এ তালিকায় বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে আরো রয়েছে মিশর, তিউনিসিয়া, মরক্কো ও গিনির নাম।
Published : 14 May 2024, 11:57 AM
বর্তমানে ইতালিতে থাকা অনিয়মিত অভিবাসীদের মধ্যে ৭৮ শতাংশ বাংলাদেশি নাগরিককে ‘ফেরত পাঠানো হতে পারে’ বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার।
এ তালিকায় বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে আরো রয়েছে মিশর, তিউনিসিয়া, মরক্কো ও গিনির নাম।
শুক্রবার মিলান পুলিশের সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান স্থানীয় পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর ক্রিস্টিয়ানো দি মারিনো।
মারিনোর বরাত দিয়ে দেশটির মূলধারার গণমাধ্যম ‘স্কাই টিজি টোয়েন্টিফোর’ শনিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এতে বলা হয়, ‘ভূমধ্যসাগরসহ অন্যান্য দেশ থেকে অবৈধভাবে ইতালিতে প্রবেশ বন্ধ করতে বেশ কয়েকটি কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছে মেলোনি সরকার। তার ধারাবাহিকতায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাউন্সিলের সম্মতিক্রমে আলবেনিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে ইতালি। চুক্তি অনুযায়ী ইতালিতে অবৈধভাবে প্রবেশ করা অভিবাসীদের মধ্যে যারা দেশটিতে থাকার অনুমতি পাবে না, তাদের আলবেনিয়ায় পাঠানোর কথা রয়েছে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে আলবেনিয়ায় বেশ কয়েকটি অভিবাসন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণকাজ শুরু করেছে ইতালি। চলতি বছরের শেষদিকে তিনটি কেন্দ্র চালু করার ঘোষণা দিয়েছেন ইতালির বর্তমান সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনি।
সম্প্রতি ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ‘নিরাপদ দেশের’ নাগরিকদের মধ্যে যারা এই মুহূর্তে ইতালিতে অনিয়মিত রয়েছেন, তাদের মধ্যে ৭৮ শতাংশ বাংলাদেশির দেশটিতে থাকার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার আশঙ্কার কথা জানান পুলিশের ডেপুটি কমিশনার।
শুধু বাংলাদেশ নয়, দেশটিতে অনিয়মিত অভিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন বাতিল হবে মিশর ও তিউনিসিয়ার অভিবাসীদের।
মারিনোর বরাত দিয়ে ‘স্কাই টিজি টোয়েন্টিফোর’ আরও জানায়, ‘২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইতালিতে প্রায় ২ লাখের মতো আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মধ্যে মিশরের ৯০ শতাংশ, তিউনিসিয়ার ৯০ শতাংশ, মরক্কোর ৮৪ শতাংশ, বাংলাদেশের ৭৮ শতাংশ এবং গিনির ৬৪ শতাংশ অভিবাসীর দেশটিতে থাকার আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে আদালতের মাধ্যমে যাদের আবেদন বাতিল হবে, তারা আর দেশটিতে থাকতে পারবে না বলে জানান তিনি।’
স্থানীয় অভিবাসন পুলিশের তথ্যমতে, ২০০৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত দেশটিতে থাকা অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ অভিবাসীদের আশ্রয় আবেদন বাতিল করা হলেও ১৮ শতাংশ অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছে ইতালি।
এ বিষয়ে ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল অফিসের ভাইস কনসাল তাইজুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আমরা বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পেইন করে অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি জমানোর ঝুঁকি সম্পর্কে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করি। সরকারের বিভিন্ন মহল ইউরোপসহ অনেক দেশে বৈধভাবে দক্ষ শ্রমিক পাঠানো শুরু করেছে।”
ঝুঁকি নিয়ে নয়, বরং প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ হয়ে বিদেশে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০২২ সালের অক্টোবরে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে ইতালির বর্তমান সরকার। ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশ তিউনিসিয়া ও মিশর সফর করে অবৈধভাবে দেশটিতে প্রবেশের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি কঠোর পদক্ষেপ নেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাউন্সিলের সম্মতিক্রমে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের বলকান উপদ্বীপের উত্তর-পশ্চিম কোণের দেশ আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইদি রামার সঙ্গে একটি চুক্তি করেন তিনি। চুক্তি অনুযায়ী অবৈধভাবে ইতালিতে আসা অভিবাসীদের মধ্যে যারা দেশটিতে থাকার অনুমতি পাবে না, তাদের আলবেনিয়ায় পাঠানো হবে। সেখান থেকে পরে নিজ দেশে পাঠানোর কথা রয়েছে।