পুলিশ বলছে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ১০টা পর্যন্ত এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
Published : 04 Apr 2024, 09:32 PM
ভরদুপুরে দুটি ব্যাংকে হামলা ও ডাকাতির একদিন পর ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে বান্দরবানের থানচি উপজেলা সদরে। সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে ।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ১০টা পর্যন্ত এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে বলে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নূরে আলম মিনা জানান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “থানচি থানার দক্ষিণে এবং পূর্বে পাহাড় আছে। দক্ষিণ দিকের পাহাড় থেকে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফাঁকা গুলি শুরু হয়।
কারা গুলি ছুড়েছে প্রশ্ন করলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “আমরা বলছি, তারা সন্ত্রাসী। বাজারে আমাদের ফোর্স মোতায়েন ছিল। তারাও পাল্টা ফায়ার করেছে। থানা থেকেও ফায়ার করেছে।
“কিছু সময় গোলাগুলি চলার পর সব বন্ধ হয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক।”
মঙ্গল রাতে এবং বুধবার দুপুরে বান্দরবানের রুমা এবং থানচি উপজেলার কৃষি ও সোনালী ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা চালায় সশস্ত্র লোকজন। তারা টাকা লুট করে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করে, একজন ব্যাংক ব্যবস্থাপককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। লুট করে বেশ কিছু অস্ত্র ও গুলি।
রুমায় সোনালী ব্যাংকে হামলা-ডাকাতি এবং ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে অপহরণের ঘটনাটি মঙ্গলবার রাতে প্রথম ভাগে ঘটলেও; থানচিতে কৃষি ও সোনালী ব্যাংকে হামলা হয়েছে ভরদুপুরে।
দুটি ঘটনাতেই পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ এর নাম এসেছে; যারা পাহাড়ে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত।
এ নিয়ে দিনভর দুই উপজেলার মানুষের ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে ব্যাপস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে উদ্ধার করে র্যাব।
তার কিছু পরেই থানচিতে ব্যাপক গোলাগুলি ঘটনা ঘটল। তবে কোন সশস্ত্র গোষ্ঠী গোলাগুলি করেছে তা এখনও জানা যায়নি এবং এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কিছু জানায়নি।
ঘটনার ভয়াবহতা বর্ণনা করে থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন মোবাইলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাত ৯টার দিকে একদল সশস্ত্র লোক এসে থানচি বাজারে গুলি শুরু করে। পরে তারা থানায় গুলি চালায়। পুলিশ আর বিজিবিও পাল্টা গুলি করে। হাসপাতালের পেছন দিকেও গুলি হয়। পরিস্থিতিটা আসলে এরকমই।”
থানচি বাজার ২০০-৩০০ গজের মধ্যেই থানা অবস্থান, তার পাশেই রয়েছে বিজিবি ক্যাম্প।
গোলাগুলির থামার পর রাত ১১টার দিকে ইউএনও মোহাম্মদ মামুন বলেন, “৩০ থেকে ৪০ জন সশস্ত্র লোক এসে গুলি চালায়। তারা থানা ও বিজিবি ক্যাম্প লক্ষ্য করে গুলি করে। এ সময় পুলিশ ও বিজিবিও পাল্টা গুলি চালায়।
“পুলিশ ৪০০টির মতো গুলি করেছে। বিজিবির গুলির ব্যাপারে এখনও জানা যায়নি। পরিস্থিতি ভয়াবহ ও থমথমে”, ভাষ্য ইউএনওর।
ঢাকা থেকে বান্দরবানের থানচিতে একটি ব্যক্তিগত কাজে গিয়েছিলেন এক পর্যটক। তিনি বলছিলেন, “রাতে আমরা তিনজন একটি হোটেলে খেতে বসেছিলাম। ঠিক তখনি বৃষ্টির মত গোলাগুলি শুরু হয়। আমরা খাবার ফেলে একটি দোকানে এসে লাইট বন্ধ করে বসে থাকি। প্রচুর গুলি হয়। আমাদের সঙ্গে স্থানীয় আরও কয়েকজনও এই ঘরে আটকা পড়েন।”
মো. হাবিব নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা থানচি বাজার থেকে চলমান পরিস্থিতির কয়েক সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেইসবুকে শেয়ার করেছেন। সেখানে কয়েকজনকে আতঙ্কিত কণ্ঠে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে মুহুর্মহু গুলির শব্দ।
বিষয়টি নিয়ে রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “থানচিতে গোলাগুলির বিষয়টি আমরা জেনেছি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আমরা কাজ করছি।”
র্যাব-১৫ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “কিছুক্ষণ আগে আমরা শুনেছি থানচিতে গোলাগুলি হচ্ছে। এ মুহূর্তে এর বেশী কোনো তথ্য নেই আমাদের কাছে।”
থানচি বাজারের একজন ব্যবসায়ী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রচণ্ড গোলাগুলি হচ্ছে। অবস্থা ভয়াবহ। এখন কথা বলার মত অবস্থায় নাই।”
স্থানীয় এক বাসিন্দা সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, বুধবার পাহাড়ি যে সশস্ত্র গোষ্ঠী ব্যাংক লুট করেছিল, তারা গাড়ি নিয়ে চাঁদার পাড়া হয়ে শাহজাহান পাড়ার দিকে গেছেন বলে তারা শুনছেন। বাজার থেকে ওই এলাকার দূরত্ব আড়াই-তিন কিলোমিটার।
অস্ত্রধারী লোকজন এখনও ওই এলাকায় রয়েছে বলে তাদের ধারণা এবং সে কারণে তাদের মধ্যে ভয় কাজ করছিল।
থানচি বাজার এলাকায় একজন জনপ্রতিনিধি বলেন, “রাত ৮টা ২০ মিনিটের পর থেকে ঘণ্টাব্যাপী বিভিন্ন জায়গা থেকে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ আসে। শেষের দিকে গোলাগুলির তীব্রতা আরও বাড়ে।
“ব্যাংক ডাকাতি নিয়ে স্থানীয়রা এমনিতে ভয়ের মধ্যে ছিল। রাতের এ গোলাগুলির ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে আরও ভয়-আতঙ্ক বাড়িয়েছে।”
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নূরে আলম মিনা বলেন, “আজ সকালে আমিও থানচি গিয়েছিলাম, নিরাপত্তা বাড়িয়েছি। আমাদের অনেক ফোর্স আছে। এসএমজিসহ ভারী ভারী অস্ত্র থানায় মজুদ আছে।
“তাদের মোকাবেলা করার সামর্থ্য আমাদের আছে। প্রয়োজনে আমরা যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করব।”
আরও পড়ুন: