সরকারি বেসরকারি সব পুকুর ভরাটের একটা নীতিমালা ব্রিটিশ আমল থেকেই আছে। ২০০০ সালে সরকার এ নীতিমালাকে আধুনিকীকরণ করেছে। তিন শতক আয়তনের বেশি জলাশয় এই আইনের আওতায় রাখা হয়েছে। এ নীতিমালা অনুসারে সরকারি ও বেসরকারি মালিকানাধীন কোনো পুকুর ইচ্ছা করলেই ভরাট করা যাবে না।
Published : 18 May 2024, 08:45 PM
‘আমি চাই পুকুর বোজালে আকাশ ভাসবে চোখের জলে’— এমন আকাঙ্ক্ষা তো বাস্তবে ঘটে না। বরং আকাশ আরও রুদ্ররূপ ধারণ করে। শুধু কী পুকুর, নদী, খাল, নালা সবকিছু আমরা গিলে খাচ্ছি। এক যশোর শহরে কত জলাশয় ভরাট হয়েছে, ভাবতে ভয় লাগে। ছোট-বড় সব শহরেই জলাশয়গুলোকে হত্যা করা হচ্ছে। আপাতত এখানে যশোরের কথা বলছি।
সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের জেলা যশোর। নামকরণের বাস্তব এবং যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় ইংরেজ ঐতিহাসিক আলেকজান্ডার কানিংহামের কাছ থেকে। যশোর আরবি ভাষার ‘জসর’ কথার পরিবর্তিত রূপ। জসর শব্দের বাংলা হচ্ছে সেতু বা সাঁকো। অতীতে যশোর অঞ্চলে প্রচুর নদী, খাল ও নালা ছিল। যোগাযোগের জন্য এসব নদ, নদী ও খালের ওপর সেতু বা সাঁকো ব্যবহার হতো। অসংখ্য সেতুর কারণে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে এলাকাটা জসর। পরে সময়ের বিবর্তনে যশর, যশোহর থেকে যশোর। নামকরণে ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য প্রভাব ফেললেও আজকের যশোরে সে প্রভাব হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ ভোগের মানসিকতায় মত্ত হয়ে প্রভাব নষ্ট করতে মরিয়া। আপেক্ষিক ভাবনায় প্রভাব নষ্ট করে আগামী জীবনকে কষ্টসাধ্য করে তুলেছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় যশোর দিনে দিনে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার অঞ্চলের মধ্যে চলে যাচ্ছে। ‘দেশে তিন দশকে বেশি দিন তপ্ত যশোর’— ২০২৩ সালে প্রকাশিত এই সংবাদ শিরোনামটি এবছরও সমান মাত্রায় প্রাসঙ্গিক। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক তাপপ্রবাহের অবস্থা নিয়ে ‘বাংলাদেশে সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহের প্রবণতা’ শীর্ষক গবেষণার তথ্য বলছে, দেশে ৩১ বছরে যশোর সর্বোচ্চ ৯২৭ দিন তপ্ত ছিল এবং এই তপ্ত দিনগুলোয় যশোরে তাপমাত্রা কখনোই ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। গবেষকের গবেষণায় ১৯৮৮ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৩১ বছরের তাপপ্রবাহের উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত এই তাপবৃদ্ধির সূচক আরো বেশি ঊর্ধ্বমুখী।
পরিবেশের জন্য পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পানির উৎসগুলো একে একে নষ্ট হওয়ার ফলে দেশ আজ চরম সংকটের মধ্যে দিয়ে চলেছে। নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওড়ের সঙ্গে পুকুরগুলোকেও রক্ষা করা যাচ্ছে না। সারাদেশের মধ্যে যশোর এই বিপর্যয়ের অন্যতম দৃষ্টান্ত। বিশেষজ্ঞগণ যশোর অঞ্চলের উষ্ণায়নের জন্য ৬ কারণকে চিহ্নিত করেছেন। জলাশয় ভরাট করে ফেলা এবং জলাভূমি শুকিয়ে যাওয়া যার মধ্যে অন্যতম।
জাতীয় অবহেলা ও ভারতের একতরফা উজানে পানি প্রত্যাহারের কারণে দেশের নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওড়গুলোর স্বাভাবিক জীবনচক্র হারিয়ে ফেলেছে। সারাদেশে আজ এই জলাশয়গুলো রক্ষার জন্য পরিবেশ সচেতন মানুষ আন্দোলন সংগ্রাম করছে। নদী সংস্কারে সরকারের বিশাল পরিকল্পনা গ্রহণ দেশবাসীকে আশান্বিত করেছে।
