারী পদক্ষেপ' হিসেবে বর্ণনা করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
বলেন, “স্বাস্থ্য খাতের সমস্যাগুলো বহুদিনের সমস্যা, এর মাধ্যমে আমরা যদি এসব সমস্যার সমাধান করতে পারি তা হবে যুগান্তকারী ঘটনা।”
তিনি বলেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘদিন ধরে যেসব সমস্যা বিরাজ করছে, সেগুলোর সমাধানে কমিশনের সুপারিশগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে যেসব সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।
চিকিৎসা ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের ওপর জোর দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “এটা ছাড়া সমস্যা নিরসন সম্ভব নয়। চিকিৎসকদের যেখানে পোস্টিং সেখানে থাকাটা নিশ্চিত করতে হবে।”
বেশি জোর আইন সংস্কার ও তৈরিতে
কমিশনের সুপারিশের প্রথমদিকেই আছে বেশ কিছু আইনের সংস্কার এবং নতুন আইন প্রণয়ন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন আইন, বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস আইন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আইন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন, ওষুধের মূল নির্ধারণ ও প্রবেশাধিকার আইন, অ্যালায়েড হেলথ প্রফেশনাল কাউন্সিল আইন এবং বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল আইন করার সুপারিশ।
পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ও রোগী নিরাপত্তা আইন, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক অ্যাক্রেডিটেশন আইন, বাংলাদেশ সেইফ ফুড, ড্রাগ, আইভিডি ও মেডিকেল ডিভাইস আইন প্রণয়নের সুপারিশ এসেছে কমিশনের তরফে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, মেডিকেল শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন আইন, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল আইন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন এবং পৌর ও সিটি করপোরেশন আইনের সংশোধন প্রয়োজন বলে কমিশন প্রস্তাব করেছে।
একসঙ্গে এতগুলো আইন তৈরি এবং প্রচলিত আইনের সংস্কার ‘দুরূহ কাজ’ বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আবু জামিল ফয়সাল।
সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “স্বাস্থ্যবিষয়ক যেসব আইন আছে উনারা তার পরিবর্তন ও সংস্কার চাচ্ছেন। কিন্তু আইনের পরিবর্তন সহজে করা যায় না। এজন্য বিষয়টি অবাস্তব মনে হচ্ছে আমার কাছে অবাস্তব মনে হচ্ছে।”
সবার আগে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা
সংবিধান সংশোধন করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে কমিশন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এজন্য গ্রামে ও শহরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে। গ্রামে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র একত্রিত করে এবং শহরে ওয়ার্ডভিত্তিক কেন্দ্র গড়ে প্রথম স্তরে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রেফারেল ব্যবস্থা কাঠামোবদ্ধ এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক রেফারেল ব্যবস্থা করতে হবে যেন রোগীরা সঠিক সময়ে সঠিক স্তরের সেবা পায়।
অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের সর্বজনীন প্রাপ্যতা একটি মৌলিক স্বাস্থ্য অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করার সুপারিশও এসেছে।
সব নাগরিককে প্রয়োজনের ভিত্তিতে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ বিনামূল্যে (প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা পর্যায়ে এবং অতি দরিদ্রের ক্ষেত্রে) বা ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ করতে হবে। সরকারি ওষুধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোকে আধুনিকায়ন ও কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে পুনর্গঠিত ও শক্তিশালী করা, বেসরকারি খাত থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত ঔষধ সংগ্রহে কৌশলগত ক্রয়ব্যবস্থা জোরদার করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
