বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে একদল সশস্ত্র লোক দুটি গাড়ি করে এসে ওই হামলা চালায় বলে কৃষি ব্যাংকের থানচি উপজেলার শাখার ব্যবস্থাপক জানান।
Published : 03 Apr 2024, 01:34 PM
বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে হামলা ও লুটের ১৬ ঘণ্টার মাথায় এবার থানচি উপজেলার দুটি ব্যাংকে সশস্ত্র ব্যক্তিরা হামলা চালিয়েছে। এ সময় তারা টাকা লুট করেছে।
বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে একদল সশস্ত্র লোক দুটি গাড়িতে করে এসে পাশাপাশি থাকা কৃষি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক শাখায় হামলা চালায় বলে কৃষি ব্যাংকের থানচি উপজেলার শাখার ব্যবস্থাপক হ্লা সুই থোয়াই জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “তারা এসে চোখের পলকে আমাদের ব্যাংকে ঢুকে সবাইকে জিম্মি করে ফেলল। তারপর সবাইকে একটি কক্ষে নিয়ে বাইরে থেকে আটকে দিল।
টাকা লুটের বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক বলেন, “প্রাথমিকভাবে আড়াই লাখ টাকা খোয়া গেছে এটা জানতে পেরেছি।
একই সময় পাশের সোনালী ব্যাংকেও হামলা হয় বলে কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের ভাষ্য। তবে এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের কারো বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি।
থানচির ঘটনা নিয়ে জানতে চাইলে বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আব্দুল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ কিছুক্ষণ আগে থানচিতে ব্যাংকে হামলা হয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। আমাদের ধারণা, গতকালের গ্রুপটিই এটা করেছে। গতকালের ঘটনার তদন্তে কোনো অগ্রগতি এখনও হয়নি।”
থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুপুরে থানচি বাজারে এসে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকে প্রবেশ করে টাকা লুট করে নিয়ে গেছে বলে জেনেছি।
“সোনালী ব্যাংক থেকে ১৪-১৫ লাখ টাকা নিয়ে গেছে বলে শুনেছি। তবে কৃষি ব্যাংক থেকে কত টাকা নিয়েছে জানা যায়নি। সেখান থেকে কাউকে অপহরণ করার সংবাদও পাওয়া যায়নি।”
মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে শতাধিক সশস্ত্র ব্যক্তি রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংকের শাখায় একযোগে হামলা চালায়। এ সময় ব্যাংকের কর্মকর্তা, নিরাপত্তা রক্ষীসহ অন্তত ২০ জনকে মারধর করা হয়। অপহরণ করা হয় এ শাখার ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে।
পাহাড়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) বা বম পার্টি ওই ঘটনায় জড়িত বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
রুমার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার ভরদুপুরে থানচিতে দুটি ব্যাংকে হামলা ও টাকা লুটের ঘটনা ঘটল। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় এক ব্যক্তির করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। তবে ভিডিওটির সত্যতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি।
ভিডিওতে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। এ সময় থানচি বাজারের লোকজন ভয় ও আতঙ্কে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। দোকানপাট বন্ধ করতে দেখা গেছে। অনেক নারী-পুরুষকে একটি ঘরে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। আবার অনেকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছিলেন।
এ ঘটনার পর বাজার প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। রাস্তার পাশে ফুটপাতে কিছু দোকান খোলা অবস্থায় দেখা গেছে। অর্থাৎ গোলাগুলির সময় তারা দোকান খোলা রেখেই জান বাঁচাতে পালিয়ে যান।
