এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা সাধারণভাবে ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য’ বিবেচিত হবেন।
Published : 21 May 2024, 08:56 AM
দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা সাধারণভাবে ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য’ বিবেচিত হবেন।
২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর বাংলাদেশের চিফ অব আর্মি স্টাফ ছিলেন জেনারেল আজিজ আহমেদ। তার আগে ২০১২ সাল থেকে চার বছর বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিজিবির নেতৃত্ব দেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কারণে’ যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায় বাংলাদেশের সাবেক জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
“তার কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার ওপ জনগণের বিশ্বাসকে ক্ষুণ্ন করতে ভূমিকা রেখেছে।”
দুর্নীতির এই অভিযোগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের বিষয়ে আজিজ আহমেদ কিংবা বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি।
তবে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে আল-জাজিরা যখন সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনেছিল, তখন সেনা সদর এবং সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে ওই প্রতিবেদনকে ‘মিথ্যা’ ও ‘অপপ্রচার’ আখ্যা দিয়েছিল।
আজিজ আহমেদও সে সময় বলেছিলেন, সেনাবাহিনীকে নিয়ে নানা ধরনের ‘অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে, যাতে একটি ‘বিভ্রান্তির’ সৃষ্টি হয়।
কী ধরনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, সে তথ্য জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আজিজ আহমেদ নিজের ভাইকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করতে গিয়ে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেন এবং এর মধ্য দিয়ে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত হন। তাছাড়া অন্যায়ভাবে সেনাবাহিনীর কাজ পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছেন।”
ম্যাথিউ মিলার বলছেন, বাংলাদেশে ‘গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের শাসন শক্তিশালী করতে’ যুক্তরাষ্ট্রের যে অঙ্গীকার, আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়ার মধ্য দিয়ে তা ‘পুনর্ব্যক্ত’ করা হল।
সরকারি সেবাপ্রাপ্তির সুযোগ সহজতর এবং স্বচ্ছ করা, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডের উন্নয়ন এবং মুদ্রা পাচার ও অন্যান্য অর্থনৈতিক অপরাধের অনুসন্ধান ও বিচার নিশ্চিতে সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার কথাও বিবৃতিতে বলা হয়।
এর আগে ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাব এবং এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া মেলেনি।
সর্বশেষ মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লুর ঢাকা সফরেও নিষেধাজ্ঞা তোলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু লু ফিরে যাওয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে মুখ্য উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল স্পষ্ট জানিয়ে দেন, র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাহার করছে না।
নির্বাচনের আগে গতবছর যুক্তরাষ্ট্র কিছু বাংলাদেশির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যা নিয়ে টানাপড়েন নতুন মাত্রা পায়।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ‘বাধাগ্রস্ত’ করে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িতদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধ করতে তারা ওই ভিসানীতি কার্যকর করেছে।
কতজন ব্যক্তি বা কাদের ক্ষেত্রে ওই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তা স্পষ্ট না করলেও পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সে সময় বলেছিলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা রয়েছেন এর মধ্যে।
পুরনো খবর