জার্মান দেশের মেলায় বাংলাদেশের পতাকা!

একদিন সাগর সন্ধানে দক্ষিণ জার্মানি থেকে চেপে বসলাম একদম উত্তর জার্মানগামী ট্রেনে। ১৬ ঘণ্টা যাত্রা শেষে পৌঁছলাম গন্তব্যস্থান ‘কিল’ শহরে।

নাঈম হাবিব, জার্মানি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2017, 05:41 AM
Updated : 9 August 2017, 05:41 AM

জার্মানির উত্তরের শ্লেসভিগ-হোলস্টাইন রাজ্যের রাজধানী শহর কিল। আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয় ‘সেলিং সিটি’। মানে ‘পাল তোলা শহর’। কেউ কেউ ‘স্টুডেন্ট সিটি’ও বলে থাকেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে উচ্চ শিক্ষা নিতে অনেকেই আসেন এই কিল শহরে।

ছবিতে দেখতে দুই বছর আগে ঘুরতে যাওয়া স্পেনের মালাগা শহরের সাথে মিল থাকায় মূলত কিলে এই ঘুরতে যাওয়া। পরিকল্পনা ছিল, ওখানে যদি চাকরি পাই, তাহলে কিলেই থেকে যাব।

কিলে যাওয়ার দুই সপ্তাহ পরে শুরু হয় ‘কিলার ভখা’, মানে কিল সপ্তাহ নামে ‘কিল উৎসব বা কিলের মেলা’। কিলে যাওয়ার আগে এই এই মেলা সম্পর্কে ধারণা ছিল না বা জানতামও না।

মেলার প্রথম দিন। মেলায় ঘুরছি। তখন দূর থেকেই দেখতে পেলাম লাল-সবুজের পতাকা। সে ছিল আমার জন্য এক অবাক করা ঘটনা!  বিদেশের মাটিতে দেশের কিছু একটা দেখলে আলাদা রকম আকর্ষণ ও অনুভূতি  জাগে। ঘুরতে ঘুরতে অজান্তেই তখন আমি পৌঁছে গিয়েছিলাম মেলার আন্তর্জাতিক মার্কেটে।

লাল-সবুজের আরও কাছে গেলাম। দেখছি আর মনে একটা শান্তি পাচ্ছি। তারপর একদম সামনে এগিয়েই লাল-সবুজের এই দোকানে কর্মরত একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, “ভাইয়া, কেমন আছেন? আপনারা কি মেলায় বাংলাদেশ থেকে এসেছেন?”

উত্তরে দোকানে বিক্রির জন্যে রাখা এক টুকরা তরমুজ হাতে ধরিয়ে দিয়ে উনি বললেন, “জ্বি ভাই, ভালো আছি। না আমরা এখানে কিলেই থাকি।”

আমি যখন কিল থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম, তখন এমন দেশের মানুষের সাথে দেখা হয়ে যাওয়া একটা বিস্ময়ই বটে! অচেনা-অজানা নতুন শহরে নিজের দেশের মানুষের দেখা পাওয়ার পর এক  মুহূর্তের জন্যে হলেও মনে হয়েছে, আমি যেন দেশেই আছি, লাল-সবুজের দেশে।

কিলার ভখা, মানে কিল সপ্তাহ নামে সেই ১৮৮২ সাল থেকে প্রতি বছর বসে এই মেলা। জানা যায়, মেলার আন্তর্জাতিক মার্কেটে আগেও বসত বাংলাদেশি খাবারের এই দোকান। তারপর কয়েক বছর বিরতি দিয়ে ২o১৬ সাল থেকে আবার দেখা যাচ্ছে লাল-সবুজের এই দোকানকে।

প্রথম বছর দুটো দোকানের একটিতে বিক্রি করা হছিলো দেশের পাটের তৈরি ব্যাগ। মেলার শর্ত হলো, যদি কেউ মেলাতে কোনও দেশের পতাকাবাহী দোকান বসাতে চান, তাহলে জার্মানিতে অবস্থিত সেই দেশের দূতাবাসের লিখিত অনুমতি লাগবে। আর মেলার মঞ্চে সেই দেশের একটা অনুষ্ঠান থাকতে হবে।

শর্ত অনুযায়ী, প্রথম বছর জার্মানির রাজধানী বার্লিন থেকে আসা একদল প্রবাসী শিল্পীগোষ্ঠী তাদের অভিনয় আর সুরে সুরে লাল-সবুজের দেশ বাংলাদেশকে তুলে ধরেছিলেন বিশ্বের কাছে।

‘কিলার নাখরিখটেন’ নামে স্থানীয় পত্রিকার পক্ষ থেকে প্রতি বছর মেলার আন্তর্জাতিক মার্কেটের খাবারের স্বাদ, মান, দাম ও পরিবেশন যাচাই করা যায়। প্রথম বছর ইন্দোনেশিয়া, নিউজিল্যান্ড ও থাইল্যান্ডের সাথে স্থানীয় এই পত্রিকার পাতায় জায়গা করে নিয়েছিলো বাংলাদেশ। পত্রিকার পাতায় গামছা মাথায় দেখা গিয়েছিলো মেলায় বাংলাদেশি দোকানের উদ্যোক্তা স্থানীয় বাংলাদেশি জনাব বুলবুল সাহেবকে।

প্রতি বছর গরমের শুরুতে বসে এই মেলা। মেলার প্রধান আকর্ষণ হলো- নৌকা বাইচ। জানা যায়, এটি হচ্ছে বিশ্বের সবচাইতে বড় নৌকা বাইচ। তারপরে হলো আন্তর্জাতিক মার্কেট ও আন্তর্জাতিক কনসার্ট।

মোটামুটি জার্মানিতে আরও যত উৎসব বা মেলা হয়, এটি তার মধ্যে একটি। জার্মানি এবং আশপাশের দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১০-১২ লক্ষ পর্যটক প্রতি বছর আসেন এই মেলায়।

লেখক:  প্রবাসী বাংলাদেশি

এই লেখকের আরও লেখা

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!