যশোরবাসীর অন্যতম প্রধান দাবি ভৈরব নদ সংস্কারের আন্দোলনের সঙ্গে ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রীর একাত্মতা প্রকাশের পর ২০১৬ সালে বহু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পেরিয়ে খনন কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ এক দশকের অপেক্ষার পর নদ সংস্কার হলো ঠিকই কিন্তু তা বহতা হলো না। নদ সংস্কারের প্রকল্প, পানি নিষ্কাশন ও সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রকল্পে রূপান্তরিত হলো। ২৭২ কোটি টাকা ব্যয় করে যে সংস্কার হলো তাতে ভবিষ্যতেও যশোরবাসীর প্রত্যাশার বহমান ভৈরব পাওয়ার কোনো সুযোগ আর থাকলো না। ভৈবর এখন যশোরের বর্জ্য নিষ্কাশনের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
গাঙ্গেয় এই বদ্বীপে নদ-নদীগুলোকে বহতা করা গেলে অন্য জলাশয়গুলো রক্ষা করা সহজতর হয়ে যেত। সরকার সাম্প্রতিক সময়ে নদনদী ড্রেজিং করার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সরকার সক্রিয় হলে সংস্কার কাজ গতি পেত। কিন্তু সরকার নিষ্ক্রিয় থাকার কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও গুরুত্বের সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নে তৎপর নয়। সরকারের এমন নিষ্ক্রিয়তা জলাশয়ের ছোট ইউনিট পুকুরের ভাগ্যে অশনি সংকেত হিসেবে দেখা দিয়েছে। সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি পুকুর ভরাট করার মহোৎসব চলছে। স্থানীয় সরকার ও পরিবেশ অধিদপ্তর নাকে শর্ষের তেল দিয়ে ঘুমিয়ে সময় পার করে দিচ্ছে। এরা চোখে দেখে না, কানে শোনে না। পুকুরের ব্যাপারে তাদেরকে জবাবদিহিতার উর্ধ্বে এবং দায়িত্ববোধহীন বধির বলে মনে হয় । আইন তোলা আছে কাজীর খাতায়। অবস্থাদৃষ্টে বলাই যায় আইনের রক্ষকরা নিজেরাই যেখানে আইন ভাঙে সেখানে তারা অন্যদের কি বলবে? দেশের পরিবেশবাদীরাও রীতিরক্ষার আন্দোলন সংগ্রাম করে নীবর হয়ে যাচ্ছেন।
শহরে গ্রামীণ পরিবেশ সৃষ্টির অন্যতম প্রধান অনুঘটক জলাশয়। এক সময় যশোর ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক পুকুরের শহর ছিল। কালের বিবর্তনে জনসংখ্যার চাপে অর্থনৈতিক দুরাবস্থায় যৌথ পরিবার ভেঙে এবং ভূমিদস্যুদের লোলুপতায় অনেক জলাশয় হারিয়ে গেলেও শহর থেকে জলাশয়ের অস্তিত্ব মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি। জলাশয় ভরাট করে আধুনিকতার পরশ পেতে এবং দিতে সরকারি বেসরকারি প্রতিযোগিতায় কেউ পিছিয়ে থাকিনি। ১৯৩৫ সালের পন্ড অ্যাক্ট সরকার নিজের জন্য কার্যকর না করার কারণে বেসরকারি পর্যায়ে তা বাস্তবায়ন করার কথা কেউ মনেও আনেনি। জলাশয় ভরাটে সরকারি কিছু বাধ্যবাধকতা আছে তা সবাই ভুলে গেছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে জলাশয় ভরাটের প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নির্বিচারে জলাশয় ভরাটের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে দাবি করে কিছু পরিবেশবাদী মানুষ সোচ্চার হওয়ার পরও পৌর কর্তৃপক্ষ এবং পরিবেশ অধিদপ্তর নির্বিকার।
আইন কাজীর খাতায় রেখে দেয়ায় পুকুর ভরাটের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। গত দেড় থেকে আড়াই দশকে তা চরম আকার ধারণ করেছে। আগে পুকুর ভরাট হলেও তা মানুষের ভাবনায় তেমনভাবে স্থান করে নিতে পারেনি। কিন্তু অঞ্চলের আবহাওয়া চরম হতে শুরু করার পর থেকে মানুষ সচেতন হতে থাকে। পুকুর ভরাটের বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা বাড়তে থাকে, যা মার্চ-এপ্রিল মাসে ব্যাপকতা পায় যখন সাধারণ মানুষ খাবার পানির সংকটে পড়ে। আলোচনা-সমালোচনা আরও গভীরতা পায় যখন সরকার নিজে আইনকে পাশ কাটিয়ে সরকারি পুকুর ভরাট করে। বাস্তবতা এই যে, সরকারের প্রচুর খাস জমি পড়ে থাকার পরও পুকুর ভরাট করে উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। ফলে সরকার নিজের অন্যায় ঢাকার জন্য আইনের প্রয়োগ করতে ব্যর্থতার পরিচয় রেখে চলেছে। সরকারের এহেন ব্যর্থতার কারণে শুধু যশোর নয় সারাদেশের পরিবেশ আজ হুমকির মুখে। শত শত একর খাস জমি প্রভাবশালীদের মধ্যে বিতরণের প্রক্রিয়া চলামান রেখে জলাশয় ধ্বংস করে উন্নয়ন কাম্য হতে পারে না।
যশোর পৌর এলাকায় এক বেজপাড়া ওয়ার্ডে গত ৩০-৩৫ বছরে পুকুর ভরাট করা হয়েছে অন্তত ১৫টি। যার বছরওয়ারী নামভিত্তিক বিবরণ দেওয়া সম্ভব। এখানেই শেষ নয়। সাম্প্রতিক সময়ে যশোর পৌর এলাকাধীন পুকুর ভরাটের এ মহামারীর তালিকায় আছে আরো ৩৬টি পুকুর। শহরের প্রাণকেন্দ্র লালদীঘির মতো আংশিক ভরাট করা হয়েছে পণ্ডিত পুকুর। লালদীঘির এক তৃতীয়াংশ চলে গেছে পৌরসভার মার্কেট নির্মাণে, যে মার্কেটের আবার পৌর হেরিটেজ বলে গালভরা নাম দেওয়া হয়েছে একটা । এ তালিকার সর্বশেষ সংযোজন যশোর আইটি পার্ক তৈরির সময় সদ্য সিংহভাগ ভরাটকৃত বেজপাড়া মেইন রোডের পিডাব্লিউডির সরকারি পুকুর। যে পুকুরের একটা অংশ শহরের জনবহুল স্থানে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিদ্যুতের গ্রিড স্টেশন করার জন্য আগেই ভরাট করা শুরু হয়েছিল। সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করলে দেখা যাবে তাদের কাছে আরো অনেক পুকুর ভরাটের ইতিহাস আছে।
যশোর পৌরএলাকায় এখন অল্প সংখ্যক মাত্র ব্যক্তিমালিকানার পুকুরের সঙ্গে কিছু প্রতিষ্ঠানের পুকুর সংস্কারবিহীন অবস্থায় নিভু নিভু প্রাণে বেঁচে আছে। যার মধ্যে এম, এম কলেজের পুকুর, আদর্শবালিকা বিদ্যালয়ের পুকুর, যশোর ইনস্টিটিউটের পুকুর, জলকলের পুকুর, ভোলা ট্যাংক, নড়াইল কাচারি পুকুর, সড়ক বিভাগের পুকুর, গণপূর্তের পুকুর, পাবলিক হেলথের পুকুর ইত্যাদি।অবস্থা এমনই সঙ্গীন যে শহরে বড় ধরণের অগ্নিকাণ্ড ঘটলেও আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত পানি পাওয়া সম্ভব হবে কিনা সংশয় রয়েছে। আর এটিতো একটা ছোট্ট পৌরসভার একটা ক্ষুদ্র চিত্র মাত্র। তালিকা পূর্ণাঙ্গ নয়। এমন আরো অনেক পুকুর আছে যার হদিশ করা সম্ভব হয়নি। আগ্রহী মানুষ উৎসাহিত হলে স্বাধীনতা পরবর্তীকালের পুকুর ভরাটের তালিকায় আরো অনেক পুকুরের নাম অর্ন্তভূক্ত হবে নিশ্চয়ই।
মজার বিষয় হলো যশোর পৌর এলাকাধীন পুকুর ভরাটে অনেক সমাজ সচেতন মানুষরাও আছেন। ব্যক্তিস্বার্থে উনারা দেশ ও জনগণের কল্যাণ চিন্তা করতে পারেননি। ফলে পুকুরের সঙ্গে পরিবেশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগাযোগ তার মধ্য দিয়ে অনুকূল আবহাওয়ার প্রত্যাশা ধীরে ধীরে শূন্যের কোটায় পৌছে গিয়েছে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সচেতন হলে, সরব হলে, আইনের কঠোর প্রয়োগ করলে এবং মানুষকে সচেতন করলে এখনো সামান্য যে কয়েকটা পুকুর আছে তা রক্ষা করা সম্ভব হবে হয়তো কারণ নিয়মিত বিরতিতে এখনো সরকারি-বেসরকারি পুকুর ভরাট চলছে। শহরের কেন্দ্রে ঐতিহাসিক লালদীঘিকে সৌন্দর্যের প্রতীক এবং আধুনিকায়ন করতে গিয়ে প্রায় ভরাটের পথে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ন্যূনতম পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে এবং জনকল্যাণে দলমত নির্বিশেষে সবার এগিয়ে আসা সময়ের দাবি হলেও শহরে সে ধরণের আন্দোলনের চিহ্নমাত্র নেই।
