থাইল্যান্ডের ভাসমান হাটে

ভাসমান হাট, জীবনে প্রথম যখন এ শব্দটা শুনেছিলাম, তখন ভেবেছিলাম পানির উপরে বাজার? এটা কী করে সম্ভব! লোকেরা কীভাবে কেনাকাটা করবে!

নাঈম হাবিব, জার্মানিতে থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2017, 04:15 AM
Updated : 29 August 2017, 04:15 AM

একটা কাজে একবার আমি থাইল্যান্ডে গিয়েছিলাম। সেখানে  অনেকদিন থাকতেও হয়েছিলো। থাইল্যান্ডে অনেক ঘুরেছি ওই সময়। একদিন পরিকল্পনা হলো ভাসমান হাটে ঘুরতে যাব।

ব্যাংককের কাউসান রোড থেকে একটি ট্যুর মাইক্রোবাসে করে আমরা আট-নয় জন রওনা দিলাম। ব্যাংকক শহর থেকে একশ’ কিলোমিটার দূরে  দামনয়েন সাদুয়াক  নামে  থাইল্যান্ডের একটি  ভাসমান বাজার আছে। সড়ক ও নদী পথ,  সব মিলিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে আমরা সেখানে পৌঁছলাম।

আমরা দুই  ঘণ্টা  সময় পেলাম ঘুরে দেখার জন্যে। তীর ধরে হেঁটেই ভাসমান হাট উপভোগ করছিলাম। নৌকায় করে ঘুরে দেখারও ব্যবস্থা আছে। ব্যাংকক শহরের  আশেপাশে কয়েকটা ভাসমান হাট থাকলেও এটাই সবচেয়ে বড়  ও  জনপ্রিয়  ভাসমান হাট।

দেখলাম, এখানে শুধু পানিতেই নয়, তীরেও আছে স্যুভেনিয়ার, পেইন্টিং, টি-শার্ট, ঘড়ি, গয়না, বাঁশি, কাঠের খেলনা ও নানা ধরনের পোশাকের দোকানপাটও। আর পানিতে নৌকায় বসে  বিক্রি করছেন সবজি, ফলমূলসহ বিভিন্ন ধরনের ভাজাভুজি খাবার।

বিশাল অজগর সাপ নিয়ে  কিনারায় দাঁড়িয়ে আছেন  সাপওয়ালা। যদি সাপওয়ালার  আপনাকে মনে ধরে,  তাহলে  আপনার গলায়  পরিয়েও দিতে পারেন  সাপের মালা। তুলতে  পারবেন  বিশাল অজগরের সাথে সেলফি আর ফটো। আর তার জন্য তো সেলামি কিছু দিতেই হবে।

কেউ হেঁটেই বিক্রি করছেন মাথা  ব্যথার বাম আর মলম। যদি কেনার আগ্রহ দেখান, তাহলে মলমের সাথে দুই-তিন মিনিট  ফ্রি ম্যাসাজও দেবেন মলমওয়ালা। থাই বামের গন্ধ ভালো। সব মিলিয়ে খুব উপভোগ করেছিলাম।

এই ভাসমান হাটটি  অনেক পুরনো। একটা সময়ে  এই হাটের প্রয়াজনীয়তা ছিল। এই ভাসমান হাটের  ওপরই কেনাকাটার জন্য বেশি নির্ভর করত থাইল্যান্ডবাসী। তখন  সবাই  ভাসমান হাট থেকেই কেনাকাটা  করতেন বলে  জানা যায়। কিন্তু এখন এটা শুধুই পর্যটক আকর্ষণ। প্রতিদিনই থাকে বিদেশি পর্যটকদের ভিড়।

