মালয়েশিয়ার পেনাং বিমানবন্দরে এয়ার এশিয়া বিমান অবতরণের কিছুক্ষণ আগে ঘোষণা এলো, আমরা যাত্রীরা সবাই যেন নাখ-মুখ বন্ধ করে নেই। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানবালারা বিমানের সামনে পেছন থেকে স্প্রে করলেন।
Published : 24 Feb 2018, 11:27 AM
নাক মুখ তো আগেই বন্ধ করে নিয়েছিলাম, এবার চোখও বন্ধ করে নিয়েছি। পরে বিমানের ভেতর কী ঘটেছিলো বলতে পারি না। যাত্রীদের জামা-কাপড় বা শ্বাস-প্রশ্বাসে করে কোনো ধরনের রোগ-জীবানু যাতে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে না পারে এজন্য বিমান অবতরণের আগে এমন অভিযান।
ওয়েলকাম টু পেনাং, মালয়েশিয়া। চমৎকার পেনাং শহরের আজকের আবহাওয়া। বিমান অবতরণের পর ককপিট থেকে যাত্রীদের উদ্দেশ্যে এটা ছিলো সর্বশেষ ঘোষণা। পেনাং মালয়েশিয়ার একটি দ্বীপ রাজ্য। পেনাং-এ আছে মালয়েশিয়ার প্রাচীন সমুদ্রবন্দর। যমুনা সেতুর চেয়ে কয়েকগুন দীর্ঘ দুই-দুইটা সেতু স্থাপনের মধ্য দিয়ে মূল ভূমির সঙ্গে পেনাংকে সংযোগ করা হয়েছে।
আমি আর আমার ভ্রমণসঙ্গী মালয়েশিয়ায় ঢুকেছিলাম পেনাং দিয়ে। এ পেনাং দিয়েই চীনা ও ভারতীয়রা প্রথম মালয়েশিয়া আসেন। আপনি মালয়েশিয়া গেলে কে ভারতীয়, কে চাইনিজ, আর কেবা মালয়েশিয় এটা আলাদা করার কোনো সুযোগ নেই। এক কথায় সবাই মালয়েশিয়, যারা আগে এদেশে এসেছিলেন।
পেনাং থেকে কুয়ালালামপুরের সড়কপথ চার ঘণ্টার। ঠিক করলাম বাসে যাবো। বন-বনানী গাছ-গাছালি ছোট-বড় পাহাড় আর নারকেলের সারি সারি গাছ, নয়নজুড়ানো মালয়েশিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে কখন যে পৌঁছে গেছি ব্যস্ততম উঁচু দালানের শহর কুয়ালালামপুর টেরই পাইনি। সেখানের এক ভারতীয় রেস্তোরাঁয় কলাপাতায় সেরে নিলাম দুপুরের খাবার। মনে হলো বিলটা আমাদের কাছ থেকে একটু বেশিই নিলো।
বাতু কেভস এলাকায় ঢোকার পর যা দেখা যাবে তার অধিকাংশই বিশাল আকৃতির। বিশাল বিশাল আকাশছোঁয়া পাহাড়। মাটির নয়, কঠিন পাথরের পাহাড়। পাহাড়ের মধ্যে গুহা। মূল গেটের পরেই দেখতে পেলাম বিশাল হনুমান মূর্তি। একটা মন্দিরের পর মূল মূর্তি, ১৪০ ফুট উচ্চতার সোনালি মুরুগান মূর্তি।
মূর্তির পাশ দিয়ে উঠে গেছে সিঁড়িপথ। সিঁড়ির মোট ২৭২ ধাপ পেরিয়ে উপরে উঠলাম। গুহায় যেতে সিড়ি ভেঙে আবার নিচের দিকে নামলাম। বাইরে থেকে পাহাড়টা যত বিশাল দেখতে, ভেতরে গুহা তত বড় নয়। গুহার ভেতর হিন্দু মন্দির। ১৮৯১ সালে মন্দিরটি এখানে নির্মাণ করা হয়। চারদিকে দেব-দেবীর ছোট-বড় মূর্তি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় মন্দির এটি।
বাতু গুহার পুরো সৌন্দর্যটাই প্রাকৃতিক। পাহাড়, গাছ-গাছালি পাখিদের কিচিরমিচির ও বানরের দেখা মেলে, অসংখ্য বানর ছুটাছুটি করে। এখানে বাস করছেন হিন্দু ধর্মগুরুরা। পুরো এলাকাতে তামিলদের আধিপত্য। তামিলদের ব্যবসা-বাণিজ্য।
দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটকের ভিড়। মন্দির গুহায় প্রবেশ বিনামূল্যে। বাকি গুহাগুলোতে প্রবেশ করতে টিকেট কাটতে হয়। বাতু কেইভস আর এখানকার পাহাড়ি সৌন্দর্য যে কারো মন ভরিয়ে দেবে।
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি
এই লেখকের আরও লেখা
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |