বড় দেশের বড় বিমান, উন্নত যাত্রী সেবা তো বটেই। বড় বিমান, ওঠা-নামাও করে বড় বিমানবন্দর থেকে। নিজের ব্যাগপত্র নিয়ে চেপে বসলাম ট্রেনে। প্রথম যাত্রা স্টুটগার্ট এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। সময় লাগবে ঘণ্টা খানেক।
পুরো যাত্রাটাই ছিল অস্বস্তিকর। কারণ ট্রেনের মধ্যে কিছু জার্মান মেয়ে ছিলো। আর তাদের মধ্যেই একজনের জন্মদিন উদযাপন করছিলেন তারা। রীতিমতো হৈ-হুল্লোর করে, নেচে-গেয়ে-পিয়ে চলন্ত পাবলিক ট্রেনে জন্মদিন পার্টি আয়োজন। ট্রেন স্টুটগার্টে না পৌঁছালে জন্মদিন পার্টি হয়তো চলতো আরও কয়েক ঘণ্টা।
যাহোক, ফ্লাইট চেকিংয়ের কাজটা অনলাইনে সেরে নিয়েছিলাম। বোর্ডিং পাস ইমেইলের মাধ্যমে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছিলো লুফতানজা বিমান কর্তৃপক্ষ। আমি প্রিন্ট করে নিয়েছি। এখন আর
আগের দিন নাই যে লাইনে দাঁড়াতে হবে বিমানে যাত্রা করার জন্য। স্টুটগার্ট এয়ারপোর্টে ‘সেলফ ব্যাগ চেকিং’ মেশিন বসানো আছে। সে কাজটিও এখন কাউন্টারের সহযোগিতা ছাড়াই নিজে নিজেই সেরে ফেলা যায়।
পেটে তখন অল্প ক্ষুধা। কিন্তু বিশ মিনিটের এই যাত্রায় বিমান কর্তৃপক্ষ বাজালেন পেটের বারোটা। শুধু বিমানের সামনের আসনে বসা বিজনেস ক্লাসের যাত্রীদের দেওয়া হলো পানি আর চকলেট। আর এসব দেখে চকলেটপ্রিয় আমার ক্ষুধা আরও গেলো বেড়ে। খাওয়ার জন্যে সাথে নাই এক ফোটা পানিও। এ কেমন বিচার, এ কেমন সেবা!
যাই হোক, মাত্র বিশ মিনিটের ফ্লাইট, মরে তো আর যাব না। পেটকে বোঝালাম, আর তো কিছুক্ষণ মাত্র। ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে যখন বড় বিমানে করে যাত্রা করব, তখন তো বিমানে বড় করে রাতের খাবার দেওয়া হবে। এটা ছিল আমার জীবনে সব চাইতে কম সময়ের বিমান যাত্রা।
বাড়তি সমস্যাও ছিলো। কেবিন ক্রু’দের একজন ছিলেন অতি মোটা। যখনই আমার সিটের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তার শরীর আমার গায়ে লাগছিলো। একবার নয়, অনেকবার। বলাও তো যাবে না কিছু।
গভীর রাতে আকাশে উড়ছে বিমান। ক্লান্ত শরীরে কখন যেনো অজান্তেই ঘুমিয়ে গেলাম। দুপুরের রোদ বিমানের জানালা টপকে আমার ঘুম ভাঙ্গালো। তখন বিমান ভারতের আকাশ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারের আকাশে উড়ছিলো।
বিমান অবতরণের আর কয়েক ঘণ্টা বাকি মাত্র। তাড়াতাড়ি বাথরুমে গেলাম দাঁত ব্রাশ করে হালকা একটু ফ্রেশ হতে। বিমানে নাস্তা দেওয়া হলো, আমি শুধু কফি খেলাম।
বিমান অবতরণে একটা ঝাকুনি খেলাম। বিমান তখন তার আঠারোটি চাকার উপর ভর করে ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। ‘সুবর্ণভূমি’ নামটা আমার বেশ লাগে। সবাই পাইলটের উদ্দেশ্যে হাততালি দিলেন। এয়ারপোর্টে সুসজ্জিত কাপড়ে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাই মেয়েরা সব যাত্রীদেরকে অভ্যর্থনা জানালেন।
থাইল্যান্ডে বেড়াতে গিয়ে সেখানকার যাতায়াত আর নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে আমার খুবই ভালো লেগেছিলো। আকাশ পথ, স্থল পথ ও পানি পথেও যাতায়াত করা যায় থাইল্যান্ডে। আর রাজধানী ব্যাংককে যাতায়াতের জন্যে আছে লোকাল বাস, রেল, ট্যাক্সি, টুকটুক, স্কাই ট্রেন, মটরবাইক-ট্যাক্সি ও নৌকা। আট লেন, বারো লেন, ষোলো লেনের রাস্তাও আছে। রাস্তা পারাপারের জন্যে আছে যথেষ্ট ওভারব্রিজ ও স্কাই ওয়াক। ওভারব্রিজ ছাড়া রাস্তার মাঝখান দিয়ে দৌড়ালে গুণতে হয় জরিমানা।
বাস চলন্ত অব্স্থায় দরজা থাকে বন্ধ। বাসে আলাদা করে মহিলাদের জন্যে নেই কোনও আসন। সিট খালি না থাকলে মহিলাদেরকেও দাঁড়িয়েই যেতে হয়। তবে বয়স্ক যাত্রীদের জন্যে অনেকে সিট ছেড়ে দেন।
গাড়ি ভরা লোক উঠছেন-নামছেন, কিন্তু নেই কোনও ঠেলাঠেলি-ধাক্কাধাক্কি। স্টেশনে লোক দাঁড়ানো দেখলে গাড়ি থামানো হয়। আবার কেউ নামতে চাইলে সুইচ চাপলে চালক থামাবেন গাড়ি। সুইচ চাপলে গাড়ির দরজা খুলে ও বন্ধ হয়।
ভাড়াও নির্ধারণ করা। সাধারণ বাস ভাড়া থাইল্যান্ডের সাত টাকা, ফ্যান বাস নয় টাকা হোক যাত্রা এক কিলোমিটার কিংবা বিশ কিলোমিটার, ভাড়া একই। সস্তায় ব্যাংকক ঘুরে দেখার এক মাধ্যম। এসি বাসের ভাড়া নয় টাকা থেকে ঊনিশ টাকা পর্যন্ত। নির্ভর করে যাত্রার দূরত্বের ওপর।
রাস্তায় রাস্তায় কিংবা গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সিকিউরিটি ক্যামেরা লাগানো আছে। ‘পুলিশ হেল্প মি’ শিরোনাম লিখে শহরের বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছে মেশিন। আর মেশিনের আছে লাল বাটন। কোনো বিপদে এই লাল বাটন চাপলেই বেল বেজে উঠবে নিকটতম পুলিশ স্টেশনে।
কোথায় থেকে বেল বাজানো হয়েছে, তাও জেনে যাবেন কর্মরত পুলিশ। আর তখন পাঁচ-দশ মিনিটেই হাজির হয়ে যাবেন সাহায্যকারী পুলিশ। কে বাটন চাপ দিলেন, তা দেখার জন্যে বাটনের উপরে লাগানো আছে ক্যামেরা। অহেতুক বাটন চাপা যাবে না। কারণ, সেটি হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি
ইমেইল- md.naim@aol.com
এই লেখকের আরও লেখা
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |