প্রবাসে প্রথম আইস স্কেটিং

আমি একটি পান্ডায় ভর করে আইস স্কেটিং করছি আর ভাবছি, কীভাবে অন্যরা এতো ভালো স্কেটিং করে। পিছলে পড়ার ভয় মনের মাঝে। একবার পড়লেই নিশ্চিত মেরুদণ্ড ভেঙে হবে দুই টুকরো।

নাঈম হাবিব, জার্মানি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2018, 06:19 AM
Updated : 13 Jan 2018, 06:19 AM

দুবাইয়ে বড় শপিংমলে আইস স্কেটিং রিঙ্ক দেখেছি। রিঙ্ক হচ্ছে স্কেটিং-এর জন্য প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম উপায়ে তৈরি বরফের আস্তরণ। বরফের মাঠ। দুবাইয়ে যখন ছিলাম, তখন শপিংমলে বরফ মাঠে গিয়ে আইস স্কেটিং দেখতাম। এটা আমার ভীষণ ভালো লাগতো, মুগ্ধ হতাম আমি।

পিছলে পড়ে কোমর ভাঙ্গার ভয়ে কখনও নিজে এটি করার চিন্তা মাথায় আসতো না। যারা আইস স্কেটিং করতো, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদেরকে দেখতাম। তাছাড়া দুবাইয়ে আইস স্কেটিং-এর টিকিট মূল্য আমার কাছে একটু বেশিই মনে হতো, তার উপর পিছলে পড়ার ভয়।

ইউরোপে আইস স্কেটিং শুধু গল্পই নয়, এটি এখানে জনপ্রিয় একটি শীতকালীন খেলার নাম। এখানে এ খেলার প্রতিযোগিতা হয়। খেলাটা সহজ নয়। এটা খেলতে যেমন আনন্দ, দেখতেও তেমন আনন্দের। যেকোনো আইস স্কেটিং রিঙ্কে কিছু অতি বিজ্ঞ ছেলেমেয়ে থাকে, যারা অনেক ভঙ্গিতে নেচে নেচে স্কেটিং করে থাকে। যা দেখে আপনি দারুণ বিনোদন পাবেন। অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় আইস স্কেটিং, আইস ড্যান্সিং উল্লেখযোগ্য একটি খেলার নাম। ফুটবলের পর জার্মানিতে অনান্য খেলাধুলার সাথে আইস স্কেটিং খেলা হয় এখানে।

একবার শীতকালীন ছুটিতে প্যারিস ঘুরতে গিয়েছিলাম। সেখানে বরফের মাঠে দাঁড়িয়ে আইস স্কেটিং দেখছিলাম। এ মাঠটি  ছিলো খোলা আকাশের নিচে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি। ছোটবেলায় আইস স্কেটিং দেখবো তো দূরের কথা, এমন কিছুর নামই শুনিনি।

রড দিয়ে গোল আকৃতির কিছু একটা বানিয়ে সেটিকে আরেকটা রডের হ্যান্ডেলের সাহায্যে চালাতাম, এভাবেই খেলা করেছি। বাচ্চারা যেমন পুরনো টায়ার নিয়ে খেলা করে, অনেকটা সেরকম। দৌড়াতাম আর মুখ বন্ধ করে দাঁতের ফাঁক দিয়ে সুর করতাম, দুই ঠোঁটের কাঁপুনিতে মুখে এক ধরনের শব্দ তৈরি হতো। তখন ভাবতাম, দেশের কোনো মহাসড়কে বড় গাড়ি চালাচ্ছি।

ছেলেরা দল বেঁধে কাবাডি খেলেছি আমরা। ক্যারাম আর ডোমিনো খেলাও চলতো। ডোমিনোর প্রতিযোগিতাও করেছি। ভালো ডোমিনো খেলতে পারি। পা ভাঙার ভয়ে ফুটবল তেমন একটা খেলা হয়নি। ক্রিকেটে চার-ছক্কা কতো মেরেছি। বরফ মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে আইস স্কেটিং দেখতে দেখতে ছোটকালের খেলাধুলার এমন স্মৃতিচারণ করছিলাম। অনেক লোক এই বরফ মাঠে। দলে দলে ছোটো বড়, এমনকি বাচ্চারাও আইস স্কেটিং করছে এখানে। এসব ওদের জন্মগত খেলাধুলা ! ওরা কখনও কাবাডি খেলেছে বলে আমার মনে হয় না।

বরাবরের মতো সামনে এগিয়ে কাউন্টারে প্রবেশ মূল্য জিজ্ঞেস করলাম। ওরা বললো, বিনামূল্যে দেখতে পারেন। শুনে আমি বিস্মিত হই! তবে শর্ত হলো, যদি আমার নিজের আইস স্কেটিং জুতো থাকে, তাহলে। এমন জুতো আমি কই পাবো? আমি কী আর স্কেটিং জুতো নিয়ে প্যারিস ঘুরতে গেছি? ভাবছি- কী করি। তারপর ওরা বললো, যদি আমার সঙ্গে জুতো না থাকে, তাহলে আমি ওদের কাছ থেকে জুতো ভাড়া নিতে পারবো। তাতে পাঁচ ইউরো লাগবে।

হুম, তাহলে তো এ সুযোগটি হাতছাড়া করা যায় না। পাঁচ ইউরো খরচ করে পঁচিশ কেজি ওজনের এক জোড়া স্কেটিং জুতা ভাড়া নিলাম। জুতোর ওজন এতো হওয়ার কারণ, জুতোর নিচে বড় দুই টুকরো রড লাগানো। এতো ভারি জুতো পরে স্কেটিং তো দূরের কথা, সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবো কিনা- তাই ভাবছি।

যারা আগে আইস স্কেটিং করেনি, তাদের ব্যাপারটা হলো এমন- সাইকেল চালাতে পারে না, এমন কাউকে যদি সাইকেলের উপর বসিয়ে বলা হয়-চালাও। কী অবস্থা হবে তখন ভাবুন তো? প্রথম আইস স্কেটিং-এর ব্যাপারটিও এমন। যারা স্কেটিং করতে পারে না, তারা অমন জাহাজ মার্কা জুতো পরে ধপাস করে পড়া ছাড়া উপায় নেই।

আমি একটি পুতুল পান্ডায় ভর করে স্কেটিং করছি। ততক্ষণে মায়েদের সাথে ছোট বাচ্চারা আসছে, তারাও স্কেটিং করবে এখানে। এর মধ্যে এক বাচ্চা মেয়ে কেমন করে যেন আমায় দেখছে। হয়তো ভাবছে, এই বুড়ো লোক পুতুল ধরে অমন করছে কেন ? পুতুল, ঘোড়া- পেংগুইন, পান্ডা  সাধারণত এখানে বাচ্চাদের জন্যে রাখা হয়।

আমি আরও অনেকক্ষণ পান্ডায় ভর করে প্রশিক্ষণ নিলাম। তারপর চলে এলাম মূল মাঠে। পাশের বেড়ায় ধরে আরও কিছুক্ষণ অনুশীলন করলাম। তারপর শিখে গেলাম। সবার সাথে আমিও আইস স্কেটিং করছি। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছিলো না আমি করতে পারছি! তারপর মিশে গেলাম মূল স্রোতে সবার সাথে। কী মজা লাগছে। কী আনন্দ! বাতাসের বেগে ঘুরে ঘুরে বরফ মাঠে আইস স্কেটিং করছি আর বলছি- আই লাভ আইস স্কেটিং, আই লাভ প্যারিস!

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি

এই লেখকের আরও লেখা

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!