‘ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে’ অনেকে বাড়ি ছাড়ায় কৃষিকাজ যেমন ব্যাহত হচ্ছে; ঠিক তেমনি এ জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনও ‘নানাভাবে’ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
Published : 11 Jul 2024, 01:36 AM
পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন ‘কেএনএফের সদস্যদের’ ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র লুট ও ব্যবস্থাপককে অপহরণের ঘটনার পর তিন মাস পেরিয়ে গেলেও স্বাভাবিক হয়নি বান্দরবানের রুমার সোনালী ব্যাংক শাখার লেনদেন।
তবে পরদিন ডাকাতির শিকার সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের থানচি শাখার কার্যক্রম অন্য সব সময়ের মতই চলেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দুই উপজেলায় তিন ব্যাংক শাখায় ডাকাতির ঘটনার পর যৌথ বাহিনীর কেএনএফ-বিরোধী অভিযানে ‘গণহারে গ্রেপ্তারের’ মধ্যে চলাফেরা, খাদ্য সংগ্রহসহ নানা বিধিনিষেধের মধ্যে পড়তে হচ্ছে বলে বমরা অভিযোগ করছেন।
এ অবস্থায় ‘ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে’ অনেকে বাড়ি ছাড়ায় তাদের কৃষিকাজ যেমন ব্যাহত হচ্ছে; ঠিক তেমনি এ জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনও ‘নানাভাবে’ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বমসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরাও পাহাড়ের শান্তির স্বার্থে এই অবস্থার অবসান চাইছেন। তবে তারা জানেন না এর শেষ কোথায়।
এপ্রিলের শুরুতে রুমা ও থানচিতে ১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। রুমার সোনালি ব্যাংকে ডাকাতি হয় ২ এপ্রিল রাতে। পরদিন ভরদুপুরে থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতরা হানা দেয়।
পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ দুটি ঘটনায় জড়িত পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফের সশস্ত্র সদস্যরা, যারা পাহাড়ে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত।
ওই ঘটনার পর বান্দরবানের দুই উপজেলার চিরচেনা দৃশ্যপট হঠাৎ বদলে যায়। আনুষ্ঠাকিভাবে বন্ধ হয়ে যায় পর্যটকের আগমন। উপজেলা সদরে সাপ্তাহিক বাজারে নেমে আসে সুনসান নীরবতা।
রুমা উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, পাহাড়ি, বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা অনেকেই নাম প্রকাশ করে কথা বলতে চাননি। তবে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তাদের অধিকাংশই বলেছেন, বাইরে থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হলেও ভেতরে ‘চাপা আতঙ্কে’ রয়েছে সবাই।
‘গ্রাহকের জমা টাকা দিয়ে লেনদেন’
রুমা সোনালী ব্যাংক শাখার একজন কর্মকতা বলেন, ২ এপ্রিল ডাকাতির ঘটনার পর ব্যাংকের কার্যক্রম কয়েক দিন একেবারেই বন্ধ ছিল। পরে ব্যাংক খোলা হলেও কার্যক্রম সীমিত রাখা হয়।
“নিরাপত্তার কারণে টাকা নিয়ে আসা হচ্ছে না। গ্রাহকদের জমা টাকা দিয়ে লেনদেনের কার্যক্রম চলছে। কোনো গ্রাহক বেশি টাকা উত্তোলন করতে এলে চাহিদা অনুযায়ী দেওয়া যাচ্ছে না।
“এমনকি ব্যাংকে টাকা না থাকায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ঠিক সময়ে বেতন পান না। অপেক্ষা করতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ের কয়েক দিন পরই বেতন পান তারা। নিরাপত্তার কারণে বান্দরবান থেকে টাকা পাঠাতেও পারেন না।”
তবে থানচিতে কৃষি ব্যাংকের শাখায় কার্যক্রম স্বাভাবিক বলে জানান সেখানকার এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, “এখন ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন উত্তোলনে কোনো সমস্যা নেই। গ্রাহকদের জমা টাকা দিয়ে লেনদেন করা হচ্ছে।”
তবে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অতিরিক্ত টাকা জমা রাখা হচ্ছে না জানিয়ে ওই ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, “নিরাপত্তার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদসরা সার্বক্ষণিক টহলে রয়েছেন।”
কৃষি ব্যাংকের গ্রাহক থানচি বাজারের একজন বাসিন্দা বলেন, তিনি এপ্রিল মাসে কৃষি ব্যাংকে গিয়ে ৯০ হাজার টাকার চেক দিলে টাকা পাননি। এরপর মে মাসেও একবার এক লাখ ১০ হাজার এবং পরেরবার এক লাখ ২৯ হাজার টাকার চেক ফেরত এসেছে।
“ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থেকে বলে দেওয়া হয়, এত টাকা ব্যাংকে নেই। কোনো গ্রাহক বেশি টাকা ডিপোজিট করলে তখন হয়ত পাওয়া যাবে- এমনটা বলেছে আমাকে।”
মামলা, গ্রেপ্তার ও নিহত
ব্যাংক ডাকাতি, পুলিশ ও আনসার সদস্যের অস্ত্র লুটের ঘটনায় জেলার চার থানায় মোট ২৫টি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবান মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) বিশ্বজিৎ সিংহ।
তিনি বলেন, তার মধ্যে রুমা থানায় ১৫টি, থানচিতে ছয়টি, রোয়াংছড়িতে তিনটি ও সদরে একটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, রুমা থানায় ৮৮ জন (নারী ২৪ জন), থানচিতে ১০ জন (নারী দুজন, একজন বাঙালি গাড়ি চালকসহ) ও রোয়াংছড়িতে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া বান্দরবান সদর এলাকা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় কেএনএফ সদস্য সন্দেহে ১৩ জন এবং সেনাবাহিনীর এক সদস্যও নিহত হয়েছেন। অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে ২৪টি।
বাস্তুচ্যুতি
কেএনএফ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘাতের কারণে ভয় ও আতঙ্কে বম জনগোষ্ঠীর লোকজন এলাকা ছাড়তে শুরু করে ২০২২ সালে শেষ দিকে। সে সময় ৫০০ জনের মত বম সদস্য প্রতিবেশী ভারতের মিজোরামে গিয়ে আশ্রয় নেয় বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়। পরে তাদের মধ্যে কেউ কেউ পরিবার নিয়ে ফিরে আসেন।
বম জনগোষ্ঠীর মানুষদের নিয়ে কাজ করা বম সোশাল কাউন্সিলের সভাপতি লালজারলম বম বলছিলেন, তারা মূলত মিজোরামের লংত্লাই জেলার মংবুক, চান্দু প্রজেক্ট এবং পারভা-৩ এলাকায় আশ্রয় নেন। এর বাইরে মিয়ানমারের চিন রাজ্যেও ৭০টি বম পরিবার আশ্রয় নেয়।
বমদের পাহাড়ে নিজেদের বাড়িঘরে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের মধ্যেই রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ঘটে জানিয়ে লালজারলম বম বলেন, “এরপর ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে আবার মানুষ বাড়িঘর ছাড়ে। আমরা সবাইকে ফিরিয়ে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করছি।”
কত সংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে জানতে চাইলে বম সোশাল কাউন্সিলের সভাপতি বলেন, “আমাদের হিসাব অনুযায়ী, আড়াই হাজারের বেশি।”
লালজারলম বম জানান, মিজোরামে যারা শরণার্থী হিসেবে গেছেন, তাদের মধ্যে ১০-১১ জনের মৃত্যুর খবরও পেয়েছেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রুমা সদরের বাসিন্দা বম জনগোষ্ঠীর এক সদস্য বলেন, মিজোরামে পালিয়ে যাওয়া বমরা ছয়টি এলাকায় শরণার্থী হিসেবে আছে। সেগুলো হল- চামদুর প্রজেক্ট, চামদুর ত্লায়, ভাথুয়ামপুই, মংবুক, মাওত্লাং এবং বাংত্লাং। কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনদের কাছেও উঠেছেন।
তিনি বলছিলেন, “অনেকেই যেতে গিয়ে বিএসএফের বাধার মুখে ফিরেও এসেছেন। হয়ত সুযোগ পেলে আবারও যাবেন।”
স্কুল বন্ধ
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অনেক শিক্ষার্থী এলাকা ছেড়ে গেছে; আবার কেএনএফ-বিরোধী অভিযানকে কেন্দ্র করে ভয় ও আতঙ্কে অনেকেই স্কুলে আসছে না।
