গল্পের শুরুতে বলতে চাই প্যারিস ভ্রমণের কিছু নিয়মাবলী। প্যারিস যাবেন ভালো কথা। কিন্তু ওখানে গিয়ে লাগাবেন না ভালোবাসার তালা। আর তালা না লাগালেই প্যারিস কর্তৃপক্ষ হবেন একটু বেশিই খুশি। শহর কর্তৃপক্ষের স্লোগান হচ্ছে- ‘তোমাদের ভালোবাসাকে মুক্ত করে দাও, আমাদের ব্রিজগুলোকে বাঁচাও।’
চলুন এবার প্যারিস যাই। জার্মানি থেকে চেক প্রজাতন্ত্র বেড়ানো শেষে টিকেট কিনলাম উইজ এয়ার বিমানের। কম দামি টিকেট, তাই বিমানের পক্ষ থেকে নেই কোনো চা-নাস্তার ব্যবস্থা। নিজের কলা খেতে খেতেই পৌঁছে গেলাম প্যারিসে। মেঘেঢাকা প্যারিসের আকাশ ও নিরাপত্তার চাদরে মোড়া প্যারিসের চারপাশ। একি, আমার প্যারিস আগমনে এত আয়োজন! না না। প্যারিসের দৈনিক চিত্রই এখন এমন!
প্যারিস গাইডবুক অনুযায়ী পাতাল ট্রেন আর মেট্রো ট্রেন চড়ে অর্ধেক পথ আর হেঁটে বাকি পথ গেলে নাকি যাওয়া যাবে আইফেল টাওয়ার। কিন্তু প্যারিসের ট্রেন লাইনের মানচিত্র বুঝতে বুঝতে হয়তো পুরো পথ হেঁটেই যাওয়া যাবে আইফেল টাওয়ারে। প্যারিসে নতুন এসে পাতাল ট্রেন আর মেট্রো ট্রেনের মানচিত্র দেখে যে কেউরই ঘুরবে মাথা। ভুল করে ভুল ট্রেনে চড়ে বসে নেমে গেলাম ভুল স্টেশনে।
আংটিসহ হাঁটা শুরু করলাম। কিছুদূর যেতেই পেছন থেকে ‘হ্যালো’ বলে আবার ডাক। সেই একই মহিলা বললেন, ‘স্বর্ণের আংটি নিয়ে যাবেন কিছু দিয়ে যাবেন না?’ কী বলবো বুঝতে পারছিলাম না। শুধুই তাকাচ্ছিলাম। একটু একটু ভয়ও পাচ্ছিলাম। বললেন, ‘কিছু ইউরো আমাকে দাও, আর আংটিটা নিয়ে যাও।’ আমি আংটি মাটির মধ্যে রেখে দিলাম এক দৌড়। আলজেরিয়ান, রুমান, জিপসি আর আফ্রিকানদের রাখিবন্ধন পড়ানোর গল্প ও প্যারিসের মলমপার্টি সম্পর্কে আগে থেকেই আমার কিছুটা ধারণা ছিল।
টাওয়ারের একদম নিচ থেকে ভিন্ন আঙ্গিকে চমৎকার কিছু ছবি তুলে দিলেন ভ্রমণবন্ধু্ জার্মানির ফ্রানজিসকা। প্যারিসের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন জায়গাগুলো এবং যে মিজিয়ামে মোনালিসার আসল ছবি রাখা আছে সেই মিজিয়ামেও ঘুরলাম ও ছবি উঠালাম মিউজিয়ামের সামনে গ্লাসের তৈরি পিরামিডের সাথে।
প্রতিদিনই লাগানো হচ্ছে তালা। দেশি-বিদেশি ছোট-বড় তালা। প্রিয়জনকে আজীবন ধরে রাখার তালা। স্বর্গ থেকে আসে প্রেম স্বর্গে যায় চলে। তালা মেরে আজ পর্যন্ত ধরে রাখতেইবা পেরেছেন কয়জন? এতো শুধু পাগলদেরই খেলা। তালায় অতিষ্ঠ শহর কর্তৃপক্ষ। এতো তালার ভার বইতে না পেরে ব্রিজের কিছু অংশ ভেঙ্গে নদীতে পড়ে গেলে প্যারিস কর্তৃপক্ষ ব্রিজগুলোর দু’পাশের চারদিকে হার্ডবোর্ড লাগিয়ে দেন, যাতে আর কেউ তালা না লাগাতে পারে।
লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি
ইমেইল- md.naim@aol.com
ছবি কৃতজ্ঞতা: লেখক ও তার বন্ধু ফ্রানজিসকা
এই লেখকের আরও লেখা