সরকার গত নভেম্বরে শিরীন পারভীন হককে প্রধান করে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করে।
Published : 19 Apr 2025, 05:34 PM
ক্ষমতার পালাবদলের পর দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে দ্বিতীয় ধাপে গঠিত নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কমিশনের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে প্রতিবেদনটি তুলে দেন।
কমিশন মোটা দাগে সংবিধান, আইন ও নারীর অধিকার— এ তিন বিষয়ে সুপারিশ করেছে, যেখানে সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি জোরালো করার কথা বলা হয়েছে। নারীর অগ্রগতির জন্য আছে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও জাতীয় সংস্থাগুলোর দক্ষতা বাড়ানোর সুপারিশও।
অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৮ নভেম্বর ‘নারীপক্ষ’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভীন হককে প্রধান করে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ কমিশন নিয়মিত বৈঠক করে ৪৩টি। পাশাপাশি নারী অধিকারকর্মী, উন্নয়ন সংস্থা, শ্রমিক সংগঠন, পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ৩৯টি পরামর্শ সভা হয়।
অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সঙ্গে ৯টি যৌথ সভাও হয়েছে তাদের। ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খুলনা, শ্রীমঙ্গল, রংপুর ও ময়মনসিংহে এসব সভা হয়। কমিশন বিভিন্ন বিষয়ে ‘অভিজ্ঞ ব্যক্তি’ ও সংগঠনের পরামর্শও নিয়েছে।
কমিশন তাদের প্রতিবেদনে নারীর স্বার্থ ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়নকে গুরুত্ব দিতে বলেছে। সহিংসতামুক্ত সমাজ গঠনে নারী ও মেয়ে শিশুর সুরক্ষা, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে জনপরিসরে নারীর অংশগ্রহণ এবং জনপ্রশাসনে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়ানোর কথাও এসেছে প্রতিবেদনে।
এছাড়া শিক্ষা, প্রযুক্তি ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন, সব বয়সী নারীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ, অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ ও সম্পদের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা, শ্রম ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পদক্ষেপ এবং নারী শ্রমিকদের নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করার প্রস্তাব এসেছে।
দারিদ্র্য কমাতে টেকসই সামাজিক সুরক্ষা, গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ ও ইতিবাচক চিত্রায়ণ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে নারীর অন্তর্ভুক্তি এবং দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নারীর অংশগ্রহণও কমিশনের সুপারিশের অন্তর্ভুক্ত।
এসব সুপারিশ প্রস্তুতের সময় সংবিধান ও আইন, বিদ্যমান নীতি, প্রতিষ্ঠান এবং কর্মসূচিগুলোকে বিবেচনায় নিয়েছে কমিশন।
সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত সময়সীমা দুটি ভাগ করা হয়েছে। একটি হলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ; অন্যটি হলো পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের মেয়াদে।
শনিবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে শিরীন হকের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র ফেলো মাহীন সুলতান, আইনজীবী কামরুন নাহার, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ফৌজিয়া করিম ফিরোজ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার, নারী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হালিদা হানুম আক্তার, বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক সিনিয়র সামাজিক উন্নয়ন উপদেষ্টা ফেরদৌসী সুলতানা ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিশিতা জামান নিহা।
রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার প্রথম ধাপে ছয়টি সংস্কার কমিশনের পর দ্বিতীয় ধাপে নারী বিষয়ক, গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়।
এসব সংস্কার কমিশনের ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ বাড়িয়ে প্রথমে ৩১ মার্চ এবং দ্বিতীয় দফায় ৩০ এপ্রিল করা হয়।
সেগুলোর মধ্যে ‘স্থানীয় সরকার সংস্কার’ কমিশনের প্রাথমিক সুপারিশের প্রতিবেদন জমা পড়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি।
এরপর ২২ মার্চ জমা দেওয়া হয় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন।
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা পড়ায় বাকি থাকল স্বাস্থ্য ও শ্রম।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের হাল ধরা অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়।
এরই ধারাবাহিকতায় সে বছর অক্টোবরে প্রথম ধাপে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ইতোমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে।
কমিশনগুলো হল- সংবিধান সংস্কার, বিচার বিভাগ সংস্কার, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার, জনপ্রশাসন সংস্কার, পুলিশ সংস্কার ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার।
এর মধ্যে পুলিশ সংস্কার ছাড়া অন্য পাঁচ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে ২০ মার্চ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।