কমিশন বলেছে, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে প্রতিটি সরকারি হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের ফার্মেসি ২৪ ঘণ্টা চালু রাখতে হবে। এই ফার্মেসিগুলো জাতীয় ফার্মেসি নেটওয়ার্কের আওতায় পরিচালিত হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, “প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে আলাদা অধিদপ্তর চাচ্ছেন। এটা ভালো উদ্যোগ, কিন্তু এটা করতে অনেক লোকবল, অর্থ দরকার। বিনামুল্যে ওষুধ দেওয়ার চিন্তাটা খুবই ভালো।”
ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণ
ওষুধ কোম্পানিগুলো যে চিকিৎসকদের প্রভাবিত করতে না পারে সেজন্য হাসপাতালগুলোয় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম কমানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
কমিশন বলেছে, প্রস্তাবিত ওষুধের নমুনা বা উপহার দিয়ে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা নিষিদ্ধ করতে হবে। ওষুধ কোম্পানিগুলো শুধু চিকিৎসকদের ই-মেইল বা ডাকযোগে তাদের পণ্য সম্পর্কিত তথ্য পাঠাতে পারবে। প্রতিনিধিরা দৈনন্দিন সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে তাদের ওষুধের প্রচার করতে পারবেন না।
এছাড়া মেডিকেল কনফারেন্স আয়োজনের আগে বাংলাদেশে মেডিকেল অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল অনুমোদিত সিপিডি ক্রেডিট পয়েন্ট নেওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। মেডিকেল কনফারেন্সের আয়-ব্যয়ের হিসাব কর অফিসে জমা দিতে হবে এবং এর অনুলিপি বিএমইসিতে জমা দিতে হবে।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নতুন কোনো ওষুধ বাজারে এলে সেটার ব্যবহার, ডোজ কী হবে, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী হবে– সেগুলো চিকিৎসকদের জানানো জরুরি। এ কারণে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করেন।
“এগুলো রিসার্চ প্রোডাক্ট, প্রতিবছর গবেষণার ওপর এনালাইসিস করে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হয়। সারাবিশ্বজুড়েই। এখন ইনোভেশন ডাক্তারের কাছে পৌঁছাবে কে? কোম্পানির প্রতিনিধিরা সরাসরি চিকিৎসকদের কাছে গেলে কিছু সমস্যা হয় ঠিক। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আলোচনার দরকার আছে।”
তিনি বলেন, কমিশন সুপারিশ করেছে চিকিৎসকরা যেন মোট ওষুধের ২৫ শতাংশ জেনেরিক লেখে।
“কিন্তু কোন ওষুধের ২৫ শতাংশ সেটা এখনও ক্লিয়ার হয়নি। সেটা কি ক্যান্সার ওষুধের, অ্যান্টিবায়োটিক না কমন মেডিসিনের ২৫ শতাংশ সেটা ক্লিয়ার করতে হবে। জেনেরিক নামে হলে বিক্রয়কর্মী একটি ভালো কোম্পানির ওষুধ দেবে না কি কম মানের কোম্পানির ওষুধ দিবে সেটাও প্রশ্ন। জেনেরিক যে ধরবেন, সব ফার্মাসিতে তো ফার্মাসিস্টও নাই।”
চিকিৎসক, রোগীর নিরাপত্তায় যা আছে
বাংলাদেশে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে হাসপাতালে ভাঙচুর এবং চিকিৎসক ও স্বাস্থকর্মীদের ওপর হামলা নিয়মিত ঘটনা। এজন্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা এবং হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সহিংসতা রোধে ‘মেডিকেল পুলিশ’ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে রোগীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে কমিশন বলছে, রোগীদের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য আধুনিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে হবে। বিএমডিসি, বিএনএমসি, ফার্মেসি কাউন্সিল ও অ্যালায়েড হেলথ প্রফেশনাল কাউন্সিলের আইনগত ক্ষমতা ও কাঠামো কার্যকর করা। পেশাগত অবহেলার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার না করা এবং ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত ও সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে কমিশনে।
বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ
সরকারকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবাকে বাজেটের ভিত্তি হিসেবে ধরে প্রতি বছর স্বাস্থ্যখাতে জাতীয় আয়ের কমপক্ষে ৫ শতাংশ এবং বাজেটের ১৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে।
টেকসই স্বাস্থ্যখাতের পাশাপাশি এ খাতের জন্য ন্যায্য ও পর্যাপ্ত অর্থায়ন নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য অর্থায়ন সুরক্ষা আইন করতে হবে।
স্বাস্থ্যকে জনকল্যাণমূলক ও মেধাভিত্তিক খাত হিসেবে চিহ্নিত করে জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও টেকসই উন্নয়নের কৌশলগত খাত হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
এছাড়া সকল নীতিতে স্বাস্থ্য ধারণাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া, বিপর্যয়কর চিকিৎসা ব্যয় কমাতে লক্ষ্যভিত্তিক কর্মসূচি চালুর পরামর্শ দিয়েছে কমিশন।
বিদেশে চিকিৎসা নির্ভরতা কমিয়ে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক মানসম্মত সেন্টার অব এক্সিলেন্স প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়ার তাগিদ এসেছে।
উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বকে উৎসাহ দেওয়া, উচ্চ প্রযুক্তিনির্ভর বিশেষায়িত হাসপাতালে বিনিয়োগে সহযোগিতা করা এবং মেডিকেল ট্যুরিজম সম্প্রসারণের সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিটি বিভাগে একটি আন্তর্জাতিক মানের আঞ্চলিক রেফারেল হাসপাতাল গড়ে তুলতে হবে। এই হাসপাতাল বিশেষায়িত সেবার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। এজন্য প্রয়োজনে বিদেশি বিনিয়োগ বা বেসরকারি বিনিয়োগ আহ্বান করা যায় বলে কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বলেছে।
এছাড়া চিকিৎসা এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষায় সংস্কার; মানহীন প্রতিষ্ঠান বন্ধ, বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন, স্বাস্থ্য গবেষণায় বাজেট বাড়ানো, চিকিৎসা জনস্বাস্থ্য এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কারের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন।
বাস্তবায়ন সম্ভব?
স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব এমন প্রশ্নে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সুপারিশগুলো ভালো; মৌলিক কিছু বিষয় পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। কিছু বিষয় আছে অংশীজনদের সহযোগিতা ছাড়া বাস্তবায়ন করা সম্ভব না।
“এজন্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রাখতে হবে। তাদের আপত্তির অজুহাতে যেন উদ্যোগটা ব্যাহত না হয়। এগুলো মৌলিক বিষয় না, এগুলো নিয়ে আলোচনা চলবে। কিন্তু মৌলিক বিষয়গুলো যেমন স্বাস্থ্যসেবা কমিশন গঠন, বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মান নিয়ন্ত্রণ, সেবার মুল্য নির্ধারণ করা খুবই প্রয়োজন। একটা বিষয় আমার কাছে মনে হয়।”
“সবগুলো সুপারিশ বাস্তবায়নে পার্লামেন্ট লাগবে না, প্রশাসনিক অধ্যাদেশ করে সেগুলো সংস্কার করা যাবে সেগুলো যেন দ্রুতই করে ফেলে। সবার সদিচ্ছা থাকলে এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা খুবই সম্ভব। সুফল পেতে সময় লাগবে, কিন্তু কাজটা দ্রুত শুরু করতেই হবে,” যোগ করেন তিনি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, কমিশনের সুপারিশ খুবই ভালো কিন্তু কতটা বাস্তবসম্মত দেখা প্রয়োজন। বাস্তবসম্মত এবং খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায় এমন সুপারিশ করা প্রয়োজন ছিল।
“এতগুলো পরিবর্তন করতে হলে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলতে হবে এটা এই মুহূর্তে সম্ভব না। সুপারিশগুলো সবই ইতিবাচক, কিন্তু বাস্তবায়ন করতে যদি ১০ বছর লাগে তাহলে সেটা করে তো লাভ নাই। উনাদের বলা উচিত ছিল যেটা নাকি বাস্তবসম্মত এবং খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়।“
তিনি বলেন, কর্মস্থলে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি, নার্সিংখাতে সংস্কারসহ কিছু বিষয় কমিশনের সুপারিশে অনুপস্থিত।
“ডাক্তাররা যে কর্মস্থলে থাকে না, তা কীভাবে বন্ধ করবেন সেটা নিয়ে কিছুই বললেন না। নার্স ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের ডিজি বা এডিজি হয় সরকারি কর্মকর্তা। কেন নার্সদের ডিজি বানানো যাবে না সেটা তো বলা হল না। নার্সকে ডিজি করলে নার্সিং খাতের কাজ আরও সহজ হবে।”
চিকিৎসকদের কর্মস্থলে থাকা নিশ্চিত করতে হবে: ইউনূস
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে সংবিধানে 'মৌলিক অধিকার' ঘোষণার সুপারিশ