জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন এই বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা।
Published : 25 Feb 2024, 07:47 PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি মুছে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী গ্রাফিতি আঁকার জেরে ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।
প্রগতিশীল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ রোববার এ কর্মসূচি পালন করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশ ভাস্কর্যের সামনে থেকে বিকাল ৪টার দিকে মিছিলটি শুরু হয়। পরে পরিবহন চত্বরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন এই বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নূর-এ-তামিম স্রোতের সঞ্চালনায় সমাবেশে ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) সংগঠক সজিব বলেন, “আমরা দেখছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান দিনে দিনে কিভাবে ক্ষমতাসীন দলের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে। মত প্রকাশ স্বাধীনভাবে না করতে পারলে, স্বাধীনভাবে গ্রাফিতি না আঁকতে পারলে গণতান্ত্রিক চর্চা হুমকির মুখে পড়ে।”
সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ধর্ষণকাণ্ডের পর একটা মহল ষড়যন্ত্র করে দুইজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সজিব।
তিনি বলেন, “যারা সবসময় দুর্নীতি-অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই প্রশাসন। বারবার জিজ্ঞাসা করার পরও প্রশাসন বলতে পারছে না, কোন ধারায় বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রশাসন কোনোভাবেই মামলার বিষয়টিও খোলাসা করছে না।
“আমরা আমাদের আন্দোলন জারি রাখব ততদিন যতদিন পর্যন্ত না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বৈরাচারী মনোভাব উৎখাত করতে পারব।”
ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের পশ্চিম পাশের দেয়ালে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি চিত্র মুছে ধর্ষণবিরোধী দেয়ালচিত্র আঁকেন জাহাঙ্গীরনগর ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি অমর্ত্য রায় ও সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী।
তারা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী। সেই দেয়ালচিত্রে তারা ‘ধর্ষণ ও স্বৈরাচার থেকে আজাদী’ বাক্যটি জুড়ে দেন।
বঙ্গবন্ধুর ছবি মুছে দেয়ালচিত্র অঙ্কনকারীদের শাস্তির দাবিতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর থেকে আমরণ অনশনে বসেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই নেতা এনামুল হক ও রিয়াজুল ইসলাম৷
টানা চারদিনের অনশন শেষে ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের আশ্বাসে ডাবের পানি খেয়ে অনশন ভাঙেন ছাত্রলীগের ওই দুই নেতা।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফীকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মঙ্গলবার সিন্ডিকেট সভায় কমিটির সুপারিশে অমর্ত্য রায় ও ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলীকে এক বছরের বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে এই দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সাভারের আশুলিয়া থানায় ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ মামলা দায়ের করে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতিতে এ মামলা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন।
তিনি বলেন, “সিন্ডিকেটের আদেশ আর আমার ঊর্ধ্বতনের লিখিত নির্দেশ অনুসারে আমি বাদী হয়ে মামলাটি করেছি।”
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন একাংশের সহ সভাপতি আশফার রহমান নবীন বলেন, "ধর্ষণ-নিপীড়ন, হলে অছাত্র, টর্চার সেল ও মাদকের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যখন আন্দোলনে উত্তাল, তখন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই একদল ষড়যন্ত্র করেছে।
“বঙ্গবন্ধুর ক্ষয়ে যাওয়া একটি দেয়ালচিত্র মুছে ধর্ষণ বিরোধী গ্রাফিতি অঙ্কনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন বৈধ শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতাকে নীতিবহির্ভূতভাবে বহিষ্কার ও ভিত্তিহীন মামলা দায়েরের তোড়জোড় করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার গলা টিপে ধরেছে।"
"আমরা প্রশাসনের এই স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত বাতিলের আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে সকল স্বেচ্ছাচারী কাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।" যোগ করেন তিনি।