রাণী ভিক্টোরিয়ার প্রেম ও কর্মচারী করিমের কাহিনী

পপকর্ন খেতে খেতে অনেকদিন পর একটা ভালো মুভি দেখলাম ও ইতিহাস জানলাম। সেদিন সিএনএন নিউজ চ্যানেলে সিনেমা নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেখানো হয়। আমি তখনই প্রথম এ সিনেমাটির কথা জানতে পেরেছিলাম।

নাঈম হাবিব, জার্মানি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2017, 09:21 AM
Updated : 13 Oct 2017, 09:24 AM

একসময় স্কুল ফাঁকি দিয়ে কতো সিনেমা দেখেছি! কর্মব্যস্ত জীবনে এখন সিনেমা দেখার সময় হয় না। তবে দেখার মতো মানসম্মত সিনেমা হলে ছেড়েও দেই না। একসময় নতুন কোনো সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পর যদি দেখার সুযোগ না পেতাম, আর সেই সিনেমা যদি বন্ধু মহলের কেউ একজন দেখে আসতো তাহলে সিনেমায় কী ঘটেছিল তা নিয়ে এভাবেই গল্প জুড়ে দিতো।

এক ছিলো এক রাণী। নাম ছিল তার ভিক্টোরিয়া। ১৮১৯ সালের ২৪ মে লন্ডনের কেনসিংটন  প্রাসাদে তার জন্ম হয়। পুরো নাম আলেকজান্দ্রিনা ভিক্টোরিয়া। মা আদর করে ডাকতেন দ্রিনা বলে। তিনি ছিলেন ডিউক অব কেন্ট অ্যাডওয়ার্ডের একমাত্র সন্তান।

এ অ্যাডওয়ার্ড ছিলেন রাজা তৃতীয় জর্জের চতুর্থ পুত্র। ১৮২০ সালে ভিক্টোরিয়ার বয়স যখন একবছরও পূর্ণ হয়নি তখন বাবা অ্যাডওয়ার্ড মারা যান। এরপর শুধু মায়ের আদরেই বেড়ে উঠেন রাণী। ভিক্টোরিয়া কখনো স্কুলে যাননি। তার জন্য একজন জার্মান গৃহশিক্ষিকা রাখা হয়েছিল। ছোট থেকেই জার্মান ও ইংরেজি দু’ভাষাতেই পারদর্শী হয়ে ওঠেন তিনি।

ভিক্টোরিয়াকে কখনোই একা থাকতে হয়নি। কিন্তু তবুও তিনি ছিলেন একা। সমবয়সী কারো সঙ্গে মেশার সুযোগ তার কখনো হয়নি। প্রাসাদে কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে বেড়ে ওঠা রাণীর একান্ত সময় বলে কিছু ছিল না।

একবার রাণী ভিক্টোরিয়ার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারত থেকে রাণীর খেদমত ও  রান্না-বান্না করার জন্য দু’জন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো। আবদুল করিম ছিলেন তার মধ্যে একজন। কিছুদিনের মধ্যেই রাণীর প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন আবদুল করিম।

সেবক থেকে আবদুল করিম হয়ে উঠেন উর্দু ভাষা ও কুরআনের শিক্ষক। আর রাণী ভিক্টোরিয়া তার ছাত্রী। রাণী ভালোবেসে আবদুল করিমকে ডাকতেন ‘মুন্সী’ বলে।

রাণী যখন কোথাও বেড়াতে যেতেন, তখন তার পরিবার ও রাজপ্রতিনিধিদের আপত্তি সত্ত্বেও আবদুল করিমকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। রাণীর সঙ্গে তার এ অপ্রত্যাশিত সুসম্পর্ক নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন রাজপরিবারের অনেকে। এ নিয়ে তখন ছিল নানা গুঞ্জন।

ভিক্টোরিয়ার পরিবার ঘটনাটি লুকানোর চেষ্টা করেও কোন লাভ হয়নি। রাণীর মৃত্যুর পর আবদুল করিমের সঙ্গে তার প্রেমকাহিনির সমস্ত প্রমাণ মুছে ফেলতে স্থিরচিত্র, চিঠিপত্র জ্বালিয়ে দিয়েছিল তার ছেলে। কিন্তু সত্যকে চাপা দেওয়া তো খুব সহজ কাজ নয়। তাদের সম্পর্কের কথা পরবর্তীকালে  আরও প্রকাশ পায় আবদুল করিমের লেখা একটি ডায়েরি থেকে।

১৯০১ সালে রাণী ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর পর ভারত ফিরে যান আবদুল করিম। এরপর বাকি জীবন তিনি  কাটিয়েছেন ভারতের আগ্রায়। শোনা যায় আবদুল করিমের জন্য সেখানে কিছু জায়গা জমির  বন্দোবস্ত করে দিয়ে যান স্বয়ং রাণী ভিক্টোরিয়া। ১৯০৯ সালে ৪৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন আবদুল করিম।

রাণী ভিক্টোরিয়া ও কর্মচারী আবদুল করিমের জীবনের গল্প থেকেই নির্মিত হয় ‘ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আবদুল’ সিনেমাটি। এতে ভিক্টোরিয়ার চরিত্রে ‘জেমস বন্ড’ খ্যাত ব্রিটিশ অভিনেত্রী জুডি ডেঞ্চ ও আবদুল করিমের চরিত্রে অভিনয় করেন ভারতীয় অভিনেতা আলী ফজল।

বড় পর্দায় দেখছি সিনেমা। শুরু হলো রাজ্যসভা। নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন রাণী ভিক্টোরিয়া। ভারত থেকে আসলেন রাজকর্মচারী আবদুল করিম। রাণীসহ পুরো রাজ্যের চিত্রই তখন বদলে গেলো। রাজ্য এখন ভালোই চলছে। করিম আসায় হাসিখুশি রাণী ভিক্টোরিয়া।

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি

ইমেইল- md.naim@aol.com

এই লেখকের আরও লেখা

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!