জাবিতে ধর্ষণ: তদন্তের স্বার্থে প্রক্টর-প্রাধ্যক্ষের অব্যাহতির দাবি

বাকি চার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানান বক্তারা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2024, 05:03 PM
Updated : 3 March 2024, 05:03 PM

স্বামীকে আটকে গৃহবধূকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষকে প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম 'নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ'।

রোববার দুপুর দেড়টার দিকে ধর্ষণ, নিপীড়ন ও মাদকমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে এক মানববন্ধনে বক্তারা এই দাবি জানান।

মানববন্ধনে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব বলেন, “আমাদের আন্দোলনের একটি অংশ সফল হয়েছে। আমরা জানি, একজন শিক্ষক নৈতিক অবক্ষয়জনিত কাজে লিপ্ত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসানের বিরুদ্ধে এতগুলো নৈতিক অবক্ষয়জনিত কাজের অভিযোগ থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তাকে বারবার প্রক্টরের পদে রাখা হয়, মনে হয় যেন জাহাঙ্গীরনগরের 'আজীবন প্রক্টর' তিনি।”

দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদা আকন্দ বলেন, “আমরা আশা করব, প্রশাসন দ্রুত ধর্ষণের ঘটনায় হওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লিখিত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করবে। আমরা একটি নৈতিক অবস্থান থেকে আন্দোলন করছি। বিশ্ববিদ্যালয় যেন মনে না করে আমরা গুটিকয়েক মানুষ আন্দোলন করছি। আমরা এখানে গুটিকয়েক মানুষ থাকলেও ক্যাম্পাসের সর্বস্তরের মানুষের নৈতিক সমর্থন আমাদের সঙ্গে রয়েছে। আমরা এই নৈতিক সমর্থনের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি এবং সামনে আরও এগিয়ে যাব।”

মানববন্ধনে জাবি শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি ও প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, “নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের পাঁচ দফা দাবির একটি দাবি (যৌন নিপীড়নের অভিযুক্ত শিক্ষককে মাহমুদুর রহমান জনিকে বরখাস্ত) বাস্তবায়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আমার কাছে উপাচার্যের নৈতিক মূল্যবোধ নিয়ে অনেকগুলো প্রশ্ন জেগেছে। যে তদন্তে জনিকে বরখাস্ত করা হয়েছে ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর যে দায়মুক্তিপত্র লেখতে সহযোগিতা করেছে সেটা তদন্ত প্রতিবেদনে আসেনি।

“এই ধরনের গর্হিত কাজ করার অপরাধে প্রক্টরের ব্যাপারে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই জানেন। প্রক্টর কোনোভাবেই এই অপরাধের দায় এড়াতে পারেন না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বা সিন্ডিকেট তার এই অপরাধের শাস্তি দেয়নি। এই প্রক্টরকে শুধু অপসারণ করলে হবে না তার শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে।”

মানবন্ধনে আরও বক্তব্য দেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ।

মানববন্ধন শেষে আন্দোলনকারীরা উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের সদস্যসচিব মাহফুজুল ইসলাম মেঘ বলেন, “আমাদের বাকি দাবিগুলো উপাচার্যকে জানিয়েছি। উপাচার্যকে আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ সাহায্য করব বলে নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ থেকে জানানো হয়েছে।”

বাকি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানান তিনি।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে কৌশলে হলের পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, তার পরিচিত মামুনুর রশীদ মামুনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে।

পরে ভুক্তভোগীর স্বামী ছয়জনকে আসামি করে ঘটনার রাতেই আশুলিয়া থানায় ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন’ আইনে মামলা করেন।

তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের ব্যানারে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এর মধ্যে যৌন নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনিকে বরখাস্তের মাধ্যমে একটি দাবি পূরণ হয়েছে বলে জানান মঞ্চের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

তাদের বাকী চার দফা দাবি হলো- ধর্ষক ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্তপূর্বক নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং র‌্যাগিং সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

এ ছাড়া নিপীড়কদের সহায়তাকারী প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অপরাধ তদন্ত করতে হবে এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদেরকে তদন্ত চলাকালে প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে; মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে, জড়িতদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণাপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

আরও পড়ুন:

জাবি ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতার বহিষ্কারাদেশ বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ

জাবিতে ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতাকে বহিষ্কারে বিক্ষোভ

যৌন নিপীড়ন: জাবি শিক্ষক মাহমুদুর চাকরিচ্যুত

জাবিতে নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের মশাল মিছিল

জাবিতে ধর্ষণ: তৃতীয় দিনের মতো প্রশাসনিক ভবন অবরোধ

জাবিতে ধর্ষণ: আচার্যকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান

জাবিতে ধর্ষণ: মশাল মিছিল শেষে উপাচার্য ও শিক্ষার্থীদের বিতণ্ডা

জাবিতে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সংহতি সমাবেশে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও

জাবিতে ধর্ষণ: রিমান্ড শেষে কারাগারে ৪ আসামি

জাহাঙ্গীরনগরে ধর্ষণ: ঘটনার যে বিবরণ দিল র‌্যাব

জাহাঙ্গীরনগরে ‘ধর্ষণ’: বাকি দুই আসামিও গ্রেপ্তার

জাবিতে ধর্ষণ: দিনভর বিক্ষোভে নামল আরও অনেকেই

জাবি প্রশাসনের ব্যর্থতায় যৌন নিপীড়ন বন্ধ হয়নি: ইউজিসি

জাবিতে ধর্ষণ: তৃতীয় দিনেও উত্তাল ক্যাম্পাস

আগের ঘটনায় ব্যবস্থা না নেওয়ায় জাবিতে ফের ধর্ষণ: ১৮ নাগরিক

জাবিতে ধর্ষণের প্রতিবাদের নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’

‘ধর্ষকের জন্ম বিচারহীনতায়’: জাহাঙ্গীরনগরে ক্ষোভ

ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে জাহাঙ্গীরনগরে মশাল মিছিল

জাবিতে ধর্ষণ: জড়িতদের সনদ স্থগিত, ক্যাম্পাসে 'অবাঞ্ছিত'

ধর্ষণ: জাহাঙ্গীরনগরের চার শিক্ষার্থী ৩ দিনের রিমান্ডে

ধর্ষণ: বিক্ষোভে উত্তাল জাহাঙ্গীরনগর

জাবিতে ধর্ষণ: ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজ ও মামুনকে সহায়তা করেন চারজন

জাবিতে স্বামীকে আটকে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

জাবিতে ধর্ষক-নিপীড়কের কুশপুতুল দাহ