Published : 05 May 2025, 02:42 PM
সংবিধান সংশোধন করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে একটি ‘মৌলিক অধিকার’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন।
এছাড়া বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস চালু, মেডিকেল পুলিশ গঠন, জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের মত একগুচ্ছ সুপারিশ রয়েছে এ কমিশনের প্রতিবেদনে।
জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে এই কমিশনের সদস্যরা সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। পরে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে তারা প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, "অতি দরিদ্র মানুষ সব ধরনের সেবা বিনামূল্যে পাবে৷ ১০ শতাংশ দরিদ্র রোগী বেসরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে সেবা পাবে। অত্যাবশ্যকীয় ঔষধ প্রাথমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ভর্তুকিমূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে এবং ওষুধের তালিকা প্রতি দুই বছর পর হালনাগাদ করতে হবে।
ক্যান্সার, ডায়বেটিসের ওষুধের ভ্যাট ট্যাক্স মওকুফ করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। জরুরি ওষুধের সংখ্যা বাড়ানো ও দুই বছর পর পর সেই তালিকা হালনাগাদ করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
কমিশন বলেছে, ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা চিকিৎসকের কাছে সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে তাদের পণ্যের প্রচার করতে পারবেন না। কেবল চিকিৎসকদের ই-মেইলে বা ডাকযোগে তাদের পণ্য সম্পর্কিত তথ্য পাঠাতে পারবেন।
কমিশনের সদস্য ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেন, “ওষুধের নমুনা বা উপহার দিয়ে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।"
বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের পরিবর্তে 'বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস' নামে একটি স্বতন্ত্র কাঠামো গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। সেজন্য আলাদা পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) গঠন এবং জনবল কাঠামো পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে কমিশন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যোগ্যতা, স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রেখে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও নিয়োগের সুপারিশ করার জন্য উচ্চ পর্যায়ের সার্চ কমিটি গঠন করতে হবে।
বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস প্রধান ও উপপ্রধান, মহাপরিচালক, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রো-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, বিএমডিসি ও বিএমআরসি চেয়ারম্যানের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগ্যতা সম্পর্কে জাতীয় সংসদকে অবহিত করতে হবে।
স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় আয়ের কমপক্ষে ৫ শতাংশ এবং জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখার সুপারিশ এসেছে সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সেবা বিভাগ পৃথককরণ, জনবল নিয়োগ ও উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ, নতুন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের আগেই প্রয়োজনীয় ও দক্ষ জনবল নিয়োগ নিশ্চিত করা, বাজেট বরাদ্দ ও দালাল দমন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন ও রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ গঠন, ফিজিওথেরাপি বিভাগ ও পদ সৃষ্টি এবং গ্রাম পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে প্রতিবেদনে।
সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারে কিছু নতুন আইন করার কথা বলা হয়েছে। আইনগুলো হল– স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ও রোগী নিরাপত্তা আইন; হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক এক্রেডিটেশন আইন; বাংলাদেশ সেইফ ফুড, ড্রাগ, আইভিডি ও মেডিকেল ডিভাইস আইন।
এছাড়া বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, মেডিকেল শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন আইন, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল আইন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন, পৌর ও সিটি কপোরেশন আইন সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সংস্কার কমিশনের সদস্যরা এ পর্যন্ত ৫১টি বৈঠক করেছেন। কমিশন চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল এবং ঢাকায় ৩২টি পরামর্শ সভা করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বিভাগের মাধ্যমে ৮২৫৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মতামত নেওয়া হয়েছে।