“ক্যাম্পাসে যত কিছুই হোক উপাচার্য নির্বিকার থাকেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো অভিভাবক নেই; আছে ধর্ষক, চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের।”
Published : 06 Feb 2024, 08:24 PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনার জড়িতদের শাস্তি ও নিপীড়ন মুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে চলা আন্দোলন তৃতীয় দিনে গড়িয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের’ ব্যানারে মানববন্ধন করেন দেড় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
এছাড়া এদিন বেলা ২টায় নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়।
শনিবার রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ আবাসিক হলে ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ও তার পরিচিত মামুনুর রশীদ মামুনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই সোমবার নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়িনবিরোধী মঞ্চ’ আত্মপ্রকাশ করে। মানববন্ধন শেষে মঞ্চের কর্মকাণ্ড পরিচালনার কমিটি ঘোষণা করা হয়।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব বলেন, প্রক্টর-প্রাধ্যক্ষ ধর্ষককে পালাতে সহযোগিতা করেছেন। যারা ‘ছাত্রলীগের ছায়া’ হিসেবে কাজ করে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকার নৈতিক অধিকার নেই।
দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, “ক্যাম্পাসে যত কিছুই হোক উপাচার্য নির্বিকার থাকেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো অভিভাবক নেই; আছে ধর্ষক, চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের আশ্রয় দিয়ে হলে রাখছে।
“এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা অছাত্রদের হল থেকে বের করতে চাই। অপরাধের বিচার চাই, ক্যাম্পাসের নির্বিকার প্রশাসনের নিরসন চাই।”
ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, হল প্রশাসন প্রথমে ধর্ষণের কথা অস্বীকার করেছে। এরপর তারা ধর্ষককে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। প্রশাসন সিন্ডিকেট সভায় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা যদি বাস্তবায়ন না করে তাহলে আমরা এক দফা দাবিতে আন্দোলনে যাব।”
“উপাচার্যকে বলতে চাই আপনি আপনার চেয়ার খুবই পছন্দ করেন। আপনি যদি চেয়ারে থাকতে চান তাহলে দ্রুত এই ঘটনার বিচার করুন।” যোগ করেন তিনি।
ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, “পাঁচ দিন সময়ের তিন দিন পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনও অছাত্রদের কোনো তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি। তারা ধর্ষণের ঘটনায় মামলা না করে থানায় শুধু একটি অভিযোগ দায়ের করেছে।
“উপাচার্য বারবার বলেন আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কমিটমেন্ট দেন কিন্তু তা বাস্তবায়ন করেন না।”
ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া ও অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিমও এ সময় বক্তব্য দেন।
মঞ্চের নেতৃত্বে রায়হান রাইন-মেঘ
‘নিপীড়িনবিরোধী মঞ্চের’ কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য গঠিত কমিটিতে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইনকে আহ্বায়ক ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ ইসলাম মেঘকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
এরপর মঞ্চ থেকে চার দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হল-ধর্ষণে জড়িত অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, অছাত্রদের হল থেকে বের করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আসন নিশ্চিত করা, যৌন নিপীড়নে অভিযোগের মুখে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা।
এছাড়া ক্যাম্পাসের সম্প্রতি সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল হাসান এবং মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলমের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা ও তদন্ত চলাকালে তাদের সাময়িক অব্যাহতি দেওয়াও দাবির মধ্যে রয়েছে।
কমিটি গঠনের পর বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণাও আসে।
এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর স্বামী শনিবার রাতেই বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে আশুলিয়া থানায় ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন’ আইনে মামলা করেন পুলিশ জানায়।
মামলায় মোস্তাফিজ ও মামুনুর রশীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এবং বাকি চারজনের বিরুদ্ধে মারধর ও আসামিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
সাভার ও আশুলিয়া থানা সমন্বয় করে আসামিদের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছ; বাকি দুজনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে পুলিশ জানায়।
এ ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণার পাশাপাশি সনদ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ধর্ষণের ঘটনা খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
সেই শাস্তির যেন যথাযথ বাস্তবায়ন হয় তার দাবি করেছেন আন্দোলনকারীরা।
আরও পড়ুন:
‘ধর্ষকের জন্ম বিচারহীনতায়’: জাহাঙ্গীরনগরে ক্ষোভ
রাবিতে ধর্ষণ বিরোধী মিছিলে ‘ছাত্রলীগের বাধা’
ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে জাহাঙ্গীরনগরে মশাল মিছিল
ধর্ষণ: বিক্ষোভে উত্তাল জাহাঙ্গীরনগর
জাবিতে স্বামীকে আটকে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
জাবিতে ধর্ষণ: জড়িতদের সনদ স্থগিত, ক্যাম্পাসে 'অবাঞ্ছিত'
ধর্ষণ: জাহাঙ্গীরনগরের চার শিক্ষার্থী ৩ দিনের রিমান্ডে
জাবিতে স্বামীকে আটকে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
জাবিতে ধর্ষণ: ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজ ও মামুনকে সহায়তা করেন চারজন