থানচির সোনালী ব্যাংকের সামনে প্রচুর সাধারণ মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখা গেছে। তারা কীভাবে সমস্ত্র ব্যক্তিরা এসে হামলা করেছে এ নিয়ে কথা বলছিলেন।
স্থানীয়রা বলছিলেন, ব্যাংকে যারা ডাকাতির জন্য প্রবেশ করেছিলেন তার বাইরেও তাদের আরও লোকজন সশস্ত্র অবস্থায় ছিলেন। তারা বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেন।
থানচি বাজারের এক ব্যবসায়ী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে থানাচিতে সাপ্তাহিক বাজার। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে লোকজন মালামাল নিতে এখানে এসেছিলেন। বেলা সোয়া ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে তিনটি জিপে কয়েকশ লোক আসে।
“আমরা তিনটি গাড়িতে করে লোকজন আসতে দেখেছি। তার মধ্যে দুটি গাড়ি থেকে নেমে তারা দুই ব্যাংকে যায়। একটি গাড়ি ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।”
বুধবার সাপ্তাহিক বাজার থাকায় দুই ব্যাংকেই অনেক গ্রাহক ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “সোনালী ব্যাংকে প্রবেশ করে দলটির সদস্যরা ম্যানাজারকে খুঁজতে থাকে। না পেয়ে ক্যাশ বাক্সে থাকা টাকা নিয়ে যেতে দেখা গেছে।”
সশস্ত্র দলটির সঙ্গে কয়েকজন নারীও ছিলেন জানিয়ে ওই ব্যবাসায়ী বলেন, “দলটির লোকজন খাকি পোশাক পরে ছিলেন। আমাদের ধারণা, তারা কুকি-চিন পার্টির সদস্য।”
ব্যাংক লুট শেষে সশস্ত্র দলটি থানচি বাজারে প্রকাশ্যে ব্রাশ ফায়ার করে আতঙ্ক তৈরি করে এবং তিনটি জিপে চড়ে চাঁদাপাড়া এলাকার সড়কের দিকে চলে যায় বলে জানান ওই ব্যবসায়ী।
তিনি বলেন, সিনেমায় যেভাবে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ব্যাংক লুটের দৃশ্য দেখা যায় এ দৃশ্যটাও এমন মনে হয়েছে তার কাছে।
স্থানীয় আরেকজন বলেন, “চাঁদাপাড়া এলাকায় নদীর পাড়ে কয়েকদিন ধরে নাটকের শ্যুটিং চলছিল। আমরা প্রথমে মনে করেছি সেই নাটকের কোনো শ্যুটিং চলছে। তাই অনেকে প্রথমে বিষয়টা এড়িয়ে গেছে। পরে বাজারে প্রকাশ্যে ব্রাশ ফায়ার যখন করল, তখন আমরা বুঝতে পেরেছি এটা ডাকাতি।”
রুমা সোনালী ব্যাংকে হামলা ও ডাকাতির ঘটনার পর মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি ব্যাংকের পাশাপাশি পাশের মসজিদও পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি ব্যাংক কর্মকর্তা ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে থানচির ব্যাংক ডাকাতি নিয়েও কথা বলেন আইজিপি। তিনি বলেন, “আমরা একটু আগেই বিষয়টি শুনেছি। আমরা সতর্ক ছিলাম বলেই তারা এসে পালিয়ে গেছে। আমরা এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছি।”
প্রতিটি ঘটনার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে পুলিশ-প্রধান বলেন, “যারা দৃষ্কৃতকারী তাদের আইনের আওতায় আনা হবে এবং যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে সোমবারের রাতের ঘটনার পর মঙ্গলবার বান্দরবান জেলার ব্যাংকগুলোতে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে লেনদেন হয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের বান্দরবান জেলা শাখার ব্যবস্থাপক রাজন কান্তি দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর সতর্কতা অবলম্বনের নিদেশনা দেওয়া হলে আমরা ব্যাংকিং সময় পর্যন্ত লেনদেন করেছি। লেনদেন কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে হয়েছে।"
“জেলা সদর ও সব উপজেলায় একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অনেক ব্যাংক হয়ত লেনদেন সীমিত করেছে নিরাপত্তার কথা ভেবে।"
পার্বত্য এলাকার সব ব্যাংকে সেনাবাহিনীর ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
রুমায় ব্যাংক লুট: সন্ধান মেলেনি ‘অপহৃত’ ব্যবস্থাপকের