সরকারি বেসরকারি সব পুকুর ভরাটের একটা নীতিমালা ব্রিটিশ আমল থেকেই আছে। ২০০০ সালে সরকার এ নীতিমালাকে আধুনিকীকরণ করেছে। তিন শতক আয়তনের বেশি জলাশয় এই আইনের আওতায় রাখা হয়েছে। এ নীতিমালা অনুসারে সরকারি ও বেসরকারি মালিকানাধীন কোনো পুকুর ইচ্ছা করলেই ভরাট করা যাবে না। ‘আমার পুকুর আমি ভরাট করব’— সে বিষয়টি এখানে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্তদের নির্লিপ্ততার কারণে কোনো ধরণের নিয়ন্ত্রণ বাস্তবে দেখা যায় না। তাই সরকারি বেসরকারি সর্বত্রই নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ‘আমার পুকুর আমি ভরাট করব’— এ ব্যবস্থা চলছেই। ফলস্বরূপ প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে। তাপমাত্রা বাড়ছে, পানির স্তর নেমে যাচ্ছে, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, সবুজ আচ্ছাদন কমছে, পারিবারিক আমিষের ঘাটতি হচ্ছে। একটা পুকুর পরিবেশের উপর বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে না সঠিক, কিন্তু একটা ছোট জায়গায় তা যদি শতক ছাড়িয়ে যায় তবে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। তাই একটা ১৪ বর্গ কিলোমিটারের পৌর এলাকায় বড় বড় শতাধিক পুকুর ভরাটকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বিন্দু থেকেই সিন্ধুর সৃষ্টি। তাই সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের পাশাপাশি পরিবেশ সচেতন মানুষ সরব না হলে প্রতিকুলতা বাড়বে, জনজীবন বিপর্যস্ত হবে, দেশ ও জাতি চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যাবে।
দেশে সরকারি বেসরকারি সব পুকুরই সংস্কারের অভাবে বর্তমানে পিরিচের আকার ধারণ করেছে। বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে তা শুকিয়ে যায় কোনো পানি থাকে না। সংস্কার করে এই সব পুকুরগুলোর প্রাণ ফিরিয়ে আনা জরুরি। সরকারকেই উদ্যোগ নিয়ে একাজ করতে হবে দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে। একটা নীতিমালা তৈরি করে সব পুকুর রক্ষায় উদ্যোগী হতে হবে। শহরের কিছু পুকুরে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে মাছ চাষের নামে যে পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে তারও নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুরের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ কষ্টসাধ্য হলেও সংস্কারের দায়িত্ব নিয়ে সরকার তা-ও করতে পারে। সরকারি মালিকানাধীন পুকুরের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ব্যবহার উপেযোগী পানি রাখার ব্যবস্থা উত্তম। মাছ চাষের নামে পুকুরে যেসব খাদ্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাতে দুর্গন্ধে পাশ দিয়ে হাঁটা যায় না। পরিবেশের জন্য এটাও সুখকর অবস্থা নয়। বিদ্যমান পুকুরগুলো জনকল্যাণে ব্যবহার উপযোগী রাখার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ কামনা করি।
সারাদেশের পুকুরগুলো রক্ষা করা আজ সময়ের দাবি। নাগরিক জীবনের সঙ্গে পুকুরের সম্পর্ক গভীর। দৈনন্দিন ব্যবহারসহ পুকুর পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। ইট পাথরের শহরে জীবনের ক্লান্তি দূর করতে উন্মুক্ত পরিবেশে বুক ভরে নিশ্বাস নেয়ার প্রথম জায়গাটা পুকুর পাড়। উষ্ণায়ন কমাতে জলাশয় ভরাট বন্ধ এবং পানির আধারগুলোর পুনরুজ্জীবন জরুরি। বনায়ন এবং জলব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে সম্ভব না হলে অপরাপর কোনো পদক্ষেপই কাজে আসবে না। তাই দেশের জলাধারের সবচেয়ে ছোট ইউনিট পুকুর রক্ষা করার মধ্য দিয়ে দেশের পরিবেশ উন্নয়নে অবদান রেখে নিজেকে এবং আগামী প্রজন্মকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ সৃষ্টিতে ব্রতী হওয়া যুগের দাবি।