এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
Published : 12 Feb 2024, 04:43 PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ সাজাসহ পাঁচ দফা দাবির বিষয়ে আচার্যকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
সোমবার সকাল ৯টায় ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’ এর ব্যানারে দুই ঘণ্টার প্রতীকী অবরোধের আন্দোলন থেকে এ আহ্বান জানানো হয়।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি শেষ করেন।
দুই ঘণ্টার প্রতীকী অবরোধ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি বলেন, “জাবি প্রশাসন যেহেতু মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বের করাসহ অন্য বিষয়গুলো সমাধান করতে পারছে না, সেহেতু এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে আচার্যকে আহ্বান জানাই।”
এসময় তিনি আরও বলেন, “গতকাল আমরা উপাচার্যের সাথে দেখা করেছি। দাবির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে উপাচার্য জানিয়েছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বের করার জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন কিন্তু পারেননি। মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও হল প্রভোস্টের ব্যাপারেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।”
ধর্ষণের ঘটনায় প্রক্টর ও ওই হলের প্রভোস্টের লজ্জায় পদত্যাগ করা উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তারা যে ব্যর্থ, সেটা তাদের মাথায়ই নেই।”
প্রক্টর ও হল প্রভোস্টের প্রতি দৃষ্টিপাত করে তিনি বলেন, “আপনাদের বলব, নিজেদের পদ থেকে সরে যান। ‘দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছি’ এ কথা যারা বলতে পারেন না, তাদের নৈতিক জায়গা আর কতটুকুই থাকে? অথচ এই প্রক্টরকেই বারবার ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে।”
অবরোধের সময় ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’ এর সদস্যসচিব, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজুল ইসলাম মেঘ বলেন, “সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের কোনো বাস্তবায়ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করতে পারেনি। তারা পাঁচ কর্মদিবস সময় নিয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময় গতকাল শেষ হলেও অছাত্রদের হল থেকে বের করা তো দূরে থাক, প্রশাসন তাদের নিয়ে ভাগবাটোয়ারার মিটিং করছে প্রতিনিয়ত। তাই পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা আজ অবরোধ করছি। আমাদের ন্যায্য দাবি না মানা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।”
প্রতীকী অবরোধ মঙ্গলবারও চলবে বলে আন্দোলন থেকে ঘোষণা আসে।
নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- ধর্ষক ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা; মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্তপূর্বক নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত ও র্যাগিং সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা; নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিষ্পত্তি করাসহ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা; নিপীড়কদের সহায়তাকারী প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অপরাধ তদন্ত ও সুষ্ঠু হওয়ার স্বার্থে তদন্ত চলাকালে তাদের প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া; মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে জড়িতদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।
এসব ব্যাপারে বক্তব্য জানতে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এদিকে, রোববার রাতেও মশাল মিছিল বের করে ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’।
মিছিলটি উপাচার্য ভবনের সামনে গিয়ে স্লোগান দিতে থাকলে প্রায় আধ ঘণ্টা পর বাসভবন থেকে বের হয় আসেন উপাচার্য।
এ সময় আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পড়েন তিনি।
পরে নির্ধারিত পাঁচ কর্মদিবস পার হলেও উপাচার্য প্রতিশ্রুতি রাখতে না পারায় আন্দোলনকারীরা প্রশাসনিক ভবন অবরোধের ঘোষণা দেন।
আরও পড়ুন
জাবি প্রশাসনের ব্যর্থতায় যৌন নিপীড়ন বন্ধ হয়নি: ইউজিসি
ধর্ষণ: বিক্ষোভে উত্তাল জাহাঙ্গীরনগর
জাবিতে স্বামীকে আটকে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
আগের ঘটনায় ব্যবস্থা না নেওয়ায় জাবিতে ফের ধর্ষণ: ১৮ নাগরিক
জাবিতে ধর্ষণের প্রতিবাদের নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’
‘ধর্ষকের জন্ম বিচারহীনতায়’: জাহাঙ্গীরনগরে ক্ষোভ
ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে জাহাঙ্গীরনগরে মশাল মিছিল
জাবিতে ধর্ষণ: জড়িতদের সনদ স্থগিত, ক্যাম্পাসে 'অবাঞ্ছিত'
ধর্ষণ: জাহাঙ্গীরনগরের চার শিক্ষার্থী ৩ দিনের রিমান্ডে
ধর্ষণ: বিক্ষোভে উত্তাল জাহাঙ্গীরনগর
জাবিতে ধর্ষণ: ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজ ও মামুনকে সহায়তা করেন চারজন
জাবিতে স্বামীকে আটকে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার