“একজন রাজাকার সন্তান; জমি দখলকারী। তার কী করে এলাকায় পোস্টার লাগে, শত শত গাড়িবহর বের করে?”
Published : 30 Apr 2024, 10:49 PM
বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান।
তিনি বলেন, “এক বিএনপি নেতা বঙ্গবন্ধুকে অপমান করে এই এলাকা থেকে নির্বাচন করার কলিজাটা কোথায় পায়? কোথায় আমার আওয়ামী লীগের কর্মীরা? হাতে কি চুরি পড়েছেন?”
মঙ্গলবার বিকালে পুরান বন্দর এলাকায় বড় ভাই নাসিম ওসমানের দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। তবে তিনি কারও নাম উল্লেখ করেননি।
বন্দর উপজেলায় চেয়ারম্যান যে চারজন লড়ছেন তাদের মধ্যে একজন হলেন- সাবেক চেয়ারম্যান মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান মুকুল। তার প্রতীক চিংড়ি মাছ। তিনি এখন দল থেকে বহিষ্কৃত।
এ ছাড়া ভোটের মাঠে আছেন বর্তমান চেয়ারম্যান বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ রশীদ (দোয়াত-কলম)।
জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন আনারস প্রতীকে লড়াই করছেন। তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভও হেলিকপ্টার প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন।
সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হলেও তিনি এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের রশীদকে সমর্থন দিচ্ছেন। এম এ রশীদ গত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
উপজেলা নির্বাচনে ‘পছন্দের’ তিন প্রার্থীর নাম উল্লেখ করে এই সংসদ সদস্য বলেন, “আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা; আমার সহকর্মী রশীদ ভাই একজন মুক্তিযোদ্ধা। নাসিম ওসমান একজন মুক্তিযোদ্ধা, নাসিম ওসমানের সহকর্মী সানাউল্লাহ সানু (ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী)। আমাদের ছোট শান্তা (নারী ভাইস চেয়ারম্যান) আমাদের মেয়ের মত।”
এ সময় একজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীকে উদ্দেশ করে সেলিম ওসমান বলেন, “একজন রাজাকার সন্তান; জমি দখলকারী। তার কী করে এলাকায় পোস্টার লাগে, শত শত গাড়িবহর বের করে? মানুষ অবজেকশন দিলে, উনি বলেন সরি। নির্বাচন কমিশন ওনাকে ছেড়ে দেন। প্রশাসনের লোকজন ঘুমায়ে গেলে হবে না, দেখতে হয়।”
নাসিম ওসমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তার আরেক ছোটভাই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানও।
শামীম ওসমান তার বক্তব্যে বলেন, “এইখানে এসে শুনলাম, কেউ কেউ এমন এমন বক্তব্য দিচ্ছেন আর এমন এমন কথা বলছেন। ওই কথাগুলো যদি আমলে নেই তাহলে আগামীকাল থেকে কেউ মাঠে নামতে পারবেন না।
“আমরা জানি কী করতে হবে। আমরা চাই সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন হোক। যার কপালে লেখা আছে সে পাশ করবে। কিন্তু কথাবার্তা সীমানার মধ্যে রাখেন।”
দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “তোমরা আছ; আগামীকাল থেকে বন্দরে যেন কেউ অশান্তি সৃষ্টি করতে না পারে। এইটা দেখা আপনাদের দায়িত্ব। কেউ মহড়া দেখাবেন না। আমরা যেমন ক্ষমতাসীন পার্টি হয়ে ক্ষমতা দেখাই না, তেমনি কেউ মহড়া দেখাইবেন না। আমরা ক্ষমতা দেখালে কেউ নির্বাচন করতে পারতেন না।”
শামীম ওসমান বলেন, “কেউ কেউ কিছু কথা বলেছেন। ওই কথাগুলো শোনার পরে যদি… আজকে আমার ভাইয়ার মৃত্যুবার্ষিকী না হত, তাহলে আমি একটা সিদ্ধান্ত দিয়ে যাইতাম। কিন্তু সেই কাজটি আমি করব না। কারণ আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। মুখের বুলি আর বন্দুকের গুলি একবার বের হয়ে গেলে ফেরত যায় না। কথা বলার সময় এইটা মাথায় রেখে কথা বলবেন।
“আর এইটাই শেষ না, সামনে আরও সময় আছে। মিলেমিশে ছিলেন মিলেমিশে থাকেন’, যোগ করেন শামীম ওসমান।
দুই ভাইয়ের বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপির সাবেক নেতা আতাউর রহমান মুকুল বলেন, “আমি বঙ্গবন্ধুকে অপমান করে কোনো কথা বলিনি। এইটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আর সেলিম ওসমান আমার বড় ভাইয়ের মতো, উনি দুই-একটা কথা বলতে পারেন।
“এইসব নিয়ে কিছু বলবো না। তবে, আমি মনে করি, এই ধরনের কথা ভোটারদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।”
আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী মাকসুদ হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আচরণবিধি ভঙ্গ: নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীকে শোকজ
বন্দরে আওয়ামী লীগ, 'বিএনপি' আর জাপা নেতার লড়াই