“দুপুরের ঘটনার পর ওষুধ ও খাবার দোকান ছাড়া সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছি; কালকে সকালে পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব,” বলছেন থানচি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি।
Published : 03 Apr 2024, 09:36 PM
ঈদের আগে দিনে-দুপুরে অস্ত্র নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে ব্যাংক ডাকাতির পর থেকে বান্দরবানের থানচির রাস্তা-ঘাট অনেকটা ফাঁকা, ওষুধ আর খাবারের মত জরুরি পণ্যের দোকান ছাড়া বেশিরভাগ দোকানেই ঝুলছে তালা।
স্থানীয়রা বলছেন, রুমা উপজেলায় ব্যাংক ডাকাতি ও অপহরণের পরদিন দুপুরে থানচিতেও দুই ব্যাংকে লুটপাটের ঘটনায় তাদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাস্তাঘাটে লোকজন কমে গেছে। এমন অবস্থায় নিরাপত্তা উদ্বেগে দোকানপাট আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
থানচি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কামলাই চৌধুরী বলেন, “দুপুরের ঘটনার পর আজকে আমরা ওষুধ ও খাবার দোকান ছাড়া সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছি। কালকে সকালে পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, থানচি বাজার ও বাস স্টেশন এলাকা মিলে প্রায় ২৫০ দোকান আছে। সেগুলোর মধ্যে ওষুধ ও খাবার দোকানসহ জরুরি প্রয়োজনের দোকান ছাড়া অন্যসব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে।
অন্যান্য দোকান বন্ধের পাশাপাশি থানচিতে সড়কের পাশের সবজি ও ফল বিক্রেতারাও দোকানপাট বন্ধ করে রেখেছেন বলে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে একদল সশস্ত্র লোক থানচি কৃষি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক শাখায় হামলা চালিয়ে টাকা লুট করে। ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এর আগে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে শতাধিক সশস্ত্র ব্যক্তি রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংকের শাখায় একযোগে হামলা চালায়। এ সময় ব্যাংকের কর্মকর্তা, নিরাপত্তা রক্ষীসহ অন্তত ২০ জনকে মারধর করা হয়। অপহরণ করা হয় এ শাখার ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে। এখনো তার হদিস পাওয়া যায়নি।
ওই ঘটনায় পাহাড়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) বা বম পার্টির ‘সংশ্লিষ্টতা’ পাওয়ার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
থানচিতে ব্যাংকে আক্রমণের ঘটনা বর্ণনায় সেখানকার এক ব্যবসায়ী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে থানাচিতে সাপ্তাহিক বাজার। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে লোকজন মালামাল নিতে এখানে এসেছিলেন। বেলা সোয়া ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে তিনটি জিপে কয়েকশ লোক আসে।
“আমরা তিনটি গাড়িতে করে লোকজন আসতে দেখেছি। তার মধ্যে দুটি গাড়ি থেকে নেমে তারা দুই ব্যাংকে যায়। একটি গাড়ি ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।”
বুধবার সাপ্তাহিক বাজার থাকায় দুই ব্যাংকেই অনেক গ্রাহক ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “সোনালী ব্যাংকে প্রবেশ করে দলটির সদস্যরা ম্যানাজারকে খুঁজতে থাকে। না পেয়ে ক্যাশ বাক্সে থাকা টাকা নিয়ে যেতে দেখা গেছে।”
সশস্ত্র দলটির সঙ্গে কয়েকজন নারীও ছিলেন জানিয়ে ওই ব্যবাসায়ী বলেন, “দলটির লোকজন খাকি পোশাক পরে ছিলেন। আমাদের ধারণা, তারা কুকি-চিন পার্টির সদস্য।”
ব্যাংক লুট শেষে সশস্ত্র দলটি থানচি বাজারে প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ে আতঙ্ক তৈরি করে এবং তিনটি জিপ চেপে চাঁদাপাড়া এলাকার সড়কের দিকে চলে যায় বলে জানান ওই ব্যবসায়ী।
ঘটনার পরপর কৃষি ব্যাংকের থানচি উপজেলার শাখার ব্যবস্থাপক হ্লা সুই থোয়াই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা এসে চোখের পলকে আমাদের ব্যাংকে ঢুকে সবাইকে জিম্মি করে ফেলল। তারপর সবাইকে একটি কক্ষে নিয়ে বাইরে থেকে আটকে দিল।”
টাকা লুটের বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক বলেন, “প্রাথমিকভাবে আড়াই লাখ টাকা খোয়া গেছে এটা জানতে পেরেছি।”
আরো পড়ুন-
এবার ভরদুপুরে থানচির দুই ব্যাংকে ডাকাতি
ব্যাংক ম্যানেজার নেজামকে তারাবির নামাজ থেকে তুলে নিয়ে যায় সশস্ত্ররা
রুমায় ব্যাংক লুট: সন্ধান মেলেনি ‘অপহৃত’ ব্যবস্থাপকের