দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেন সিনেটের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধিরা।
Published : 07 Feb 2024, 07:21 PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে হলে আটকে স্ত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণের বিচার ও বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের চতুর্থ দিনে আরও অনেকেই শামিল হয়েছেন।
বুধবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন করেছে সিনেটের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধিরা।
এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অচলাবস্থা দূর এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের দাবি জানান।
দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও দেন তারা।
মানববন্ধনে সিনেটের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম সেলিম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদের ছাত্রত্ব নেই তবু হলে থেকে অপকর্ম করে যাচ্ছে, তাদের বিচার দাবি করছি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের নামে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, কিন্তু তারপরও তিনি স্বপদে বহাল রয়েছেন। এ সব ঘটনার বিচার দাবি করছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির বলেন, “যারা ধর্ষণের মত ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের ফাঁসি দেওয়া হোক। প্রাধ্যক্ষ ও ওয়ার্ডেনদের নিয়মিত হলে থাকতে হবে। এ ছাড়া রাতে নির্দিষ্ট সময়ে যেন শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে আসে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কমে যাবে।”
‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই’
এদিকে দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের বিচার এবং বহিরাগত ও অছাত্রমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।
এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষক অংশ নেন। এটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক শাহেদ রানা।
মানববন্ধনে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী বলেন, “সিন্ডিকেট থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্তে কিছু ত্রুটি রয়েছে, সেটা উপাচার্যকে অবহিত করেছি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মদদে অছাত্ররা হলে বসবাস করছে, তাদের বিতাড়িত করা ছাড়া কোনো সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।”
ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী বলেন, “রাষ্ট্রীয় আইনে ধর্ষক মোস্তাফিজুর রহমানের সর্বোচ্চ বিচার চাই। তেমনি ধর্ষককে পালিয়ে যেতে মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর যদি সহায়তা করে থাকেন, তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদেরও বিচার করতে হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ইনস্টিটিউট অব বিজনেস আ্যডমিনিস্ট্রেশনের অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, “আমরা দুঃখিত, লজ্জিত ও ক্ষুব্ধ। কিছু কুলাঙ্গার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। তারা যে ঘটনা ঘটিয়েছে, সেটাকে কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এই ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলকে কার্যকর করার দাবি
অন্যদিকে দুপুর ২টায় চার দাবিতে ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’ বিক্ষোভ মিছিল করেছে। পূর্বঘোষিত এই বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর থেকে শুরু হয়ে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে সিন্ডিকেট সভা ডেকে যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত এক শিক্ষকের অভিযোগটি নিষ্পত্তি করার আলটিমেটাম দেন তারা।
এই মঞ্চের দাবিগুলো হল- ধর্ষক ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আসন নিশ্চিত করা, নিপীড়ক শিক্ষক মাহামুদুর রহমান জনির বিচার নিশ্চিত করা, নিপীড়নে সহায়তাকারী প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্টের অপরাধ তদন্তপূর্বক প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা।
এ সময় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, “ধর্ষকের শাস্তির পাশাপাশি সহায়তাকারী সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও প্রাধ্যক্ষ ধর্ষককে প্রশ্রয় দিয়ে থাকে তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।”
এ ছাড়া যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিষয়টি অ্যাজেন্ডাভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সিন্ডিকেট মিটিং করতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এ ছাড়া বেলা ৩টায় ধর্ষণের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে একদল শিক্ষার্থী। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলকে কার্যকর করার দাবি জানান তারা।
অন্যদিকে বিকেল ৫টায় একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ‘জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট’।
সিন্ডিকেট সভা স্থগিত
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে সভাটি স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
এর আগে মঙ্গলবার ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’র আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে উঠা যৌন নিপীড়নের বিষয়টি অ্যাজেন্ডাভুক্ত করার দাবি জানান। বিষয়টি অ্যাজেন্ডাভুক্ত না করলে বুধবার সিন্ডিকেট সভা আটকানোর ঘোষণা দেন তারা।
সিন্ডিকেট সভা স্থগিতের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, “আমাদের প্রশাসনিক কিছু কাজ রয়েছে। এগুলো সম্পন্ন করার জন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। কাজগুলো হলে আমরা পুনরায় সিন্ডিকেট সভার তারিখ নির্ধারণ করা হবে।”
তবে ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের’ সদস্যসচিব মাহফুজুল ইসলাম মেঘ বলেন, “সিন্ডিকেট আটকানোর ঘোষণায় কর্তৃপক্ষ সভা স্থগিত করেছে। তবে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে নতুন সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করে ওই শিক্ষকের বিষয়টি অ্যাজেন্ডাভুক্ত না করলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব। পাঁচ দিনের আলটিমেটামের বিষয়টি আমরা উপাচার্যকে জানিয়ে এসেছি।”
আরও পড়ুন
জাবিতে স্বামীকে আটকে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
জাবি প্রশাসনের ব্যর্থতায় যৌন নিপীড়ন বন্ধ হয়নি: ইউজিসি
আগের ঘটনায় ব্যবস্থা না নেওয়ায় জাবিতে ফের ধর্ষণ: ১৮ নাগরিক
জাবিতে ধর্ষণের প্রতিবাদের নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’
‘ধর্ষকের জন্ম বিচারহীনতায়’: জাহাঙ্গীরনগরে ক্ষোভ
ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে জাহাঙ্গীরনগরে মশাল মিছিল
জাবিতে ধর্ষণ: জড়িতদের সনদ স্থগিত, ক্যাম্পাসে 'অবাঞ্ছিত'
ধর্ষণ: জাহাঙ্গীরনগরের চার শিক্ষার্থী ৩ দিনের রিমান্ডে
ধর্ষণ: বিক্ষোভে উত্তাল জাহাঙ্গীরনগর
জাবিতে ধর্ষণ: ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজ ও মামুনকে সহায়তা করেন চারজন