“কেএনএফ ফেইসবুক পেইজে শান্তি কমিটিকে উদ্দেশ করে চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে বলেছে, এটা করা হয়েছে, ওটা করা হয়নি। সেই কারণেই আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করা হয়েছে।”
Published : 07 Apr 2024, 11:22 PM
পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফের সদস্যদের ‘অস্ত্র ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার’ আহ্বান জানিয়েছে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি।
কেএনএফের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে পাহাড়ে আতংকের পরিপ্রেক্ষিতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে এই শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠিত হয়।
রোববার কমিটির সভাপতি বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শে হ্লা ও সদস্যসচিব লালজারলম বম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি তথা আপামর জনগণ এই উদ্ভট পরিস্থিতি কোনোভাবে কামনা করি না। এমন অশান্ত পরিস্থিতি পরিহার এবং সম্পাদিত সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী কেএনএফ এর সকল সদস্য শান্তি বজায় রাখবেন এবং অস্ত্র সমর্পন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।”
কেএনএফের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর অভিযানের মধ্যে ২০২৩ সালের ৩০ মে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠিত হয়। ওই বছরের জুলাই ও অগাস্টে কমিটির সঙ্গে কেএনএফের কয়েকবার ভার্চুয়াল আলোচনাও হয়।
পরে নভেম্বরে ও এ বছরের মার্চে কেএনএফের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সরাসরি দুটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
‘শান্তি আলোচনা’ শুরুর পর পাহাড়ে হত্যা-সহিংসতা থেকে মুক্তির আশা জাগতে শুরু করেছিল পাহাড়ের মানুষের মনে। এরইমধ্যে মঙ্গল ও বুধবার বান্দরবানের রুমা এবং থানচি উপজেলার কৃষি ও সোনালী ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা চালায় সশস্ত্র লোকজন। এসব ঘটনার কেএনএফের সংশ্লিষ্টতার কথা জানায় সরকার।
এরপর বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি জানায়, কেএনএফ ‘সকল ধরনের প্রচেষ্টা পদানত ও প্রশ্নবিদ্ধ করে’ সংলাপ করার পথ ‘বন্ধ করে দিয়েছে’। ফলে ‘আগামীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির পক্ষে সংলাপ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না’।
চুক্তির ‘শর্ত ভঙ্গ’ করায় এসব ঘটনার নিন্দাও জানানো হয় শান্তি কমিটির পক্ষ থেকে।
কেএনএফ, যারা পাহাড়ে বম পার্টি নামে পরিচিত; তারা তাদের কর্মকাণ্ড ফেইসবুকে প্রচার করে থাকে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বার্তা সেখানে কেএনএফের নামে প্রচার করা হয়। যদিও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম স্বতন্ত্রভাবে এর সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি।
শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সংবাদ সম্মেলন ও ‘শর্ত ভঙ্গের’ অভিযোগ প্রসঙ্গে রোববার ‘কেএনএফের ফেইসবুক পেইজে’ কিছু প্রশ্ন তুলে একটি পোস্ট দেওয়া হয়।
‘কেএনএফ কেন শান্তি আলোচনার শর্ত লংঘন করেছে?’- সেখানে এর জবাবে একটি পয়েন্টে বলা হয়েছে, “১. সরকার প্রথম সশরীর বৈঠকে উভয়পক্ষ স্বাক্ষরিত শর্ত মোতাবেক কোনো রকমের কাজ সম্পাদন করেনি সরকার পক্ষ বরং পুরোপুরি লংঘন করেছে। যেমন-
ক. জেলে বন্দিদেরকে (যারা কেএনএফ-এর সদস্য নয় ও নিরীহ) এক মাসের মধ্যে ধাপে ধাপে মুক্তি দেবার কথা থাকলেও তা পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও মুক্তি দেওয়া হয়নি।…”
এর পরেই শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির পক্ষ থেকে এই বিবৃতি এল; যেখানে কেএনএফের তোলা কিছু প্রশ্নের জবাব দেওয়ার চেষ্টা রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাতে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্যসচিব লালজারলম বম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকের বিবৃতিটি দেওয়া হয়েছে কেএনএফের বক্তব্যের প্রতিউত্তরে। তারা তাদের ফেইসবুক পেইজে শান্তি কমিটিকে উদ্দেশ করে চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে বলেছে, এটা করা হয়েছে, ওটা করা হয়নি। সেই কারণেই তাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করা হয়েছে।”
কেএনএফের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সমন্বয়ে এই পর্যন্ত বম জনগোষ্ঠীর জন্য রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার মোট ৯৬৮টি বম পরিবারের মাঝে ১৩৪ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য, নগদ অর্থ, শীতবস্ত্র, চিকিৎসা সহায়তা প্রদানসহ তাদের কারান্তরীণ ২ সদস্যকে জামিনে মুক্তি লাভে সহায়তা প্রদান করা হয়।
“অবশিষ্ট কারান্তরীণ সদস্যদের মুক্তি ব্যাপারে আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত বম জনগোষ্ঠীর সহায়তার জন্য এলাকায় খাদ্যশস্য ইতোমধ্যে পৌঁছানো হয়েছে।”
ব্যাংকে হামলা, অর্থলুট ও অপহরণের কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ইতোমধ্যে ব্যাংক কর্মকর্তা জনাব নেজাম উদ্দিনকে ৪ এপ্রিল উদ্ধার করা গেলেও পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর লুট হওয়া মোট ১৪টি অস্ত্র এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার ও এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা একান্ত প্রয়োজন।
কমিটির কার্যকলাপের কথা উল্লেখ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি বলেছে, “সংলাপে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রথম বৈঠকে চারটি এবং দ্বিতীয় বৈঠকে সাতটি সমঝোতা স্বাক্ষর সম্পাদিত হয়। সম্পাদিত উভয়পক্ষের সম্মতি স্বাক্ষর অনুযায়ী অত্র কমিটির পক্ষ হতে কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।
“ঠিক ওই মুহূর্তে হাঠৎ করে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ কর্তৃক বর্বরোচিত হামলা, লুট ও অপহরণে সম্পূর্ণরূপে সমঝোতা চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে আমরা মনে করি।”
আরও পড়ুন:
কেএনএফের ‘প্রধান সমন্বয়ক’ গ্রেপ্তার
কেএনএফের সঙ্গে সংলাপ সম্ভব নয়: শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি
পাহাড়ে অবশ্যই শান্তি ফিরবে, সে পথেই যাচ্ছি: বম পার্টি
‘সক্ষমতা জানান দিতেই’ কেএনএফের হামলা: র্যাব
দুই দিনে ৩ ব্যাংকে ডাকাতি: পাহাড়ে ফের ‘বম পার্টি’ আতঙ্ক
রুমায় ব্যাংক ডাকাতি: ‘লড়বি না, লড়লেই গুলি করে দেব’
থানচিতে রাস্তাঘাট ফাঁকা, বন্ধ দোকানপাট
এবার ভরদুপুরে থানচির দুই ব্যাংকে ডাকাতি