জানা যায়, থাই পর্যটন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে পর্যটক টানতেই বাজারটিকে এখনও টিকিয়ে রাখা হয়েছে। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম- গোটা  ভাসমান বাজারটা  হচ্ছে  একটা বড়শি। পানিতে নৌকায় করে যারা বিক্রি করছেন,  তারা হচ্ছেন  বড়শির টোপ। আর মাছ হয়ে  প্রতিদিনই  ধরা দিচ্ছেন অসংখ্য বিদেশি পর্যটক। এটা থাইদের একটা কৌশল।

পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেক আজব জিনসের দেখা মিললেও ভাসমান বাজারের মতো এরকম রোমাঞ্চকর কিছু দেখা যায় না এইসব দেশে। তাই  এসকল  দেশের মানুষেরা এসব দেখেই বেশি মজা পান।

জীবিকার তাগিদে কাজ খুঁজতে থাইদের  বিভিন্ন দেশে খুব একটা যেতে হয় না। থাইল্যান্ডে এতো বিদেশি পর্যটক আসেন। দেশের আয়ের বড় একটা অংশ আসে পর্যটন খাত থেকে। নিম্ন আয়ের একজন  সাধারণ নাগরিক রাস্তার মধ্যে নারকেল, তরমুজ, আম, কলা ইত্যাদি ফলের রস  দিয়ে তৈরি এক ধরনের রুটি বিক্রি করা উপার্জন থেকে মোটামুটি ভালোই  জীবনধারণ করে নিতে পারেন।

থাইরা পারলে আমার কেন পারব না? দেশের গণমাধ্যমের খবরে আমাদের দেশের একটা ভাসমান পেয়ারা  বাজারের কথা শুনেছি। সেখানে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। কর্তৃপক্ষ একটু সুনজর দিলে শুধু দেশ কেন, সুদূর চাঁদের দেশ থেকেও লোক আসবেন ঝালকাঠির পেয়ারা খেতে!

দরকার শুধু একটু আয়োজনের। এই ধরুন, কেউ যদি  একবার  সব পেয়ারা বোঝাই নৌকাগুলোকে নানান রঙে রাঙিয়ে দেন, এরপর  সেটা  ধারাবাহিকভাবে সবাই শিখে যাবে। সবার মনে রঙ লেগে যাবে। নৌকায় বসে যারা বিক্রি করছেন, তাদের মাথায় যদি পরিয়ে দেওয়া হয়  রঙ-বেরঙের ছাতা। নৌকা ভর্তি পেয়ারা, হাতে রঙ-বেরঙের বৈঠা- একটু কল্পনা করে দেখুন তো।

বিদেশি পর্যটকদের কিছু অন্যরকম  আমেজ দিতে হবে। পর্যটকদের আকর্ষিত করতে একটু রঙ মাখাতে তো  হবেই। আর নাহলে একঘেয়ে লাগে, ছবি সুন্দর আসে না।  উনারা এখানে এসে পাইকারি দরে পেয়ারা কিনে যে নিজ দেশে নিয়ে যাবেন, এমন তো  নয়। বিদেশি পর্যটকরা আসবেন,  দেখবেন,  উপভোগ করবেন,  ছবি তুলবেন।

শুধু সেলফি আর ছবি তুলেই কাহিনী শেষ নয়। সেটাকে সবাই ফেসবুকে শেয়ার দেবেন। লোকেশন ট্যাগ করবেন, যেখানে লেখা থাকবে ‘ভাসমান হাট, ঝালকাঠি বাংলাদেশ।’ সেটা অন্যরা দেখবে। আর এভাবেই একদিন সারা দুনিয়া জুড়ে  পরিচিতি পেয়ে যাবে জায়গাটা।

এই ভাসমান হাট  হতে পারে দেশের জন্যে এক দারুণ সম্ভাবনা। যেটি  দেশকে নিয়ে যেতে পারে বিশ্বের দুয়ারে। গোটা  বিশ্বকে নিয়ে আসতে পারে  দেশের ভেতরে।

লেখক:  প্রবাসী বাংলাদেশি

ইমেইল- md.naim@aol.com

এই লেখকের আরও লেখা

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!