অনেক বছর আগে কোথায় যেন একটা বাক্য পড়েছিলাম- ‘যে নিজের জন্যে বেশি চিন্তা করে, সে দেশের জন্যে কিছুই করতে পারে না।’
Published : 11 Feb 2018, 03:09 PM
আমাদের দেশের ভিআইপিদের ভিআইপি চিন্তা। ভিআইপি রাস্তা শুধু ভিআইপিদের জন্য হতে হবে কেনো? পাবলিকের জন্যেও তো হতে পারে, এ গল্পে তারই নমুনা। দেশে নৌকা, গাড়ি, রিকশা- একই রাস্তায় চলতে দেখেছি। দুর্যোগ কিংবা দুর্যোগ ছাড়া দেশে সবার রাস্তা এক হলেও জার্মান দেশে কিংবা ইউরোপে আছে যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা।
এখানে সাইকেল, গাড়ি, ট্রেন কিংবা মানুষেরও আছে আলাদা-আলাদা রাস্তা। সবাই আপন গতিতে নিজ নিজ রাস্তাতেই করেন চলাফেরা। কেউ কারও রাস্তায় চলতে এখানে মানা। এখানে যোগাযোগের এতই সুব্যবস্থা।
জার্মানির আঁকাবাঁকা পথ ধরে সাইকেল চালানোর মজাই আলাদা। মনের আনন্দে সাইকেল চালিয়ে আপনি চলে যেতে পারবেন গ্রাম থেকে গ্রামে, শহর থেকে শহরে, কিংবা ভিন্ন কোনো দেশে। সাইকেলে করে যাতায়াতের আছে সেই সুব্যবস্থা। হারিয়ে যাওয়ার নেই কোনো ভয়। সাইকেলের লাল রাস্তার মোড়ে-মোড়ে আছে দিক-নির্দেশনা। আর যদি আপনার থাকে ব্যাটারি চালিত সাইকেল, তাহলে তো আপনিই রাজা।
ছুটিতে একবার আমি স্পেন দেশে ঘুরতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি সাইকেলে করে যাতায়াতের আছে আরও উন্নত ব্যবস্থা। স্প্যানিশ ভাষায় সাইকেলকে বলা হয় ‘বিসিকলেতা’। আমি যে শহরে গিয়েছিলাম সেই শহরের নাম হলো মালাগা। শহর আর বাহন—এই দুই মিলে একসঙ্গে বলা হয় ‘মালাগা বিসিকলেতা’।
দশ ইউরো সদস্য ফি, পাঁচ ইউরো চাবি ফি। মোট ১৫ ইউরো দিয়ে আমি পেয়ে গেলাম এক বছরের জন্য মালাগা সাইকেলের চাবি। যদিও আমার দরকার এক মাসের। তবুও সস্তা। দৈনিক সাইকেল ভাড়া নিলে গুণতে হতো দশ ইউরো করে প্রতিদিন।
চাবির সঙ্গে তারা দিলেন মোবাইল অ্যাপ ফ্রি। অ্যাপের মাধ্যমে দেখা যাবে সাইকেল স্টেশন আর কতদূর বাকি। পার্কিং খালি আছে কিনা। প্রতিটি স্টেশনে মোট কতোগুলো সাইকেল রাখার ব্যবস্থা আছে। কতোগুলো সাইকেল এই মুহূর্তে পার্কিংয়ে আছে। চালানোর জন্য ওখানে সাইকেল পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে কিনা ইত্যাদি।
সাইকেল চালাতে ভালোবাসেন জার্মানরা। স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, শপিং কিংবা কর্মস্থলে অনেকেই যান সাইকেল চালিয়ে। কেউ বাড়ি থেকে সাইকেলে করে যান স্টেশনে। পরে বাস কিংবা ট্রেন করে যান গন্তব্যস্থলে।
গরমকালে নিজের বিলাসবহুল গাড়ি ছেড়ে অনেকেই সাইকেল চালিয়ে যান কর্মস্থলে। ছুটির দিনে আয়োজন করেই দল বেঁধে যান সাইকেল চালাতে। কিংবা পরিকল্পনা করেই যান সাইকেল প্রতিযোগিতায়। জার্মানরা মনে করেন, পরিবেশ কার্বন দূষণমুক্ত রাখতে সাইকেলে করে যাতায়াতের বিকল্প নেই।
সাইকেল চালিয়ে পঞ্চাশ কিলোমিটার যাওয়ার ব্যক্তিগত রেকর্ড আছে আমার। প্রিয়তমার সঙ্গে মিলতে ভারত থেকে সাইকেল চালিয়ে এক চিত্রশিল্পী এলেন ইউরোপে। যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে সাইকেল চালিয়ে একদল মানুষ হজে গেলেন সৌদি আরবে।
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি
এই লেখকের আরও লেখা
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |