বান্দরবানের সার্কিট হাউজে সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের বিরুদ্ধে চলমান যৌথ অভিযান নিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
Published : 17 Apr 2024, 08:55 PM
স্বাধীন দেশে ‘কোনো অবস্থাতেই’ সশস্ত্র সংগঠন মেনে নেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন র্যাব প্রধান এম খুরশীদ হোসেন।
তিনি বলেছেন, “স্বাধীন দেশে, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কোনো সশস্ত্র সংগঠন থাকবে, সেটা আমরা চাই না। তাই (পাহাড়ে) যৌথ অভিযান চলছে।”
বুধবার রুমা পরিদর্শন শেষে বেলা ৩টায় বান্দরবানের সার্কিট হাউজে সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের বিরুদ্ধে চলমান যৌথ অভিযান নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে দুপুরে হেলিকপ্টারে করে রুমায় পরিদর্শনে যান র্যাব প্রধান এম খুরশীদ হোসেন।
সেখানে তিনি সম্প্রতি ডাকাতি হওয়া সোনালী ব্যাংকের শাখা ও উপজেলা কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন।
পরে বান্দরবানে পৌঁছে সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এম খুরশীদ হোসেন আরও বলেন, “যে কাজটা (ব্যাংক ডাকাতি) হয়েছে, নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়।”
পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফের উদ্দেশে র্যাব প্রধান বলেন, “যারা এই পথে গিয়েছে; আমাদের অনুরোধ থাকবে, তারা নিশ্চই ভালো বুঝতে পারবে, তারা শান্তিতে বিশ্বাস করবে এবং তারা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাইবে।”
তিনি বলেন, “অতীতে র্যাব, আমরা যে কারণে সর্বহারাদের সারেন্ডার করিয়েছি, পুনর্বাসন করেছি। জলদস্যুদেরও বিভিন্ন সময় সারেন্ডার করিয়েছি, তাদের পুনর্বাসন করেছি।
“যদি কেউ বিপথে গিয়ে থাকে। কোনো না কোনো কারণে প্রভাবিক হয়। আমি মনে করি, তারা ভুল বুঝতে পেরেছে। আমরা চাই- যারা যারা বিপথে গিয়েছে, সে সশস্ত্র পথ ছেড়ে দিয়ে তারা যদি মনে করে, যেটা করেছি সেটা ঠিক হয়নি। একটা দেশের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আমরা অন্যায় করেছি, অপরাধ করেছি। নিজেরাই আত্মসমর্পণ করতে চায়, আমরা তাদের স্বাগত জানাব এবং পুনর্বাসন করার জন্য যা যা করার করব। এটাই হচ্ছে কথা।”
খুরশীদ হোসেন বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত না শান্তির পথে আসবে, তাদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
২ এপ্রিল রাতে ও ৩ এপ্রিল দুপুরে বান্দরবানের রুমা এবং থানচি উপজেলার কৃষি ও সোনালী ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা চালায় সশস্ত্র লোকজন। তারা টাকা লুট করে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করে, একজন ব্যাংক ব্যবস্থাপককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। লুট করে বেশ কিছু অস্ত্র ও গুলি।
রুমায় সোনালী ব্যাংকে হামলা-ডাকাতি ও শাখা ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে অপহরণের ঘটনাটি ২ এপ্রিল রাতের প্রথম ভাগে ঘটলেও; থানচিতে কৃষি ও সোনালী ব্যাংকে হামলা হয়েছে পরদিন ভরদুপুরে।
এ নিয়ে দুই উপজেলার মানুষের ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে উদ্ধার করে র্যাব।
এসব ঘটনায় পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট- কেএনএফের নাম আসে; যারা পাহাড়ে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত।
এরপর থেকে রুমা ও থানচি এলাকায় কেএনএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
যৌথ বাহিনীর চলমান অভিযানের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে র্যাব প্রধান বলেন, “অভিযান আমরা মাত্র শুরু করেছি। শুধু আমরা না। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও কাজ করে যাচ্ছে।”
অভিযানে পাহাড়ের জনজাতির সাধারণ মানুষের হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র্যাবের ডিজি বলেন, “পুকুরে যদি মাছ ধরতে যাই, বড় মাছ ধরার টার্গেট থাকে।
“একটা বিশাল পুকুর। মাছ চাষ করি; জাল ফেলি। বড় মাছ ধরব আমি। যখন বড় মাছ ধরতে যাই, তখন সঙ্গে ছোট মাছও চলে আসে।”
তিনি বলেন, “যাদের ধরার টার্গেট করব, তাদের ধরতে গিয়ে কিছু লোক চলে আসে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নিয়ে আসছি। এ বিষয়ে আমার সাসপেক্ট আছে। তার সম্পর্কে কোনো তথ্য আছে। সঙ্গত কারণে, জিজ্ঞাসাবাদ করতেই হবে। তাদের ধরে নিয়ে আসা মানে, জেলখানায় তো দিয়ে দিচ্ছি না। জিজ্ঞাসাবাদ করার স্বার্থেই তাদের ধরে নিয়ে আসা হয়েছে।”
সাধারণ বমদের হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে খুরশীদ হোসেন বলেন, “এটা যদি তারা বলে থাকে, সেটা তারা ঠিক বলছেন না। সরকার এটা চাচ্ছে না, আমরাও সেটা করছি না। বম জনগোষ্ঠীর কথা বলা হচ্ছে, বমদের সবাই যে খারাপ, তা তো না। সবাই এই কাজটা করে, তাও না। হয়ত মুষ্টিমেয় কয়েকজন জড়িত। অন্যরা বলুক যে, কারা কারা এ কাজগুলো করে।
“আমরা এটাও বলি যে, জঙ্গিদের, সর্বহারাদের আত্মসমর্পণ করিয়েছি; এখন বান্দরবানবাসী ও বম জনগোষ্ঠী যদি বলে যে, এই ছেলেগুলো খারাপ। আপনারা অপারেশন করবেন না, এই ছেলেগুলো নিয়ে যান; আমরা অপারেশন করব না।”
পার্বত্য শান্তিচুক্তির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “পার্বত্য অঞ্চল থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হয়েছে। যার যার জনগোষ্ঠী তারাই রয়েছেন। তারা শান্তিতে থাকবে, এটাই সরকার চায়। সরকার প্রধান (শেখ হাসিনা) চান। সেভাবেই শান্তিচুক্তি হয়েছে। আমরা সেটাই চেয়েছি। কিন্তু আপনারা যদি অশান্তি করেন, আমরা তা অ্যালাউ করব না।”
যৌথ বাহিনীর অভিযান এলাকার বাইরেও কোথাও কোথাও স্থানীয়দের পরিবার প্রতি ৫ কেজির বেশি চাল বাজার থেকে বহন করতে দেওয়া হচ্ছে না, এমন অভিযোগের বিষয়ে র্যাবের ডিজি বলেন, “অপারেশন এলাকায় কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম থাকে। বিধিনিষেধ থাকে। এগুলো মানতে হবে। এর আগে অপারেশনে দেখা গেছে, জঙ্গি ও সর্বহারাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছি। তারা বাজারে আসত না। কিছু লোক ছিল, এগুলো সাপোর্ট দিত।”
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, “একটা পরিবারে কত চাল লাগে? ১০ কেজি লাগে, ১০ মণ তো লাগে না। সুতরাং যার যতটুকু দরকার সেটুকুই অ্যালাউ করা হচ্ছে।”
র্যাব প্রধানের ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন, পুলিশ সুপার সৈকত শাহ, সেনা বাহিনী ও র্যাবের কর্মকর্তারা ছিলেন।