এ অবস্থায় রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নের দার্জিলিং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাকনিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চৈক্ষ্যং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বর্তমানে বন্ধ আছে বলে জানিয়েছেন রুমা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ চিরান।
তিনি বলেন, “পাকনিয়ার পাড়া ও চৈক্ষ্যং পাড়া স্কুল শুরু থেকেই (২০২২ সালে অক্টোবর) বন্ধ ছিল। এবার এপ্রিল মাসের অভিযানকে কেন্দ্র করে নতুন করে আরও দুটি স্কুল পাইন্দু ইউনিয়নের মুয়ালপি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দার্জিলিং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়।
“সবশেষ চেষ্টা করে ৩ জুলাই মুয়ালপি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি খোলা গেছে। তবে দার্জিলিং পাড়ার স্কুলটি চেষ্টা করেও খোলা যায়নি। ফলে এখন তিনটি স্কুল বন্ধ আছে।”
কেন এমন হয়েছে জানতে চাইলে আশীষ চিরান বলেন, “শিক্ষকরা ক্লাস নিতেই স্কুলে যান; কিন্তু শিক্ষার্থী না আসায় স্কুল বন্ধ রয়েছে। কোনো কোনো শিক্ষার্থীর পরিবার হয়ত কোথাও চলে গেছে। যারা আছে তারাও ভয়ে আসে না।”
পাঁচ বম হোস্টেলও বন্ধ
দূর পাহাড়ের বম শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার সুবিধার জন্য বান্দরবান শহরে হোস্টেলের মত করে থাকেন। সেখানে কোনো একজন অভিভাবককে বেতনের ভিত্তিতে হোস্টেল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার কাজ থাকে টাকা-পয়সা তোলা, বাজার-সদাই করা এবং রান্নাবান্নার কাজ দেখভাল করা।
বম সোশাল কাউন্সিলের সভাপতি লালজারলম বম বলেন, শহরের কালাঘাটা, বালাঘাটা, নিউ গুলশান, বড়ুয়ারটেক অঞ্চলে এসব বম ছাত্র হোস্টেল ছিল। কিন্তু যৌথবাহিনী অভিযান শুরুর পর থেকে সেই পাঁচটি হোস্টেলই বন্ধ আছে। এসব হোস্টেলে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল।
কেন বন্ধ আছে জানতে চাইলে বম নেতা বলেন, “অভিভাবকরা এসে তাদের সন্তানদের নিয়ে গেছে। কেউ কেউ বাড়ি গিয়ে আর ফেরেনি। ফলে তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি। কেন তারা আসছে না কিংবা কোথায় আছে তাও জানি না।”
তবে লালজারলম বম নিজেও বম ছাত্রদের একটি ছোট হোস্টেল চালান। সেখানে ১৫ জনের মত শিক্ষার্থী থাকেন। তারা সবাই আছেন বলেও জানান তিনি।
রুমায় চালের সমস্যা
কেএনএফ-বিরোধী যৌথ অভিযান শুরুর পর থেকে বাজার থেকে ‘বেঁধে দেওয়া’ নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করতে হচ্ছে বলে রুমায় বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় বারবার বাজারে আসতে তাদের প্রচুর খরচ হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, বাজার থেকে পাঁচ কেজির বেশি চাল তারা সংগ্রহ করতে পারছেন না।
যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরুর পর পরই ১৭ এপ্রিল রুমা পরিদর্শনে এসেছিলেন র্যাবের তৎকালীন প্রধান এম খুরশীদ হোসেন। তখন বান্দরবানের সার্কিট হাউজে সাংবাদিকরা বিষয়টি নিয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।
জবাবে র্যাব প্রধান বলেছিলেন, “অপারেশন এলাকায় কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম থাকে। বিধিনিষেধ থাকে। এগুলো মানতে হবে। এর আগে অপারেশনে দেখা গেছে, জঙ্গি ও সর্বহারাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছি। তারা বাজারে আসত না। কিছু লোক ছিল, এগুলো সাপোর্ট দিত।”
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, “একটা পরিবারে কত চাল লাগে? ১০ কেজি লাগে, ১০ মণ তো লাগে না। সুতরাং যার যতটুকু দরকার সেটুকুই অ্যালাউ করা হচ্ছে।”
