এ ঘটনায় পাহাড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Published : 03 Apr 2024, 01:22 PM
বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে সশস্ত্র হামলা ও লুটের ঘটনায় এখনও খোঁজ মেলেনি ‘অপহৃত’ শাখা ব্যবস্থাপকের।
ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনের ভাই ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলি থানার এসআই মিজান বলেন, “আমার ভাইয়ের এখনো কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। আমরা পরিবারের সদস্যরা চরম উদ্বিগ্ন অবস্থায় আছি। ”
মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে শতাধিক সশস্ত্র ব্যক্তি উপজেলা সদরে ব্যাংকটির শাখায় একযোগে হামলা চালায়। এ সময় ব্যাংকের কর্মকর্তা, নিরাপত্তা রক্ষীসহ অন্তত ২০ জনকে মারধর করা হয়। অপহরণ করা হয় এ শাখার ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে।
এ ঘটনায় পাহাড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার ও সোনালী ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার সকাল ৯টায় পৌঁছে রুমা শাখার সোনালী ব্যাংকটির বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখেন এবং ব্যাংকের ভল্টটি পর্যবেক্ষণ করেন তারা ।
পর্যবেক্ষণ শেষে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “এখানে ভল্টের বিষয় আছে। কিছু প্রসিডিউয়াল বিষয় আছে। সিআইডির বিষয়ও থাকতে পারে। অন্যান্য ক্রাইম সিন বিষয়ও..। ক্রাইম সীন বিষয়গুলো পুলিশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখবে।
"সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ডিআরবি জব্দ করা আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে।”
ব্যাংক লুটের ঘটনায় কাদেরকে সন্দেহ করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, “যে সশস্ত্র গোষ্ঠীর কথা বলা হচ্ছে সেটা নানাভাবে, নানান ইঙ্গিতে যে কোনোভাবেই হোক বিষয়টা আসছে। কিন্তু তদন্ত ব্যতীত স্পষ্টভাবে বলা কঠিন বিষয়। তদন্ত সাপেক্ষে যদি সঠিক তথ্য পাই তখন অবহিত করা হবে “
এসময় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত ডিআইজি গোলাম মাহফুজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসছেন বরে জানা গেছে।
লুট হয়েছে ১৪টি অস্ত্র, ৪২৪টি গুলি
ব্যাংক লুটের সময় পুলিশ ও আনসারে অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, “গতকাল (মঙ্গলবার) ৮টা ২০ মিনিটের দিকে ব্যাংকে হামলা হয়েছে। এই হামলার সময় পুলিশের যে গার্ডরা রয়েছে তাদের ১০টা অস্ত্র ছিল। আটটা চাইনিজ রাইফেল, দুইটা এসএমজি। তাদের ৩৮০ রাউন্ড গুলি লুট হয়েছে। এছাড়া আনসারের চারটি শর্টগান ও ৩৪ রাউন্ড গুলিও লুট করে নিয়ে গেছে।”
"কে বা কারা করেছে এটা তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে এটা বলতে পারব, কে বা কারা এ ঘটনায় জড়িত। অলরেডি তদন্ত শুরু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “ক্রাইম সিনের দল আসবে। তারা ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করবেন। সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। এটা জব্দ করা হয়েছে। যে বা যারা জড়িত থাকুক কঠোরভাবে আইনগতভাবে ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হবে।”
পরিদর্শনের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর বিভাগীয় কার্যালয়ের জেনারেল ম্যানেজার মো. মুসা খান ও বান্দরবান শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ওসমান গণি।
মঙ্গলবার সকালে রুমা শাখার সোনালী ব্যাংকে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা প্রশাসনের লাগোয়া সোনালী ব্যাংকটির কার্যালয়। দ্বিতল ভবনটির প্রতিটি কক্ষে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কাগজপত্র। টেবিলের উপর থাকা কাচগুলো ভাঙা।
কম্পিউটারগুলো ভাঙাচোরা হয়ে এলোমেলো পড়ে রয়েছে। বিভিন্ন ইলেকট্রিক্যাল পয়েন্টগুলোও ভাঙা হয়েছে। এমনকি রুমের দরজা জানালাও ভাঙা অবস্থায় রয়েছে।
চা দোকান থেকে ধরে নেওয়া হয় ক্যাশিয়ারকে
ব্যাংকটি ক্যাশিয়ার উথোয়াইচিং মারমা সাংবাদিকদের ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, সোমবার ৮টার দিকে বাইরে একটা দোকানে চা খেতে যান। তখন হঠাৎ করে তিনজন সশস্ত্র ব্যক্তি তাকে ঘিরে ফেলে। তাকে বন্দুক তাক করে পকেটে তল্লাশি করে চাবি কেড়ে নিয়ে যায়। পকেটে থাকা ১২০০ টাকাও নিয়ে যায়।
“তখন শতাধিক ব্যক্তিকে ব্যাংক ঘিরে রাখতে দেখা যায়। তারা ভেতরে সবকিছু তছনছ করে ফেলে।”
ক্যাশিয়ার বলেন, "ভল্ট খুলতে গেলে দুইজনের চাবি লাগবে- ক্যাশিয়ার এবং ম্যানেজাররের। আমার মনে হয়, আমার কাছে থাকা চাবি তারা ভল্ট খোলার চেষ্টা করেছে। ম্যানেজার থেকে চাবি না পেয়ে তাকে হয়ত তুলে নিয়ে গেছে।”
তিনি আরও বলেন, “সামনে পাহাড়িদের বর্ষবরণ উৎসব এবং ঈদের জন্য বেতন ভাতা দেওয়ার জন্য ব্যাংকে মোট এক কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা ছিল।"
উদ্বিগ্ন সরকারি কর্মকর্তাদের মানববন্ধন
এদিকে ব্যাংক ম্যানেজারের মুক্তি ও চাকরিরত সরকারি কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় বিভিন্ন কার্যালয়ে কর্মরতরা।
রুমা উপজেলা কার্যালয়ের পাশে এই মানববন্ধনে ‘জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে’ বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানববন্ধন অংশ নেন তারা।
রুমা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) খালেদ রাউজান খান বলেন, “আমরা পরিবার-পরিজন রেখে অনেক দূর থেকে এসে এই দুর্গম এলাকায় জনগণকে সেবা দিতে এসেছি, কিন্তু আমাদের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নাই।
“গতকাল আমাদের কর্মকর্তাদের মেরে সব তছনছ করে দিয়েছে। আমরা এদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়তেছি। আমরা কী অপরাধ করেছি।”
দ্রুত ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধারের আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকারের কাছে আমাদের আবেদন আমাদের নিরাপত্তা দিন। এভাবে যদি আমাদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়ে তাহলে তো আমরা চাকরী করতে পারব না।”
আরও পড়ুন: