পাশাপাশি নতুন প্রক্টরও নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
Published : 18 Mar 2024, 05:01 PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে গৃহবধূকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গড়ে উঠা আন্দোলনের মুখে প্রক্টরকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।
ধর্ষণের দায় প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসানকেও নিতে হবে- নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের এমন দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্যেই সোমবার বিকাল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক আদেশে তার পদত্যাগের তথ্য জানানো হয়।
পাশাপাশি নতুন প্রক্টরও নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আদেশে বলা হয়, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফিরোজ উল হাসানের লিখিত অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে এবং তাকে প্রক্টরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।”
৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের বোটানিক্যাল গার্ডেনে গৃহবধূকে ‘দলবেঁধে ধর্ষণের’ ঘটনায় নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ তাদের আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে সবশেষ প্রশাসনিক ভবন অবরোধের কর্মসূচি চালিয়ে আসছিল।
টানা তিন কর্মদিবস অবরোধের পর ১৩ মার্চ উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনকারীরা ‘প্রক্টর ও প্রাধ্যক্ষের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ কিংবা প্রশাসনের অব্যাহতি’র আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করে। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে ১৮ মার্চ (সোমবার) পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।
এর মধ্যেই এদিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে আসেন উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম। তিনি লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে ঘোষণা দেন, “প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দুয়েকটি পদে পরিবর্তন আসতে পারে।”
কোন পদে পরিবর্তন আসতে পারে জানতে চাইলে উপাচার্য তখন বলেন, “বিকালের মধ্যে সেটা জানা যাবে।”
এরপরই বিকাল ৩টার প্রক্টরের পদত্যাগ ও নতুন প্রক্টরের নিয়োগের আদেশ আসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
জাবি প্রক্টর-প্রাধ্যক্ষের ‘পদত্যাগ বা অব্যাহতির’ শর্তে অবরোধ স্থগিত
প্রক্টরের পদত্যাগের পর হল প্রাধ্যক্ষের ‘দায়’ও সামনে এনেছেন নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক অধ্যাপক রায়হান রাইন।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রধান দাবিগুলোর একটি ছিল মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া। ৩ ফেব্রুয়ারির ধর্ষণের ঘটনায় এতদিন পর্যন্ত কেউ কোনও দায় নেয়নি কিন্তু আমরা ওই হলের প্রাধ্যক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের দায় নেওয়াটা সঙ্গত মনে করেছি। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একজনকে (প্রক্টর) অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
“দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ওই হল প্রাধ্যক্ষের ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। আমরা মনে করি, প্রাধ্যক্ষের অবশ্যই দায় আছে। একটা হলে যখন টর্চার সেল থাকে কিংবা সেখানে বহিরাগতরা আসে, মাদক ব্যবসা চলে; বহিরাগতরা এসে ধর্ষণের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটায় সেখানে অবশ্যই প্রাধ্যক্ষের দায় থাকে। প্রাধ্যক্ষকে সেই দায় নিতে হবে।”
রায়হান রাইন মনে করেন, “হলে এ ধরনের কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে ওই হল প্রাধ্যক্ষকে দায় গ্রহণ করতে হবে। এবং এই মর্মে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে অন্যান্য হল প্রাধ্যক্ষকেও বার্তা দেওয়া জরুরি।”
নতুন প্রক্টর আলমগীর কবীর
একই আদেশে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ও উপাত্ত বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আলমগীর কবীরকে সোমবার বিকাল থেকে পরবর্তী সময়ে নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়মে সুবিধাদি ভোগ করবেন।
গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, তার পরিচিত মামুনুর রশীদ মামুনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে।
পরে ভুক্তভোগীর স্বামী ছয়জনকে আসামি করে ৩ ফেব্রুয়ারি রাতেই আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের ব্যানারে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- ধর্ষক ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা; মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্ত করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা এবং র্যাগিং সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা; ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা।
এ ছাড়া নিপীড়কদের ‘সহায়তাকারী’ প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অপরাধ তদন্ত করা এবং তদন্ত চলাকালে প্রশাসনিক পদ থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া; মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে, জড়িতদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও রয়েছে আন্দোলনকারীদের।
আরও পড়ুন: