জাবিতে ধর্ষণ: মশাল মিছিল শেষে উপাচার্য ও শিক্ষার্থীদের বিতণ্ডা

উপাচার্য বলেন, “মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বের করার ব্যাপারে আমি এখনও পুরোপুরি সফল হতে পারিনি। তবে আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি৷”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2024, 06:02 PM
Updated : 11 Feb 2024, 06:02 PM

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ দফা দাবিতে মশাল মিছিল করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংগঠন 'নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ'। মিছিল শেষে সমাবেশ করার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে।

রোববার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে বের হয়ে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা ও নতুন প্রশাসনিক ভবন ঘুরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়৷ পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা৷

একপর্যায়ে বাসভবন থেকে বেরিয়ে আসেন উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম। এ সময় উপাচার্যের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরদের বেশ কিছুক্ষণ বাক-বিতণ্ডা হয়।

এ সময় শিক্ষার্থীদের দাবি ও সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য বলেন, “মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বের করার ব্যাপারে আমি এখনও পুরোপুরি সফল হতে পারিনি। তবে আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি৷ কোনো হলে এখন আর গণরুম নেই৷ যারা অছাত্র তাদেরকে বের করে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে আসন দেওয়া হয়েছে৷”

“আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি অছাত্রদের বের করার। আশা করি, আগামী এক-দুদিনের মধ্যে সব অছাত্র বিতাড়িত করা হবে।”

তবে উপাচার্যের বক্তব্য ‘ভিত্তিহীন’ উল্লেখ করে আন্দোলনকারী ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ বলেন, “মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থী বের করা ‘আইওয়াশ’ ছাড়া কিছুই না। এখন পর্যন্ত সব হলে খবর নিয়ে আমরা জানতে পেরেছি, মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের তারা বের করতে পারেনি। হলগুলোতে মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থী রয়েছে আড়াই হাজার। আর এই প্রশাসন পাঁচ কার্যদিবসে ১০০ জনকেও বের করতে পারেনি।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে হলে আটকে স্ত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে এক ছাত্রলীগ নেতা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। জড়িতদের বিচার দাবিতে ক্যাম্পাস উত্তাল হয়ে ওঠে।

এর মধ্যেই সম্প্রতি সেখানে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও নিপীড়নমূলক ঘটনাগুলোর বিচার নিশ্চিত করতে আন্দোলনের রূপরেখা বাস্তবায়নে ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’ নামে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ঘোষণা করা হয়।

মঞ্চের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- র্ধষক ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্তপূর্বক নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং র‌্যাগিং সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে; নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিষ্পত্তি করাসহ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনতে হবে; নিপীড়কদের সহায়তাকারী প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অপরাধ তদন্ত করতে হবে এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদেরকে তদন্ত চলাকালে প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে; মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে, জড়িতদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণাপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে সন্ধ্যায় মশাল মিছিল করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

পরে সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় মাদক বাণিজ্যের জায়গা হয়ে গেছে। তারই সূত্র ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অপকর্ম ঘটছে৷ অপকর্ম রোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয়নি৷ তারা এখনো বহাল তবিয়তে চেয়ারে বসে আছেন৷

“ছাত্রদের রেজাল্ট খারাপ হওয়ার পিছনে রয়েছে গণরুম। এখানে থাকা শিক্ষার্থীরাই পরবর্তীতে মাদক সিন্ডিকেট থেকে শুরু করে নানা ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে৷ এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিস্থিতির জন্য কোনোভাবেই সুখকর নয় বরং এটি আমাদের জন্য লজ্জাকর।”

নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসন হাতে হাত রেখে হাঁটছে৷ রাষ্ট্রের মতো বিশ্ববিদ্যালয়েও গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো জাকসু নির্বাচন হয়নি, নিপীড়ন ও অপকর্মের মত নানা ঘটনার বিচার হয়নি।”

৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ আবাসিক হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে কৌশলে বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, তার পরিচিত মামুনুর রশীদ মামুনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে।

পরে ভুক্তভোগীর স্বামী ছয়জনকে আসামি করে ঘটনার রাতেই আশুলিয়া থানায় ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন’ আইনে মামলা করেন।

এ ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণার পাশাপাশি সনদ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ধর্ষণের ঘটনা খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

আরও পড়ুন

জাবিতে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সংহতি সমাবেশে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও

জাবিতে ধর্ষণ: দিনভর বিক্ষোভে নামল আরও অনেকেই

‘ধর্ষকের জন্ম বিচারহীনতায়’: জাহাঙ্গীরনগরে ক্ষোভ

রাবিতে ধর্ষণ বিরোধী মিছিলে ‘ছাত্রলীগের বাধা’

ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে জাহাঙ্গীরনগরে মশাল মিছিল

ধর্ষণ: বিক্ষোভে উত্তাল জাহাঙ্গীরনগর

জাবিতে স্বামীকে আটকে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

জাবিতে ধর্ষণ: জড়িতদের সনদ স্থগিত, ক্যাম্পাসে 'অবাঞ্ছিত'

ধর্ষণ: জাহাঙ্গীরনগরের চার শিক্ষার্থী ৩ দিনের রিমান্ডে

জাবিতে স্বামীকে আটকে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

জাবিতে ধর্ষণ: ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজ ও মামুনকে সহায়তা করেন চারজন

জাবিতে ধর্ষণের প্রতিবাদের নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’