আগের ঘটনায় ব্যবস্থা না নেওয়ায় জাবিতে ফের ধর্ষণ: ১৮ নাগরিক

বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা দ্ব্যার্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই যে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে এ হীনকর্ম জনগণের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2024, 12:46 PM
Updated : 6 Feb 2024, 12:46 PM

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে হলে আটকে স্ত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর সেখানকার ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতির’ কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন ১৮ নাগরিক।

তারা বলছেন, অতীতে এমন অভিযোগ উঠলেও সেসব ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই কারণে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।

মঙ্গলবার সাংস্কৃতিক সংগঠক নাসির উদ্দীন ইউসুফ স্বাক্ষরিত বিবৃতিটি সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হয়।

গত শনিবার রাতে স্বামীকে মীর মশাররফ হোসেন হলে আটকে রেখে এক গৃহবধূকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের এক নেতা এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। ফিরে আসে আড়াই দশক আগে ‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ আন্দোলনের স্মৃতি।

১৯৯৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দীন মানিকের বিরুদ্ধে ‘ধর্ষণের সেঞ্চুরির’ অভিযোগ উঠেছিল। পরে ছাত্র-শিক্ষকদের সম্মিলিত আন্দোলনের মুখে মানিক ও তার সহযোগীরা ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হয়। সেই ঘটনা সারাদেশে আলোড়ন তোলে।

১৮ নাগরিকের বিবৃতিতে বলা হয়, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতঃপূর্বে আরও ঘটনা ঘটেছে। কোনো ধর্ষণের কোনরূপ তদন্ত বা সুরাহা কর্তৃপক্ষ করেনি। বিশাল এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নিরাপদ ও শৃঙ্খলা আনার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নেয়নি। এই সুযোগে উচ্ছৃঙ্খল কতিপয় ছাত্র এই ধরনের অমানবিক ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হচ্ছে।"

ছাত্রলীগের নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, “এই ধর্ষক ছাত্রদের যে কথিত রাজনৈতিক পরিচয় গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে তা আমাদের শঙ্কিত করে তুলেছে। আজকের যে ছাত্র, সে আগামী দিনের রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনার দায়িত্ব প্রাপ্ত হবে। সেই ছাত্রদের যদি এই নৈতিক অধঃপতন হয়, তবে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা চরম উদ্বিগ্ন।"

ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে ১৮ নাগরিক বলেছেন, “আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই যে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে এ হীনকর্ম জনগণের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

“আমরা সরকারের কাছে এই জঘন্য অপরাধের দ্রুত তদন্ত ও বিচার চাই এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য কঠিন পদক্ষেপ ও শক্ত অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা আশা করি, বাংলাদেশের কোথাও আর কোনো নারী ধর্ষিত হবে না।"

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আছেন- সৈয়দ হাসান ইমাম, অনুপম সেন, সারওয়ার আলী, রামেন্দু মজুমদার, আবেদ খান, ফেরদৌসী মজুমদার, মামুনুর রশীদ, মফিদুল হক, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবীর, কেরামত মওলা, মিলনকান্তি দে, লাকী ইনাম, সারা যাকের, শিমূল ইউসুফ, গোলাম কুদ্দুছ ও আহকামউল্লাহ।

আরও পড়ুন

Also Read: জাবিতে ধর্ষণের প্রতিবাদের নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’

Also Read: ‘ধর্ষকের জন্ম বিচারহীনতায়’: জাহাঙ্গীরনগরে ক্ষোভ

Also Read: ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে জাহাঙ্গীরনগরে মশাল মিছিল

Also Read: জাবিতে ধর্ষণ: জড়িতদের সনদ স্থগিত, ক্যাম্পাসে 'অবাঞ্ছিত'

Also Read: ধর্ষণ: জাহাঙ্গীরনগরের চার শিক্ষার্থী ৩ দিনের রিমান্ডে

Also Read: ধর্ষণ: বিক্ষোভে উত্তাল জাহাঙ্গীরনগর

Also Read: জাবিতে ধর্ষণ: ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজ ও মামুনকে সহায়তা করেন চারজন

Also Read: জাবিতে স্বামীকে আটকে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার