তবে এবার পুরো এপ্রিলে ছিল গ্রীষ্মের ছোঁয়া। বসন্তে গ্রীষ্মের তাপমাত্রা। জার্মান আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য মতে, গত দুইশ’ বছরের মধ্যে এই বছরএপ্রিলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল জার্মানিতে। এপ্রিলে আবহাওয়ার এতো উন্নতিতে কেউ সুখী হলেও কেউ কেউ ছিলেন অসুখী।
জার্মানরা নিজেদের বাগানে বা ক্ষেতে ফুল-ফলের চারা রোপনে যে পানি ব্যবহার করেন, তা সারা বছরের বৃষ্টির পানি থেকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এ বছর এপ্রিলে তীব্র খরায় সে পানি ইতোমধ্যেই ফুরিয়ে গেছে। তাই অনেকেই ছিলেন বৃষ্টির অপেক্ষায়।
আমি জার্মানিতে প্রথম এসেছি শীতকালে। প্রথম তুষারপাত দেখেছি এদেশে। তুষার দিয়ে খেলাও করেছি এসে। শীতে মাথার চুল পড়া শুরু করেছিলো সেই সময় থেকে। রোদহীন কয়েক মাস এদেশে বসবাসের পর আমার অনুভূতি ছিল এরকম- এমন বিশ্রী ঠাণ্ডার দেশে মানুষ কেমন করে যে বসবাস করে!
দেশে থাকতে ঋতুর এতো হিসেব করিনি। বর্ষা বা শীতকালে ঘরে বসে চোর-পুলিশ খেলেছি। আর বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে মাঠে খেলা করেছি আমরা। এখানকার শীত মানুষকে একদম ঘরকুনো করে দেয়। আর তখন দিন কাটে মানুষের ঋতুর হিসেব করে।
শীতের শেষে বসন্ত এসে রাঙিয়ে যায় জার্মানিকে। কয়েক দফায় কয়েকশ’ জাতের ফুল ফোটে। সারা দেশ তখন পরিণত হয় একটি ফুল বাগানে। বসন্তের রঙ লাগে মানুষের মনে। বসন্তে পরিবর্তন আসে মানুষের কাজ-কর্মের, চালচলনের। পরিবর্তন আসে পোশাক-আশাকেও। এমনকি কথাবার্তা, আচরণবিধিরও পরবর্তন আসে। মানুষকে অনেক সুখী দেখায় এই সময়টাতে।
অতি আগ্রহ নিয়ে মানুষ বসন্ত ও গ্রীষ্মের অপেক্ষায় থাকেন এখানে। গরমে নিজেদের বাগানে কাজ করা বন্ধু-বান্ধব, পরিবার নিয়ে পার্টি করা, গ্রীষ্মের ছুটিতে যাওয়াসহ সব কাজ যেন এই কয়েক মাসের ভেতরে সেরে নিতে হবে, আবার শীত ফেরার আগে।
বসন্ত, গ্রীষ্মের এই কয়েক মাসকে মেলা খেলা পার্টি, আনন্দ করার মাস হিসেবেই ধরা হয় এখানে। বাড়ি বাড়িতে পার্টির আয়োজন হয়। মাঠে ঘাটে পার্টি করেন তখন মানুষেরা। এ সময়টা বেড়ানোর, আত্মীয়-স্বজন, পরিবার-পরিচিত জনের সাথে মিলিত হওয়ার।
ভালো আবহাওয়ার সাথে পার্টির একটা সম্পর্ক আছে এখানে। গরমের দিনে একটা পরিচিত গন্ধ বাতাসে ভাসে। বাতাসে করে আসে। সেটা হচ্ছে বারবিকিউ-এর গন্ধ। আপনি হয়তো রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, হঠাৎ করেই বাতাসে একটা টাটকা ভাজাভুজির গন্ধ নাকে আসবে, আর আপনি সেটাকে জোরে জোরে শুকলেন আর ভাবলেন, পাশের বাসাতেই হয়তো হচ্ছে এসব। বারবিকিউ বা ভাজাভুজির পার্টি।
বসন্ত থেকে গ্রীষ্মে এখানকার বাজার ভরপুর থাকে বারবিকিউ সরঞ্জামে। এই সময়ে বারবিকিউ পার্টির ধুম পড়ে যায় এখানে। বাড়ির উঠোনে বা বেলকনিতে, মাঠে কিংবা ঘাটে জমে ওঠে আড্ডা। আর তারই সাথে থাকে বারবিকিউ-এর জিভে জল আনা আয়োজন। বাড়ি বাড়িতে হয়ে থাকে বারবিকিউ পার্টি। আর তা দেখে আপনাকে এটা মানতে হবে, জার্মানরা বারবিকিউ প্রিয়।
আমি আগে থেকেই বারবিকিউ ওস্তাদ। দুবাইয়ের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত জেবেল পার্কে গিয়ে বন্ধুদের সাথে অনেকবার বারবিকিউ পার্টি দিয়েছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বিফ স্টেক আর মাছে মসলা লাগিয়ে নেই। বেশি কিছু লাগাতে হয়নি। শুধু গুল মরিচের গুড়া, পেপরিকা পাউডার ও লবণ মাখিয়ে নেই। অবশ্য এখানকার সুপার মার্কেটে মসলাযুক্ত স্টেকও পাওয়া যায়। তবে দাম একটু বেশি।
বিফ স্টেকের দুই পাশ ছয় থেকে সাত মিনিট ভেজে নেই। আর মাছ ভেজে নেই পাঁচ মিনিটের মতো। ব্যস, হয়ে গেলো আমার বারবিকিউ। সাথে আরও ছিল ভুট্টা বারবিকিউ, জার্মান ব্রেড, ভাজা ভাত ও বড় করে তৈরি করেছিলাম সালাত। খেতে কতো মজা আর খুব সহজ বারবিকিউ পার্টি।
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |