গ্রেপ্তার ব্যক্তির কাছ থেকে একটি অটোমেটিক রাইফেল জব্দ করেছে বাফেলো সিটি পুলিশ।
Published : 30 Apr 2024, 01:38 PM
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক স্টেটের বাফেলোতে দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
ড্যাল ও কিউমিংস নামের ৩১ বছর বয়সী ওই যুবককে সোমবার বাফেলো সিটি কোর্টের জজ স্যামুয়েল পি ডেভিসের এজলাসে হাজির করা হয়। সেখানে এরিক কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি মাইকেল জে কিনের আবেদনে ৩ মে পর্যন্ত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন বিচারক।
এদিন বিকালেই সিটি মেয়র বাইরেন ডাব্লিউ ব্রাউন ও বাফেলো পুলিশ কমিশনার জোসেফ গ্রেমাগলিয়ার সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি জে কিন।
ড্যাল ও কিউমিংসের বিরুদ্ধে বাফেলো ক্রিমিনাল কোর্টে বেশ কয়েকটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তার নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা (গৃহহীন) না থাকায় মামলাগুলোর একটিতেও হাজিরা দেননি। হত্যাকাণ্ডের প্রায় একই সময়ে ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ভিডিওতে তাকে দেখা গেছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তির কাছ থেকে একটি অটোমেটিক রাইফেল জব্দের কথা জানিয়ে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি বলেন, অস্ত্রটি বেআইনিভাবে তার দখলে ছিল। দুই বাংলাদেশিকে হত্যায় সেটি ব্যবহার করা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
বেআইনিভাবে অস্ত্র বহনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে ড্যাল ও কিউমিংসের সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে বলে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি জানান। আর জোড়া খুনের ঘটনার দোষী সাব্যস্ত হলে আজীবন তাকে কারাগারে থাকতে হতে পারে।
শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় দিকে বাফেলোর জিনার স্ট্রিটে (ইস্ট ফেরি স্ট্রিট ও বেইলি অ্যাভিনিউ কর্নারে) গুলি করে হত্যা করা হয় সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবু সালেহ মোহাম্মদ ইউসুফ (৫৮) এবং কুমিল্লার বাবুল মিয়াকে (৪৩)।
বাবুল মিয়া আগে সপরিবারে থাকতেন ম্যারিল্যান্ডে। সম্প্রতি তিনি বাফেলোতে বাড়ি কেনেন। আর ইউসুফ গত ডিসেম্বরে স্ত্রী এবং দুই মেয়েসহ বাফেলোতে আসেন স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য।
ঘটনার সময় তারা বাড়ির সংস্কার কাজ করছিলেন। গুলিতে একজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান অন্যজন।
যে বাড়িতে কাজের সময় বাবুল ও ইউসুফ আক্রান্ত হন, তার পাশের একটি সিসিটিভির ভিডিও দেখে আততায়ীকে শনাক্ত করে পুলিশ। পরে তাকে ধরিয়ে দিতে সাড়ে ৭ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
ঘটনার পরদিন রোববার জোহরের নামাজের পর বাফেলো মুসলিম সেন্টারের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন প্রবাসীরা। হত্যাকারীকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান। বাফেলো সিটি মেয়র এবং পুলিশ কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সেখানে উপস্থিত হয়ে কমিউনিটির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।
ওই বিক্ষোভের ঘণ্টা দুয়েক পর সিটির ইস্ট ডেলাভান এবং নর্থ ফর্ক এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়ি থেকে সন্দেহভাজন যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বাফেলো সিটি মেয়র ও পুলিশ কমিশনার জানান, নিহত দুই বাংলাদেশি যে বাড়িতে কাজ করছিলেন, সেটি বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছে। গ্রেপ্তার ড্যাল ও কিউমিংস ওই বাসাতেই থাকছিলেন। বাড়িটি মেরামতের পর বিক্রি হয়ে গেলে তিনি কোথায় থাকবেন, সেই ধারণা থেকেই হয়ত ক্ষিপ্ত হয়ে গুলি চালান।
তবে ড্যাল ও কিউমিংস ‘টার্গেট করে কিংবা বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে’ গুলি ছোড়েননি বলে দাবি করেন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি মাইকেল জে কিন। তার ভাষ্য, “সেসময় অন্য কেউ গেলেও গুলিবিদ্ধ হতেন।”
তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তদন্তে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহকারী ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ক্রিস্টফার এস সাফোকো এবং বাফেলো পুলিশের হোমিসাইড ব্যুরোর চিফ গ্যারি ডব্লিউ হ্যাকবুশ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গুলিতে নিহত সিলেটের আবু সালেহ মোহাম্মদ ইউসুফে সাত সন্তান রয়েছে। আর বাবুল মিয়ার দুই সন্তান রয়েছে এবং তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। স্বামীকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উভয়ের স্ত্রী।
নিউ ইয়র্ক সিটি থেকে ৩৯০ মাইল দূরে বাফেলো বিশ্বখ্যাত নায়েগ্রা ফল্স সংলগ্ন এলাকা। কানাডা সীমান্ত ঘেঁষা জনপদ এটি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিউ ইয়র্ক সিটি থেকে অনেক বাংলাদেশি কম দামে সেখানে বাড়ি কিনে বসতি গড়ছেন। জরাজীর্ণ বাড়ি মেরামত করে বাফেলো সিটির চেহারা পাল্টে দিচ্ছেন বাংলাদেশিরা। এই সিটিতেই স্থায়ীভাবে বসবাসের পরিকল্পনা ছিল ইউসুফ ও বাবুল মিয়ার। কিন্তু তাদের খুনের ঘটনায় স্থানীয় কমিউনিটির মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছেন সেখানকারা বাসিন্দারা।
বাফেলো সিটি মেয়র বাইরেন ডাব্লিউ ব্রাউন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাফেলোর আইনশৃঙ্খলা সুরক্ষায় তারা বদ্ধপরিকর। পুলিশ কমিশনার জোসেফ গ্রেমাগলিয়া জানান, আগের চেয়ে সেখানে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।
আরো পড়ুন-