“আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্ধষক, যৌন নিপীড়কের ঠাঁই নেই বলে প্রমাণ করে দিতে পারি তাহলে পুরো দেশের জন্য সেটা একটা দৃষ্টান্ত হবে।”
Published : 10 Feb 2024, 08:03 PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ দফা দাবিতে সংহতি সমাবেশ করেছে ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’; যেখানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও অংশ নিয়েছেন।
শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় শুরু হওয়া এই সংহতি সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়ে পাঁচ দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন ও দ্রুত দাবিগুলো বাস্তবায়ন যেন করা হয় সে দাবি জানান।
পাঁচ দফা দাবি হলো- র্ধষক ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্তপূর্বক নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং র্যাগিং সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে; নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিষ্পত্তি করাসহ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনতে হবে; নিপীড়কদের সহায়তাকারী প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অপরাধ তদন্ত করতে হবে এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদেরকে তদন্ত চলাকালে প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে; মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে, জড়িতদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণাপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ আবাসিক হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে কৌশলে বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, তার পরিচিত মামুনুর রশীদ মামুনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে।
পরে ভুক্তভোগীর স্বামী ছয়জনকে আসামি করে ঘটনার রাতেই আশুলিয়া থানায় ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন’ আইনে মামলা করেন।
এ ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণার পাশাপাশি সনদ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ধর্ষণের ঘটনা খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
সেখানে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও নিপীড়নমূলক ঘটনাগুলোর বিচার নিশ্চিত করতে আন্দোলনের রূপরেখা বাস্তবায়নে সোমবার ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’ নামে প্ল্যাটফর্ম ঘোষণা করা হয়।
মঞ্চের সংহতি সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল বলেন, “আমাদের আন্দোলন দানবের বিরুদ্ধে। ধর্ষক মোস্তাফিজ শুধু একজন ব্যক্তি নন, তার পক্ষে পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে একটা মহল। এই মহলের সঙ্গে যুক্ত আছে ক্ষমতা, প্রশাসন ও নির্দিষ্ট গোষ্ঠী। আমাদের এই লড়াইয়ে জিততে হবে। দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে যদি প্রশাসনের কোনো গাফিলতি দেখি তাহলে আমরা কঠোর কর্মসূচির দিকে যাব।”
সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে কারা সিট বাণিজ্য করছে তাদের খুঁজে বের করে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু প্রশাসন অছাত্রদের বের করার নামে শুধু অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের বের করছে। বাকি অছাত্ররা হলে থাকছে। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরাও রয়েছে।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও সিনেট সদস্য শিহাব উদ্দিন খান বলেন, “প্রশাসনের উদাসীনতা আবারও প্রমাণিত হয়েছে মাদক ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায়। এই আন্দোলনের মাধ্যমে যদি আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্ধষক, যৌন নিপীড়কের ঠাঁই নেই বলে প্রমাণ করে দিতে পারি তাহলে পুরো দেশের জন্য সেটা একটা দৃষ্টান্ত হবে।”
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন- প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানি প্রমুখ।
সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে বক্তব্য দেন- জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাথী মজুমদার, জাবি শাখা ছাত্র ফ্রন্টের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন প্রিন্স ও সুস্মিতা মরিয়ম, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি মাহি মাহফুজ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামি আল-জাহিদ প্রীতম।
সংহতি সমাবেশের সমাপনী বক্তব্যে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, “বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে আন্দোলন হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য যেহেতু এক সেহেতু সবার প্রতিই আমাদের সমর্থন আছে। ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
“তবে আন্দোলন চলাকালে আমরা লক্ষ্য করছি যে, ছাত্রলীগের অছাত্র নেতারা এখনও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেন-দরবারে যায়। এতকিছু ঘটে যাওয়ার পরও কর্তৃপক্ষ কীভাবে অছাত্রদের সঙ্গে বৈঠকে বসে সেটাই বুঝে আসে না। প্রশাসন যে এখনও টালবাহানা করছে সেটা এখনও স্পষ্ট।”
এ সময় ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’র পক্ষ থেকে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে মশাল মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:
‘ধর্ষকের জন্ম বিচারহীনতায়’: জাহাঙ্গীরনগরে ক্ষোভ
রাবিতে ধর্ষণ বিরোধী মিছিলে ‘ছাত্রলীগের বাধা’
ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে জাহাঙ্গীরনগরে মশাল মিছিল
ধর্ষণ: বিক্ষোভে উত্তাল জাহাঙ্গীরনগর
জাবিতে স্বামীকে আটকে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
জাবিতে ধর্ষণ: জড়িতদের সনদ স্থগিত, ক্যাম্পাসে 'অবাঞ্ছিত'
ধর্ষণ: জাহাঙ্গীরনগরের চার শিক্ষার্থী ৩ দিনের রিমান্ডে
জাবিতে স্বামীকে আটকে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
জাবিতে ধর্ষণ: ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজ ও মামুনকে সহায়তা করেন চারজন
জাবিতে ধর্ষণের প্রতিবাদের নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’