এরপর ১৯ মে জেলা শহরের উজানি পাড়ার ইভেনজেলিক্যাল খ্রিস্টিয়ান চার্চ-ইসিসি প্রাঙ্গণে ‘সাধারণ বম জনগোষ্ঠী’র ব্যানারে এক মানববন্ধনে বক্তারা, কেএনএফের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে সাধারণ পাহাড়িদের স্বাভাবিক চলাফেরার দাবি জানান। সেখানেও খাদ্যপণ্য সংগ্রহের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বক্তারা।
তবে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কেউ কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
সম্প্রতি রুমা উপজেলার বগালেকের আগে কমলা বাজার এলাকার একটি পাড়ার কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
তারা বলছিলেন, কমলা বাজার থেকে রুমা বাজারে মোটরসাইকেলে ভাড়ায় আসতে খরচ লাগে ২০০ টাকা। আসা-যাওয়ার করতে পাঁচ কেজির চালের জন্য মোট ভাড়া খরচ হয় ৪০০ টাকা। ছোট পরিবার হলে পাঁচ কেজি চাল কোনো রকমে দু-তিন দিন চলে যায়। কিন্তু বড় পরিবার সদস্যদের বার বার বাজারে আসা লাগে।
পাইন্দু ইউনিয়নে মারমা সম্প্রদায়ের এক ওয়ার্ড সদস্য বলেন, “আমাদের এলাকা উপজেলা সদর থেকে বেশি ভেতরে। মোটরসাইকেলে রুমা বাজারে আসতে একজনের পাঁচ থেকে ছয়শ টাকার বেশি খরচ হয়। বাজার যাওয়া লোকজন বেশি হলে সবাই মিলে চাঁদের গাড়ি (জিপ গাড়ি) ভাড়া করে যায়। আসা-যাওয়া ৩ হাজার টাকা খরচ পড়ে। তখন গড় হিসাব করলে ভাড়া কম আসে। কিন্তু এভাবে এতজন জড়ো করে বাজারে যাওয়া সবসময় সম্ভব নয়। যে যার মত করে কাজে-কর্মে ব্যস্ততা রয়েছে।
“যারা জুম চাষ করে বছর খোরাকি ধান পেয়েছে তাদের একটু সুবিধা আছে। এলাকার সবাই জুমচাষি হিসেবে এ বছরও জুম চাষ করেছে। তবে পালিয়ে থাকায় বমদের কেউ কেউ জুমচাষ করতে পারেনি। সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন ‘দিন এনে দিন খাওয়া’ লোকেরা। চেয়ারম্যানকে বলা হলেও কাজ হয়নি।”
রুমা বাজারের চাল ব্যবসায়ী পনোলাল চক্রবর্তী বলেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সপ্তাহে ছোট-বড় মিলে দেড়শ বস্তা চাল বিক্রি হত (ছোট বস্তা ২৫ কেজি, বড় বস্তা ৫০ কেজি)। বর্তমানে সপ্তাহে ৪০ বস্তার বেশি চাল বিক্রি হয় না। একেবারে জরুরি প্রয়োজন না হলে লোকজন বাজারেও আসে না।
রুমা বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি অঞ্জন বড়ুয়া বলেন, “পাঁচ কেজির বেশি চাল বিক্রি করা যাবে না বলে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ম এখনও বহাল রয়েছে। সব দোকানদাররা এই নির্দেশনা মেনে চলছে। চাইলে কেউ এর বেশিও চাল কিনতে পারবে। তবে সেটা অনুমতিসাপেক্ষে।”
তবে চালের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুর রহমান।
তিনি বলেন, “রুমার পরিস্থিতি দিন দিন ভাল হচ্ছে। বেটার সিচুয়েশন আছে। সরকারি কর্মসূচি হিসেবে গ্রামীণ দুঃস্থ মহিলা ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় কার্ডধারী উপকারভোগীরা নিয়মিত চাল পাচ্ছেন। ঈদের আগেও ঈদ উপহার হিসেবে কার্ডধারীরা ১০ কেজি করে চাল পেয়েছেন।”
থানচিতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার
থানচি উপজেলা সদরে রবি ও বুধবারের সাপ্তাহিক বাজার আবার আগের মতই জমছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে লোকজন একটু কম।
থানচি সদর পৌঁছার আগেই বলিপাড়া ইউনিয়ন; সেখানেও সাপ্তাহিক বাজার দুদিন- শনি ও মঙ্গলবার। এই দুই এলাকার বাজারেই ক্রেতা-বিক্রেতা সমাগম দিন দিন বাড়ছে বলে স্থানীয়রা জানান।
থানচি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও থানচি বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি খামলাই ম্রো বলেন, “ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার রেশ ধরে শুরুর দিকে কেনাকাটায় বিধিনিষেধ ছিল। পাঁচ কেজির বেশি চাল কেনা যাবে না এমন নিয়ম। পরে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে শিথিল করা হয়। এখন যে কেউ এক বস্তা পর্যন্ত (৫০ কেজি) চাল কিনতে পারে। থানচির পরিস্থিতি ভালো বলতে হয়।”
বলিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াঅং মারমা বলেন, “সাপ্তাহিক বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা দিন দিন বাড়ছে। কোনো সমস্যা নেই। এখন তো আম-আনারসের মৌসুম। চাষিরা যে যার মত করে বাজারে নিয়ে এসে বিক্রি করছে।”
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে থানচির ইউএনও মোহাম্মদ মামুন বলেন, “পরিস্থিতি ভালো। সবকিছু স্বাভাবিক চলছে। লোকজনও বাজারে আসে। পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় পর্যটকদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেওয়া হয়েছে।
“তবে প্রশাসনের অনুমোদিত কেবল তিন্দু, রেমাক্রী ও তমা তুঙ্গীতেই যেতে পারবেন তারা। সব কিছু পর্যটকদের গাইডদের নির্দেশনা দেওয়া আছে।”
পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জানিয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্কবস্থায় রয়েছে। এখনও পর্যন্ত অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি। অভিযান এখনও চলমান। যৌথ বাহিনীর সদসরা রয়েছে, কমান্ডো রয়েছে। জেলা পুলিশ ও সেনা সদস্যরাও রয়েছে। পরিস্থিতি দিন দিন স্বাভাবিক হচ্ছে। আশা করি, আরও স্বাভাবিক হবে।”
পুরনো খবর:
স্বাধীন দেশে কোনো অবস্থাতেই 'সশস্ত্র সংগঠন' মেনে নেব না: র্যাব প্রধান
স্বাভাবিক চলাফেরার দাবি সাধারণ বমদের
রুমায় যৌথ অভিযানে কেএনএফ সদস্য নিহত: আইএসপিআর
রুমায় ব্যাংক ডাকাতি: কেএনএফ সন্দেহে আরও ৩ নারী গ্রেপ্তার
থানচি ব্যাংক ডাকাতি: দুইজন দুই দিনের রিমান্ডে
কেএনএফ সন্দেহে গ্রেপ্তার ৫২ জন রিমান্ডে
রুমায় ব্যাংক ডাকাতি-অস্ত্র লুট: গ্রেপ্তার আরও ৪
কেএনএফবিরোধী যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার ৫৪
কেএনএফের ২ সদস্য আটক, অস্ত্র-গুলি উদ্ধার: আইএসপিআর
কেএনএফের ‘প্রধান সমন্বয়ক’ গ্রেপ্তার
ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুট: বম সম্প্রদায়ের আরও তিনজন গ্রেপ্তার
হঠাৎ বাতিল বান্দরবানের হোটেল-রিসোর্টের বুকিং, নেপথ্যে কী
এবার কেএনএফের‘সহযোগী’রুমা থেকে গ্রেপ্তার
বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪, গাড়ি জব্দ
কেএনএফের‘প্রধান সমন্বয়ক’যেভাবে গ্রেপ্তার
কেএনএফকে বিনা চ্যালেঞ্জে ছাড়া হবে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
কেএনএফের সঙ্গে সংলাপ সম্ভব নয়: শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি
পাহাড়ে অবশ্যই শান্তি ফিরবে, সে পথেই যাচ্ছি: বম পার্টি
‘সক্ষমতা জানান দিতেই’কেএনএফের হামলা: র্যাব
দুই দিনে ৩ ব্যাংকে ডাকাতি: পাহাড়ে ফের‘বম পার্টি’আতঙ্ক
রুমায় ব্যাংক ডাকাতি:‘লড়বি না, লড়লেই গুলি করে দেব’
থানচিতে রাস্তাঘাট ফাঁকা, বন্ধ দোকানপাট
এবার ভরদুপুরে থানচির দুই ব্যাংকে ডাকাতি
ভালো আছি, কৃতজ্ঞতা: ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম
ঘণ্টাখানেক গোলাগুলির পর থমথমে থানচি
পাহাড়ে সশস্ত্র দল; এই‘বম পার্টি’কারা?
ব্যাংক ডাকাতি-অর্থ লুট: রুমা ও থানচিতে ৬ মামলা
কেএনএফকে বিনা চ্যালেঞ্জে ছাড়া হবে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
শান্তি আলোচনায় কেএনএফকে বিশ্বাস করেছিলাম, তারা ষড়যন্ত্র করেছে: সেনাপ্রধান
কেএনএফকে বিনা চ্যালেঞ্জে ছাড়া হবে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
রুমায় ব্যাংক লুট: সন্ধান মেলেনি‘অপহৃত’ব্যবস্থাপকের
রুমায় ব্যাংক ডাকাতি, সন্দেহে‘বম পার্টি’
কেএনএফকে‘স্বাভাবিক জীবনে ফেরার’আহ্বান শান্তি কমিটির